E-Paper

শুরু রেশন ডিলার ধর্মঘট, সমস্যা রাজ্যেও

রেশন ডিলারদের একাংশের বক্তব্য, দেশের প্রায় ১৪০ কোটির মধ্যে অন্তত ৮০ কোটি মানুষ এই পরিষেবার আওতায় রয়েছে। রাজ্যে জাতীয় খাদ্য সুরক্ষার আওতায় রয়েছেন প্রায় ছ’কোটি মানুষ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০২৪ ০৭:২৫
গিরিশ পার্ক এলাকায় বন্ধ রেশন দোকান।

গিরিশ পার্ক এলাকায় বন্ধ রেশন দোকান। —নিজস্ব চিত্র।

মাসে ৫০ হাজার টাকা স্থায়ী মজুরি-সহ ১৬ দফা দাবিতে দেশজুড়ে রেশন ডিলারদের ধর্মঘট শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার থেকে রাজ্যেরও প্রায় ২১ হাজার রেশন দোকান অনির্দিষ্টকালীন বন্ধ থাকবে। রেশন ডিলারদের এই ধর্মঘটের জেরে বিপাকে পড়েছেন রাজ্যের লক্ষাধিক উপভোক্তা। কবে রেশন পরিষেবা চালু হবে তা স্পষ্ট নয়। রাজ্য সরকারের বক্তব্য, রেশন ডিলারদের যাবতীয় সহযোগিতা করা হচ্ছে। যা প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, তা সবই কার্যকর করা হয়েছে।

রেশন ডিলারদের একাংশের বক্তব্য, দেশের প্রায় ১৪০ কোটির মধ্যে অন্তত ৮০ কোটি মানুষ এই পরিষেবার আওতায় রয়েছে। রাজ্যে জাতীয় খাদ্য সুরক্ষার আওতায় রয়েছেন প্রায় ছ’কোটি মানুষ। আরও অন্তত কয়েক কোটি মানুষকে নিখরচায় রেশন দেওয়ার দাবি করে থাকে রাজ্যও। আবার রাজ্যে চলছে দুয়ারে রেশন কর্মসূচি। ফলে এই ধর্মঘটে দুর্ভোগ বাড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে।

অল ইন্ডিয়া ফেয়ার প্রাইস শপ ডিলার্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বম্ভর বসুর অভিযোগ, “দীর্ঘদিন ধরে রেশন ডিলাররা বঞ্চিত। তাঁরা পকেটের টাকা দিয়ে রেশন দোকান চালাচ্ছেন। আমাদের দাবি, সমস্ত রেশন ডিলারদের মাসিক মজুরি কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা করতে হবে।” তাঁর দাবি, অনির্দিষ্টকালীন এই আন্দোলনের জন্য রেশন সরবরাহে কোনও সমস্যা হবে না। কেন্দ্র-রাজ্য টানাপড়েনের জন্য রেশন ডিলারদের ভুগতে হচ্ছে বলে অভিযোগকরেছেন বিশ্বম্ভর।

রাজ্য সরকারের পাল্টা দাবি, রেশন ডিলারদের বেশিরভাগ দাবিদাওয়ার মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। তার সবিস্তার বিবরণ দিয়ে গত ১৮ ডিসেম্বর রেশন ডিলারদের সংগঠনগুলিকে চিঠিও দিয়েছিল খাদ্য দফতর। তাতে দাবি করা হয়েছে, প্রতি কুইন্টাল খাদ্যশস্যের কমিশন বা মার্জিন ৭০ টাকা থেকে ধাপে ধাপে বাড়িয়ে করা হয়েছে ৯৫ টাকা। তার মধ্যে ৯০ টাকা কেন্দ্র ও রাজ্য দেয় ৫০% করে। বাকি পাঁচ টাকা দেয় রাজ্য নিজে।

রাজ্যের দাবি, দুয়ারে রেশন কর্মসূচির জন্য প্রতি কেজি খাদ্যশস্যে অতিরিক্ত ৭৫ পয়সা কমিশন দিচ্ছে তারা। তার মধ্যে ৫০ পয়সা দেওয়া হয় উপভোক্তার দুয়ারে রেশন পৌঁছতে পরিবহণ খরচ হিসেবে এবং ২৫ পয়সা প্রতি কেজিতে থাকে বায়োমেট্রিক খাতে। এর উপরে প্রতি মাসে পাঁচ হাজার টাকা করে স্থায়ী বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে রেশন ডিলারদের। রেশন পৌঁছতে তিন বা চার চাকা গাড়ি কিনতে ২০% বা সর্বোচ্চ এক লক্ষ টাকা ভর্তুকিও দেয় রাজ্য। রেশন ডিলারদের পরিবারের কারও মৃত্যু হলে এককালীন দু’লক্ষ টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়াও চালু হয়েছে। তবে অনৈতিক কোনও কাজে রাজ্য যে পদক্ষেপ করবে, স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে তা-ও।

এ দিনের ধর্মঘটের জেরে নানা জেলায় কিছু রেশন দোকান মঙ্গলবার বন্ধ থাকলেও, অধিকাংশ জেলায় এই সংগঠনের সদস্য কম থাকায় বিশেষ প্রভাব পড়েনি। দুই মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পূর্ব বর্ধমান, বীরভূম, মুর্শিদাবাদের মতো জেলাগুলিতে রেশন বিলি প্রায় স্বাভাবিক ছিল। গ্রামে গ্রামে দুয়ারে রেশন দিতেও দেখা গিয়েছে। শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়িতেও রেশন পরিষেবা স্বাভাবিক ছিল।

রেশন ডিলার সংগঠনের সদস্যেরা চুঁচুড়ায় খাদ্য ভবনের সামনে জমায়েত করেন ও স্মারকলিপি দেন। পশ্চিম বর্ধমানের আসানসোল ও দুর্গাপুরেও তাঁরা জমায়েত করেন। সংগঠনের আসানসোলের নেতা মহেশ শর্মার দাবি, কমিশন বৃদ্ধি-সহ নানা দাবিতে সরকারের কাছে বহু বার আবেদন করা হলেও ফল হয়নি। তাই এ দিন জেলার ৭৪ জন রেশন ডিলার খাদ্যসামগ্রী সরবরাহ করেননি। নদিয়ার ১,২৮৬ জন রেশন ডিলারের মধ্যে প্রায় ৪০০ জন ‘ফেয়ার প্রাইস শপ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সঙ্গে যুক্ত। সংগঠনের জেলা সম্পাদক মানস দে জানান, ওই ডিলারেরা এক বেলা প্রতীকী ধর্মঘট করেছেন। বিকেলের পরে ধর্মঘট উঠে গিয়েছে। খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ বলেন, “ধর্মঘটের প্রভাব দু’টি ডিলার অ্যাসোসিয়েশনে আছে। আমরা তাঁদের দাবি পুনর্বিবেচনা করার আশ্বাস দিয়েছি। তবে এখনও পর্যন্ত সে ভাবে প্রভাব কিছু পড়েনি। আমার মনে হয়, যাঁরা এখনও ইতস্তত করছেন। তাঁরা নিশ্চয়ই আমাদের আবেদনে সাড়া দিয়ে রেশন দোকানখোলা রাখবেন।”

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর দাবি, ‘‘এই রেশন ডিলারদের একাংশকে ব্যবহার করেই তো বাংলায় চাল, গম লুট হয়েছে। রেশন ডিলারদের একাংশ, ডিস্ট্রিবিউটর, মন্ত্রী— সকলে মিলে লুট করেছেন। তবে ডিলারদের অনেক ন্যায্যসমস্যা রয়েছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Ration Dealer Strike

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy