Advertisement
১১ মে ২০২৪

উত্তরবঙ্গে এল বর্ষা, দক্ষিণে আসতে ৪ দিন

দীর্ঘ দহনজ্বালায় পুড়তে হয়েছে ঠিকই। তবে কয়েক দিন আকাশের সদয় মতিগতি দেখে আশায় আশায় ছিলেন বঙ্গবাসী। মঙ্গলবার আলিপুর হাওয়া অফিস জানিয়ে দিল, বর্ষা এসে গিয়েছে রাজ্যে। এসেছে উত্তরে। দক্ষিণবঙ্গে আসতে আরও চার দিন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০১৬ ১০:১৩
Share: Save:

দীর্ঘ দহনজ্বালায় পুড়তে হয়েছে ঠিকই। তবে কয়েক দিন আকাশের সদয় মতিগতি দেখে আশায় আশায় ছিলেন বঙ্গবাসী। মঙ্গলবার আলিপুর হাওয়া অফিস জানিয়ে দিল, বর্ষা এসে গিয়েছে রাজ্যে। এসেছে উত্তরে। দক্ষিণবঙ্গে আসতে আরও চার দিন।

এমনিতে দেরি হয়েছে অনেকটাই। মৌসুমি বায়ু আসে মূলত দু’টি পথে। কেরল-পথ আর আন্দামান-পথ। সাধারণ নির্ঘণ্ট মানলে কেরলে বর্ষা আসার কথা ১ জুন। কিন্তু এ বার সে ওই রাজ্যে ঢুকেছে ৮ জুন। অর্থাৎ দিন সাতেক দেরিতে। বঙ্গোপসাগরের এক ঘূর্ণিঝড় তার পথে কাঁটা বিছিয়ে দিয়েছিল। ফলে বাংলায় মৌসুমি বায়ু আসতে আরও দেরি হবে বলে জানিয়েছিলেন আবহবিদেরা। ১ জুন কেরলে ঢুকলে বঙ্গে বর্ষা পৌঁছয় তার দিন সাতেক পরে। এ বার কেরলে পৌঁছতে দেরি হওয়ায় বাংলাতেও বর্ষা পৌঁছল কিছু বিলম্বেই। তবে কেরল থেকে পশ্চিমবঙ্গে পৌঁছতে সময়-ব্যবধান প্রায় একই আছে।

বর্ষা সমাগমে একটু দেরি হলেও তার ভাবগতিক দেখে আশা দিচ্ছেন আবহবিজ্ঞানীরা। বলছেন, ‘‘দের সে আয়ে, দুরস্ত আয়ে।’’ তাঁরা বোঝাতে চাইছেন, বর্ষার মেজাজ এ বার অন্য বারের থেকে জাঁকালো হবে।

দক্ষিণবঙ্গেও এখন আকাশ মেঘলা। গরমের দাপট কমেছে। ঝিরঝিরে হাওয়ায় ঠান্ডার প্রলেপ। সব মিলিয়ে বৃষ্টির আদর্শ আবহ। সোমবার সকালেই বজ্রবিদ্যুতে আকাশ কাঁপিয়ে জমাটি বৃষ্টি পেয়েছে দক্ষিণবঙ্গ। কমবেশি বৃষ্টি হয়েছে মঙ্গলবার সকালেও। আবহাওয়া দফতর সূত্রের খবর, সেটা হয়েছে বিহারে তৈরি নিম্নচাপের সৌজন্যে। বিহার থেকে বাংলাদেশ উপকূল পর্যন্ত নিম্নচাপ অক্ষরেখা এখনও সক্রিয়। দক্ষিণবঙ্গের আকাশ ছেয়ে বজ্রগর্ভ মেঘ। পটভূমি তৈরি। বর্ষার প্রসন্নতার ইঙ্গিত স্পষ্ট। বৃষ্টি-ভাগ্য খুলতে পারে বাংলার।

সাধারণ ভাবে উত্তরবঙ্গে বর্ষা আসে মায়ানমার হয়ে আন্দামান-পথে। কিন্তু কেরল-পথে দেরি করে ফেলা মৌসুমি বায়ুই এ বার সেখানে বর্ষার অগ্রদূত। আবহাওয়া দফতরের খবর, বর্ষা এ দিনই পা রেখেছে দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ারে।

দিন চারেকের মধ্যে দক্ষিণবঙ্গ-সহ গোটা রাজ্যে তার ছড়িয়ে পড়ার কথা। তখনও নিম্নচাপ অক্ষরেখার প্রভাব থাকবে। তার দোসর হবে বঙ্গোপসাগরের মৌসুমি বায়ু। সব কিছু ঠিক থাকলে ঝেঁপে বৃষ্টি নামার কথা। তবে আবহবিদেরা বলছেন, বাতাসে জলীয় বাষ্প থাকায় আর্দ্রতার ভাব থাকবে। বর্ষার ছোঁয়াচ লাগলেও ভ্যাপসা গরমের অস্বস্তি একেবারে ছেড়ে যাবে— এখনই এতটা আশা করা যাচ্ছে না।

তবে আপাতত পশ্চিমবঙ্গ-সহ গোটা দেশের আবহাওয়া-পরিস্থিতি যে বৃষ্টির জন্য হাপিত্যেশ করা জনতার পক্ষে অনুকূল, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন আবহবিজ্ঞানীরা। এ বার বর্ষা যে মূল ভারতীয় ভূখণ্ডে ঢুকতে নির্দিষ্ট সময়ের উড়ান ‘মিস’ করেছিল, তার কারণ বঙ্গোপসাগরের পরিস্থিতি। মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বাংলাদেশ উপকূলে আছড়ে পড়া ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু বঙ্গোপসাগরে আবহাওয়ার ভারসাম্য টলিয়ে দেয়। কেরলে জুনের শুরুতে বর্ষার আবির্ভাবের জন্য বঙ্গোপসাগর ও আরবসাগরে আবহাওয়ার ভারসাম্য দরকার হয়। বঙ্গোপসাগরের ঘূর্ণিঝড় সেটা বিপর্যস্ত করে দিয়েছিল। ফলে কেরলে ঢুকতেই বর্ষার দেরি হয়ে যায় সাত দিন।

আবহবিজ্ঞানীদের আশ্বাস, এই দেরি পুষিয়ে যাবে। ভাল বর্ষণ হবে গোটা দেশে। গত বছরও বৃষ্টির আকালে মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, পঞ্জাবে খরা-পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গকে তুলনায় কম ভুগতে হলেও পর্যাপ্ত বৃষ্টি এখানেও হয়নি। এ বার কোনও অভাব রাখবে না বর্ষা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rain Monsoon
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE