মেলাবেন যিনি, তিনি আর সবই মিলিয়ে দেন। কিন্তু সময় মেনে ট্রেন চলাচল আর শিয়ালদহ বিভাগকে মেলাতে বললে তিনিও বোধ হয় নাচার! শিয়ালদহে শেষ কবে রেলের সময়সারণি মেনে টানা সাত দিন লোকাল ট্রেন চলেছে? প্রশ্নটা নিত্যযাত্রীদের কাছেও বিষম ধাঁধা। প্রশ্ন করলেই মাথা চুলকোচ্ছেন তাঁদের অনেকে। তার পরে বলছেন, ‘‘মনে করতে পারছি না।’’
এই অবস্থা কেন, প্রশ্ন করলেই রেলকর্তাদের কাছ থেকে জবাব আসছে অনুযোগের আকারে। চালক নেই। গার্ড নেই। ইত্যাদি।
ভুক্তভোগীরা জানেন, চালক ও গার্ডের অভাবের সঙ্গে সঙ্গেই আছে ট্রেনের যান্ত্রিক ত্রুটি। আবার গাছের পাতা নড়লেই, মানে পড়লেই ছিঁড়ে যাচ্ছে ওভারহেড তার! সামান্য বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই। সিগন্যাল নিজে নিজেই সবুজ থেকে লাল হয়ে যাচ্ছে। ট্রেন আর নড়ছে না। মাঝপথে সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকছে ট্রেন। বিভিন্ন স্টেশনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন যাত্রীরা। কিন্তু হেলদোল নেই শিয়ালদহ ডিভিশনের কর্তাদের। পরপর শুধু ট্রেন বাতিলের ঘোষণা করে চলেছেন তাঁরা!
সোমবার সন্ধ্যা থেকে বেশি রাত পর্যন্ত এই একই চিত্র দেখলেন নিত্যযাত্রীরা। ট্রেন চলাচলের চরম অব্যবস্থায় শুধু শিয়ালদহ স্টেশনেই আটকে পড়েন কয়েক হাজার ঘরমুখী মানুষ। ঠিক কী হয়েছিল সোমবার?
সন্ধ্যায় বৃষ্টি নেমেছিল। খুব বেশি নয়। আবহাওয়া দফতর সূত্রের খবর, কলকাতায় সোমবার বৃষ্টি হয়েছে প্রায় ৫০ মিলিমিটার। সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়া ছিল না। কিন্তু এটুকুতেই শিয়ালদহ ডিভিশন কার্যত বেসামাল হয়ে পড়ে। প্রতিটি শাখায় ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয় দু’ঘণ্টারও বেশি। শিয়ালদহে আটকে পড়েন হাজার হাজার যাত্রী। তাঁদের প্রশ্ন, প্রাক্-বর্ষাতেই যদি এমন অবস্থা হয়, ঘোর বর্ষায় কী হবে? রেলকর্তাদের বক্তব্য, সব বিপত্তির মূলে যান্ত্রিক ত্রুটি। রেল সূত্রের খবর, সোমবার প্রথমে ওভারহেড তারে লোকাল ট্রেনের প্যান্টোগ্রাফ জড়িয়ে গিয়ে গোলমাল পাকায়। পরে বৃষ্টির জমা জলে ‘রুট রিলে ইন্টারলক সিস্টেম’-এর প্যানেলে গোলমাল দেখা দেয়। বিপত্তি শুরু হয় সিগন্যালে।
রেলকর্তাদের একাংশের বক্তব্য, এই সব গোলমাল এড়াতে বর্ষা শুরুর আগে এক দফা মেরামতি ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করার কথা। সোমবারের ঘটনা দেখে মনে হচ্ছে, সেই কাজ হয়নি। যদি হয়েও থাকে, সোমবারের ঘটনা দেখিয়ে দিয়েছে, সেই কাজের মান অত্যন্ত খারাপ।
পরিষেবার এই হাল দেখে রেলের গাফিলতিকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছেন শিয়ালদহ বিভাগের এক শ্রেণির কর্মী। তাঁদের অভিযোগ, ট্রেন চলাচলের সঙ্গে যুক্ত দফতরগুলির মধ্যে কোনও সমন্বয়ই নেই। কর্তা থেকে কর্মী, সকলেরই মনোভাব, হচ্ছে হবে, চলছে চলবে। তারই প্রভাব পড়ছে ট্রেন চলাচলে। বাতিল হচ্ছে ট্রেন। টিকিট কেটেও প্রায় রোজই ভুগছেন যাত্রীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy