E-Paper

দুর্নীতি ধরতে নিশানা সৎ ব্যবসায়ীরাই, বালুর বিরুদ্ধে অভিযোগ ইডির

রেশন বণ্টন দুর্নীতির তদন্তে নেমে জ্যোতিপ্রিয় এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী বাকিবুর রহমানকে হেফাজতে নিয়ে জেরা করেছে ইডি।

শুভাশিস ঘটক

শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০২৩ ০৫:৫১
Jyotipriya Mallick

জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। —ফাইল চিত্র।

কখনও রেশন দোকানের মালিক, কখনও ডিলার, কখনও ডিস্ট্রিবিউটরের বিরুদ্ধে ‘কালোবাজারি রুখতে কড়া ব্যবস্থা’। কখনও আবার নিজে রাস্তায় নেমে ‘বেআইনি ভাবে ব্যবসা করা’ ডিলার কিংবা ‘অসৎ মজুতদারদের ডেরায় হানা’। ২০১১ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী থাকাকালীন এমন ‘দুর্নীতির’ বিরুদ্ধে ‘অভিযানের’ কথা বহু বার ফলাও করে প্রচার করেছেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক (বালু)। কিন্তু এখন রেশন দুর্নীতির তদন্তে নামা ইডির সূত্রে অভিযোগ, ওই সমস্ত অভিযানের অধিকাংশই ছিল স্রেফ লোকদেখানো। শুধু তা-ই নয়, অনেক ক্ষেত্রে যাঁরা আদতে দুর্নীতিতে শামিল হতে রাজি হতেন না, তাঁদেরই উল্টে নিশানা করা হত বলে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটির সূত্রে দাবি।

রেশন বণ্টন দুর্নীতির তদন্তে নেমে জ্যোতিপ্রিয় এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী বাকিবুর রহমানকে হেফাজতে নিয়ে জেরা করেছে ইডি। সেই জিজ্ঞাসাবাদ এবং মন্ত্রী-ঘনিষ্ঠ আরও কয়েক জনকে প্রশ্ন করে পাওয়া তথ্য-বয়ানের ভিত্তিতে ইডির তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, খাদ্য দফতরের আধিকারিকদের একাংশের পাশাপাশি ডিস্ট্রিবিউটর, ডিলার এবং রেশন দোকানের মালিকদের নিয়ে দুর্নীতির যে বিশাল চক্র তৈরি করেছিলেন জ্যোতিপ্রিয়, তাতে যাঁরা শামিল হতে রাজি হতেন না, মন্ত্রীর নিদানে ‘দুর্নীতি’র অভিযোগের খাঁড়া নেমে আসত তাঁদের মাথাতেই! মন্ত্রী দাবি করতেন, রাজ্যের রেশন ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনতে তিনি উদ্যোগী, অথচ কোপে পড়তে হত সৎ রেশন ডিলার ও দোকান-মালিকদের।

এক ইডি কর্তার দাবি, ‘‘এই সমস্ত ব্যবসায়ীর কার কোথায় সামান্য গরমিল খুঁজে পাওয়া যায়, তা খুঁজে দেখা হত। খাদ্যমন্ত্রীর নির্দেশই ছিল, দুর্নীতি চক্রে যোগ দিচ্ছেন না, এমন কয়েক জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার। যাতে তা দেখে ভয় পেয়ে অন্যরা নিজেদের ব্যবসার স্বার্থে দুর্নীতি চক্রে শামিল হন।’’

কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটির সূত্রে অভিযোগ, খাদ্য দফতরের ‘ঘনিষ্ঠ’ অফিসারদের সঙ্গে নিয়েই অভিযানে নামতেন মন্ত্রী। রেশন সামগ্রী ‘কালোবাজারি’র অভিযোগ এনে তাঁদের নানা দোষ-ত্রুটি উল্লেখ করে, ডিস্ট্রিবিউটর, ডিলার এবং রেশন দোকানের মালিকদের একাংশের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হত ঢাক-ঢোল পিটিয়ে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে ডিস্ট্রিবিউটর ও ডিলারদের বরাত বাতিল করে দেওয়া হত। কখনও বা তাঁদের কালো তালিকাভুক্ত করা হত। এমনকি রেশন সামগ্রী চুরি ও খোলা বাজারে বিক্রির অভিযোগ এনেও কারও-কারও বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলার নির্দেশ দিতেন মন্ত্রী। ইডি সূত্রের দাবি, প্রাথমিক ভাবে তদন্তে দেখা গিয়েছে, প্রায় তিনশো রেশন ডিলার, ডিস্ট্রিবিউটর ও রেশন দোকানের মালিকের ঘাড়ে এমন শাস্তির খাঁড়া নেমে এসেছিল।

তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, রাজ্য জুড়ে প্রায় ১২ হাজারেরও বেশি ডিলার, ডিস্ট্রিবিউটর এবং রেশন দোকানের মালিকদের নিয়ে রেশন দুর্নীতি চক্রের সিন্ডিকেট তৈরি করেছিলেন জ্যোতিপ্রিয়। খাদ্য দফতরের আধিকারিক ও কর্মীদের একাংশের সক্রিয় যোগ ছিল তাতে। তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, রেশন বণ্টন ব্যবস্থার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত প্রায় ৭০ শতাংশেরই দুর্নীতির সঙ্গে যোগ ছিল। যাঁরা তার বাইরে, ‘ভয় দেখিয়ে’ চক্রে শামিলের চেষ্টা করা হত তাঁদেরও।

ইডির এক তদন্তকারী অফিসারের দাবি, ‘‘সংগঠিত অপরাধের মাধ্যমে দুর্নীতিচক্র চালিয়ে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের ন্যায্য মূল্যের রেশন সামগ্রী খোদ মন্ত্রীর নির্দেশেই কালোবাজারি করা হত বলে প্রাথমিক তথ্য হাতে এসেছে। বহু নথি উদ্ধার হয়েছে এবং ওই সব নথি যাচাই করা হচ্ছে। খুব তাড়াতাড়ি তা আদালতে পেশ করা হবে।’’ রেশন দুর্নীতির টাকা কী ভাবে কোথায় পাচার করা হয়েছে এবং কোন কোন সম্পত্তিতে বিনিয়োগ করা হয়েছে, তা-ও আদালতে পেশ করা হবে বলে এক ইডি কর্তার দাবি।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Jyotipriya Mallick TMC ED

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy