Advertisement
E-Paper

রহস্যের চাবি চাই, ধর্ষিতাকে কবর থেকে তোলার আর্জি

পুলিশের কাছে নিজের জামাইবাবুর বিরুদ্ধেই অপহরণ, জোর করে আটকে রাখা, বিক্রি এবং ধর্ষণের অভিযোগ জানিয়েছিল কিশোরী জুলেখা (পরিবর্তিত নাম)। থানা-পুলিশ, সিআইডি তার তদন্ত করল। কিন্তু উত্তর ২৪ পরগনার দত্তপুকুরে নিজের বাড়িতে ফেরার পরে মেয়েটির রহস্যজনক মৃত্যুর তদন্ত হল না। হল না ময়না-তদন্তও। সোজা পাঠিয়ে দেওয়া হল কবরে!

শিবাজী দে সরকার ও দীক্ষা ভুঁইয়া

শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৬ ০৩:৪৪

পুলিশের কাছে নিজের জামাইবাবুর বিরুদ্ধেই অপহরণ, জোর করে আটকে রাখা, বিক্রি এবং ধর্ষণের অভিযোগ জানিয়েছিল কিশোরী জুলেখা (পরিবর্তিত নাম)। থানা-পুলিশ, সিআইডি তার তদন্ত করল। কিন্তু উত্তর ২৪ পরগনার দত্তপুকুরে নিজের বাড়িতে ফেরার পরে মেয়েটির রহস্যজনক মৃত্যুর তদন্ত হল না। হল না ময়না-তদন্তও। সোজা পাঠিয়ে দেওয়া হল কবরে!

কেন?

এই প্রশ্ন তুলেই ওই কিশোরীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটনে নতুন তদন্ত শুরু করার নির্দেশ চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে সিআইডি। আদালতের অনুমতি পেলে কবর থেকে জুলেখার দেহ তুলে ময়না-তদন্ত করাতে চাইছে তারা।

সিআইডি সূত্রে বলা হয়, ওই ধর্ষিতা কিশোরীর মৃত্যু হয় অ্যাসিড খাওয়ার দরুন। কিন্তু সেই অ্যাসিড সে নিজে খেয়েছিল, নাকি তাকে খাওয়ানো হয়েছিল— সেটা রহস্যই থেকে গিয়েছে। খুনের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছে না সিআইডি। তাদের বক্তব্য, মৃতদেহের ময়না-তদন্তও হয়নি। ডেথ সার্টিফিকেট ছাড়াই দেহটি কবর দেওয়া হয়েছিল। দত্তপুকুর থানা ওই ঘটনার তদন্তের নির্দেশ না-দেওয়ায় কে বা কারা কিশোরীকে ধর্ষণ করল, কারা মৃতদেহটি ময়না-তদন্ত ছাড়াই কবর দিল, তা জানা সম্ভব হয়নি।

এই পরিস্থিতিতে ওই কিশোরীর মৃত্যুরহস্য তদন্ত করে দেখা প্রয়োজন বলে বারাসত আদালতে আর্জি পেশ করেছে সিআইডি। এক গোয়েন্দা অফিসার জানান, মাসখানেক আগে মৃত ওই কিশোরীর দেহটি কবর থেকে তুলে তার ময়না-তদন্ত করলেই অনেক বিষয় পরিষ্কার হয়ে যাবে বলে মনে করছেন তাঁরা। এবং ময়না-তদন্তের সেই ফলাফলই তদন্তের অভিমুখ ঠিক করে দিতে পারে।

কিন্তু এই মামলায় সিআইডি আদৌ এল কোথা থেকে?

আদালতের নির্দেশেই সিআইডি ওই অপহরণ-ধর্ষণের তদন্তে নামে। সিআইডি-র খবর, ২০১৪ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি দত্তপুকুরের বাসিন্দা ওই কিশোরীকে বেড়াতে নিয়ে গিয়েছিল তার জামাইবাবু। কিন্তু তারা আর ফেরেনি। দশ দিন পরে বাড়ির কাছ থেকেই মেয়েটিকে উদ্ধার করে দত্তপুকুর থানার পুলিশ। জুলেখা তার জামাইবাবুর বিরুদ্ধেই পুলিশের কাছে অপহরণ, জোর করে আটকে রাখা, বিক্রি এবং ধর্ষণের অভিযোগ জানায়। কিশোরীর অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয় জামাইবাবু, তার এক বন্ধু, সোনাগাছি এলাকার এক যৌনকর্মী এবং গাদিয়াড়ার এক হোটেলের দুই কর্মীকে।

দত্তপুকুর থানার একাংশ প্রথম থেকেই এই ঘটনার তদন্তে গা-ছাড়া মনোভাব দেখিয়েছিল বলে মনে হয়েছে সিআইডি-র। কেন?

এক সিআইডি অফিসার জানান, এই ধরনের ঘটনায় ধাপে ধাপে যে-সব নিয়ম মেনে তদন্ত চালানোর কথা, এ ক্ষেত্রে তা অনুসরণ করা হয়নি। l এই ধরনের অপরাধের শিকার হওয়া নাবালিকাদের শিশু কল্যাণ সমিতির কাছে হাজির করাতে হয়। কিন্তু জুলেখা নিজের জামাইবাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ করার পরেও পুলিশ তাকে শিশু কল্যাণ সমিতির কাছে না-পাঠিয়ে বাড়িতেই রেখে দিয়েছিল। কেন সমিতির কাছে নিয়ে যাওয়া হল না, আদালতে তার কোনও ব্যাখ্যা দিতে পারেনি পুলিশ। l আদালতে ওই কিশোরী যে-বয়ান দেয়, তার সঙ্গে পুলিশের পেশ করা কেস ডায়েরির তথ্যেও অমিল যথেষ্ট।

এই সব অসঙ্গতি ধরা পড়াতেই সিআইডি-কে নতুন করে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। মামলার ভার নেওয়ার পরে মেয়েটিকে আর বাড়িতে রাখা নিরাপদ মনে করেনি সিআইডি। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা শিশু কল্যাণ সমিতির নির্দেশে প্রথমে জুলেখার ঠাঁই হয় সল্টলেক এবং পরে বারাসতের একটি হোমে। বারাসতের হোমে থাকার সময়েই কিশোরীর মা ও মামা তাকে বাড়ি ফেরত নিয়ে যাওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষকে বারবার অনুরোধ করেন। ২০১৫-র অগস্টে জুলেখা নিজেই বাড়ি ফিরতে চাওয়ায় সমিতি তাকে ফেরার অনুমতি দেয়।

শিশু কল্যাণ সমিতির একটি সূত্র জানাচ্ছে, মেয়েকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় তার সম্পূর্ণ নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়েছিলেন মা। কিন্তু গত এপ্রিলে সমিতি জানতে পারে, অ্যাসিড খেয়েছে বলে জানিয়ে ফেব্রুয়ারিতে জুলেখাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তার পরে বাড়িতে ফিরে গেলেও বমি থামেনি। এপ্রিলেই মারা যায় সে। খবর পেয়ে খোঁজখবর করতে গিয়ে সিআইডি-র গোয়েন্দারা আবার বেশ কয়েকটি অসঙ্গতির কথা জানতে পারেন। তার মধ্যে আছে: l ডেথ সার্টিফিকেট ছাড়াই মেয়েটিকে কবর দিয়ে দেওয়া হয়েছে। l তার মৃত্যুর খবর শিশু কল্যাণ সমিতিকেও জানানো হয়নি।

জুলেখার আত্মীয়স্বজনদের ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে গোয়েন্দাদের। এক সিআইডি অফিসার বলেন, ‘‘ধর্ষণের ঘটনার তদন্তের সময় থেকেই ওর পরিজনদের একাংশের আচার-আচরণ আমাদের মনে জোর খটকা জাগিয়েছিল। মেয়েটিকে খুনও করা হয়ে থাকতে পারে।’’

তদন্তকারী এক গোয়েন্দা অফিসার জানান, জুলেখাকে কবর দেওয়ার পরে এক মাসও পেরোয়নি। তাই কবর থেকে দ্রুত মৃতদেহটি তুলে ময়না-তদন্তের আর্জি জানানো হয়েছে। এমন অস্বাভাবিক মৃত্যুর পরেও নিয়ম মেনে ময়না-তদন্ত করা হল না কেন, কেনই বা ডেথ সার্টিফিকেট ছাড়া তাকে কবর দেওয়া হল— সবই খতিয়ে দেখা হবে। ‘‘মৃত্যুরহস্যের সব দিকই আনা হবে তদন্তের আওতায়। এর পিছনে কারা আছে, সবই খুঁজে বার করতে চাই আমরা,’’ বলছেন ওই অফিসার।

Rape Duttapuku
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy