Advertisement
E-Paper

চুরি রোখার বাহিনী গড়েই নেতা সোহরাব

মুখে হাসির ভাব থাকলেও এজলাসের গারদে দাঁড়িয়ে ঘামছিলেন তিনি। পরিচিত কাউকে ফোন করার জন্য নিরাপত্তারক্ষীর কাছ থেকে মোবাইলও চাইছিলেন। বিকেলে অবশ্য আদালত থেকে বেরিয়ে চওড়া হাসি তাঁর মুখে। রেলের যন্ত্রাংশ চুরির দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়ে দু’বছর কারাদণ্ডের নির্দেশের পরে শর্তসাপেক্ষে জামিন পেলেন রানিগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক সোহরাব আলি।

সুশান্ত বণিক ও নীলোৎপল রায়চৌধুরী

শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০০:২৪

মুখে হাসির ভাব থাকলেও এজলাসের গারদে দাঁড়িয়ে ঘামছিলেন তিনি। পরিচিত কাউকে ফোন করার জন্য নিরাপত্তারক্ষীর কাছ থেকে মোবাইলও চাইছিলেন।

বিকেলে অবশ্য আদালত থেকে বেরিয়ে চওড়া হাসি তাঁর মুখে। রেলের যন্ত্রাংশ চুরির দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়ে দু’বছর কারাদণ্ডের নির্দেশের পরে শর্তসাপেক্ষে জামিন পেলেন রানিগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক সোহরাব আলি। ১৯৯৫ সালের ওই মামলায় তাঁর সঙ্গে অন্য তিন অভিযুক্ত পাপ্পু সিংহ, নওয়লকিশোর সিংহ এবং হারু দে-ও দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরে একই ভাবে জামিন পেয়েছেন।

এ দিন সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ আসানসোল আদালতে হাজির করানো হয় সোহরাব-সহ চার অভিযুক্তকে। দু’পক্ষের আইনজীবীর বক্তব্য শোনার পরে বিচারক অনিন্দ্য সেন চার জনকেই দোষী সাব্যস্ত করে জানান, দুপুর ২টোর পরে সাজা ঘোষণা হবে। বিচারক দুপুর ২টোর পরেই এজলাসে চলে এলেও দোষীদের তখনও আনা হয়নি দেখে খানিক বিরক্ত হন। কিছু ক্ষণ পরে সোহরাব-সহ চার জনকে আনা হলে বিচারক তাঁদের প্রত্যেকের কাছে জানতে চান, এ জন্য তাঁদের কতটা সাজা হওয়া উচিত। সোহরাব বলেন, ‘‘আমি নির্দোষ। মাফ করে দিন।’’

বিচারক জানান, বিকেল সাড়ে ৩টে নাগাদ সাজা ঘোষণা হবে। ততক্ষণ দোষীরা এজলাসের গারদেই থাকবেন। সেই মতো সেখানেই টানা দাঁড়িয়ে থাকেন সোহরাবেরা। তাঁর সঙ্গে দেখা করে যান অনেক অনুগামী।

বিকেলে সাজা ঘোষণা হয়। তার পরে আদালতের কাছে সোহরাবদের জামিনের জন্য আবেদন করেন তাঁদের আইনজীবী জগদীন্দ্র গঙ্গোপাধ্যায়। জামিন পাওয়ার পরে সোহরাবকে নিয়ে আদালত চত্বরেই স্লোগান দিতে থাকেন জড়ো হওয়া তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা। পরে সোহরাব দাবি করেন, ‘‘১৯৯৪ সালে আসানসোলের ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী হয়েই সিপিআই প্রার্থী তাহের হোসেনকে হারিয়ে কাউন্সিলর হয়েছিলাম। সেই রাগেই বামফ্রন্ট আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করে। ১৯৯৫ সালে মামলা হয়। তবে আমি মূল অভিযুক্ত ছিলাম না।’’

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সোহরাবের বাবা শের আলি এক সময়ে বার্নপুরের ধরমপুর থেকে রহমতনগরে এসে থাকতে শুরু করেন। সেখানে লোহা সংক্রান্ত ব্যবসা শুরু করেন। একটি কারখানাও তৈরি করেন। ধরমপুর থেকে রহমতনগরে এসে বহু মানুষজন সেখানে কাজকর্ম করতে শুরু করেন। প্রতিপত্তি বাড়ে শের আলির। ১৯৯৪ সালে প্রথম ভোটে দাঁড়ান সোহরাব। তার আগে এলাকায় চুরি-ছিনতাই ও ইভটিজিং রুখতে তিনি এলাকার যুবকদের নিয়ে আরজি পার্টি করে টহলের ব্যবস্থা করেন। এলাকায় নেতার ভাবমূর্তিও তৈরি হয় তাঁর।

১৯৯৮ সালে লোকসভা ভোটে আসানসোলে আরজেডি-র প্রার্থী হয়ে পরাজিত হন সোহরাব। ১৯৯৯ সালে আরজেডি-র হয়ে দাঁড়িয়েই আবার কাউন্সিলর হন। ২০০১ সালে হিরাপুর কেন্দ্রে বামফ্রন্ট মনোনীত আরজেডি প্রার্থী ছিলেন তিনি। তাঁকে প্রার্থী হিসেবে সমর্থন করায় কিছু লোকজন দল ছেড়ে যান বলে সিপিএম সূত্রে জানা যায়। লালুপ্রসাদ যাদব সোহরাবের হয়ে প্রচার করে যান। তবে সে বার হেরে যান তিনি। ২০০৪ সালে ফের নির্দল হিসেবে লড়ে কাউন্সিলর হন সোহরাব। ২০০৯ সালে আরএসপি-র হয়ে পুরভোটে দাঁড়ান। কিন্তু উপযুক্ত সম্মান পাচ্ছেন না দাবি করে ২০১১ সালে দল ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়ে বিধানসভা ভোটে রানিগঞ্জ থেকে প্রার্থী হন।

এ দিন সোহরাব চুরিতে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় আসানসোলের প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরী বলেন, ‘‘মানুষ ওঁকে ভোট দিয়েছিলেন। এর পরে তাঁরাই বিচার করবেন।’’ সোহরাব চুরিতে অভিযুক্ত জানিয়ে গত বিধানসভা ভোটের আগে এলাকায় পোস্টার পড়েছিল। সেই ভোটে সিপিএমের প্রার্থী ছিলেন রুনু দত্ত। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘ওই পোস্টার আমরা সাঁটাইনি। তৃণমূলের দ্বন্দ্বেই পোস্টার পড়েছিল। আমরা শুধু এলাকাবাসীকে বলেছিলাম, যাঁকে ভোট দেবেন, তাঁর সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে ভোট দেবেন।’’ তাঁর দাবি, ‘‘সোহরাবের এখনই পদত্যাগ করা উচিত।’’

তৃণমূলের আসানসোল জেলা সভাপতি ভি শিবদাসন বলেন, ‘‘ওই মামলা যখন হয়েছিল তখন সোহরাব তৃণমূলে ছিলেন না। এর কোনও প্রভাব দলের উপরে পড়বে না। কারণ, আমাদের দল চলে নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাবমূর্তি নিয়ে।’’ আর সোহরাব বলছেন, ‘‘উচ্চ আদালতে যাব। আশা করি, সুবিচার পাব।’’

sushanta banik nilotpal roychoudhuri sohrab ali sohrab ali verdict sohrab ali jail sohrab ali imprisonment sohrab ali 2 years jail sohrab ali anti theft team raniganj tmc mla
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy