E-Paper

‘প্রভাবশালীদের নামগুলো দেখুন, প্রকাশ্য আদালতে এ সব বলা সম্ভব নয়’! কোর্টে জানাল ইডি

কেস ডায়েরি হল সেই গোপন গুরুত্বপূর্ণ নথি, যাতে তদন্তের যাবতীয় অগ্রগতি লিপিবদ্ধ করা হয়। এবং যেটা শুধু তদন্তকারী সংস্থা আর বিচারকই দেখতে পান। আইনজীবীদেরও ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে সেই নথি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২৩ ০৬:১০
ED.

নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে তদন্তের ‘কেস ডায়েরি’ আদালতে পেশ করল ইডি। ফাইল চিত্র।

রাজ্যে শিক্ষা ক্ষেত্রে নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে তদন্তের শ্লথ গতি নিয়ে নিম্ন আদালত থেকে কলকাতা হাই কোর্ট বারংবার অসন্তোষ প্রকাশ করেছে, প্রশ্ন তুলেছে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার কাজের অগ্রগতির বিষয়ে। বুধবার নিম্ন আদালতে ‘কেস ডায়েরি’ পেশ করে ইডি-র আইনজীবীরা জানালেন, তদন্ত কতটা কী হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে কী ঘটতে চলেছে, বিচারক মামলার এই অতি-গুরুত্বপূর্ণ নথি পর্যবেক্ষণ করলেই তা বুঝতে পারবেন। নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত তৃণমূলের বহিষ্কৃত যুব নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়কে এ দিন বিচার ভবনের বিশেষ সিবিআই আদালতে তুলে এ ভাবেই বিচারকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে ইডি।

আইনজীবী শিবিরের বক্তব্য, কেস ডায়েরি হল সেই গোপন গুরুত্বপূর্ণ নথি, যাতে তদন্তের যাবতীয় অগ্রগতি লিপিবদ্ধ করা হয়। এবং যেটা শুধু তদন্তকারী সংস্থা আর বিচারকই দেখতে পান। আইনজীবীদেরও ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে সেই নথি। এ দিন বিচারকের উদ্দেশে ইডি-র আইনজীবীদের বলতে শোনা যায়, ‘‘হুজুর, কেস ডায়েরিটা ভাল ভাবে পর্যবেক্ষণ করুন। তাতে উল্লিখিত প্রভাবশালীদের নামগুলো দেখুন। প্রকাশ্য আদালতে সেই নামগুলো বলতে পারছি না। দেখলেই বুঝবেন, ভবিষ্যতে কী ঘটতে চলেছে।’’

শান্তনুর স্ত্রী প্রিয়াঙ্কার নামে একটি সংস্থা ছিল। এ দিন আদালতে ইডি-র অভিযোগ, শান্তনু নিজে যে-ব্যবসা করতেন, সেখানকার কর্মীদের চাপ দিয়ে একের পর এক সাদা কাগজে সই করিয়ে নিয়েছিলেন। সেই কাগজ ব্যবহার করে ওই সব কর্মীকে প্রিয়াঙ্কার সংস্থায় ডিরেক্টর করা হয়েছিল। তদন্তকারীদের দাবি, ওই কর্মীরা পরে জানিয়েছেন, তাঁদের ডিরেক্টর করার কথা তাঁরা ঘুণাক্ষরেও টের পাননি। তদন্তকারী অফিসারের দাবি, শান্তনু এতটাই প্রভাবশালী যে, তাঁর যে-কোনও নির্দেশ কর্মীদের কার্যত মুখ বুজে মান্য করতে হত।

শান্তনুর আইনজীবীরা আদালতে বলেন, ‘‘তদন্তকারী সংস্থা আমাদের মক্কেলের যে-সব বিষয়সম্পত্তির কথা উল্লেখ করেছে, তা ঋণ নিয়ে কেনা হয়েছে। আমাদের মক্কেল প্রতিষ্ঠিত পরিবারের ছেলে। তিনি এত বোকা নন যে, তাঁর বাড়িতে তিনশোটি ‘ওএমআর শিট’ বা উত্তরপত্র সাজিয়ে রাখবেন। বাবার মৃত্যুর পরে উনি তাঁর চাকরিটি পেয়েছিলেন। গ্রেফতারের পরে সেই চাকরি চলে গিয়েছে।’’

বিচারকের প্রশ্ন, শান্তনুর কী ধরনের ব্যবসা আছে? শান্তনুর আইনজীবী বলেন, ‘‘ওঁর হোটেল ব্যবসা, অতিথিশালা এবং মোবাইলের দোকান রয়েছে।’’ শান্তনুর শিক্ষাগত যোগ্যতা জানতে চান বিচারক। শান্তনু নিজেই বলেন, ‘‘উচ্চ মাধ্যমিক পাশ। মাল্টিমিডিয়ায় ডিপ্লোমা রয়েছে।’’

শান্তনুর জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করে ইডি-র আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি ও অভিজিৎ ভদ্র বলেন, ‘‘এই অভিযুক্ত সরকারি কর্মী! উনি তো ব্যবসা করতে পারেন না। ওঁর বার্ষিক বেতন ছ’লক্ষ টাকা, কিন্তু সম্পত্তি ২০ কোটি টাকার।’’ ইডি-র আইনজীবীদের দাবি, ‘ইভান কনট্রেড প্রাইভেট লিমিটেড’ নামে শান্তনুর সংস্থার নামেই সব সম্পত্তি কেনা হয়।

শান্তনুর কৌঁসুলিদের দাবি, তাঁদের মক্কেল তাঁর পরিবারের একমাত্র উপার্জনশীল সদস্য। ওঁর এবং ওঁর স্ত্রীর সব ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে লেনদেন ‘ফ্রিজ়’ করে দেওয়া হয়েছে। সব ব্যবসা বন্ধ। এই অবস্থায় পরিবারের ভরণপোষণের জন্য মাসিক ভাতার আবেদন করেন আইনজীবীরা। এই আবেদন গ্রহণ করেনি আদালত।

আদালতের বাইরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শান্তনু বলেন, ‘‘ইভান কনট্রেড প্রাইভেট লিমিটেড আমার ছেলের নামে।’’ সাংবাদিকদের প্রশ্ন, কী কাজ হত ওই সংস্থায়? শান্তনু বলেন, ‘‘পরে বলব। এখন শুধু দেখার আর শোনার সময়।’’ তাঁর বাড়ি থেকে কোনও উত্তরপত্র উদ্ধার হয়নি বলে শান্তনুর দাবি। ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত তাঁকে জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে আদালত সূত্রের খবর।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Recruitment Scam Enforcement Directorate

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy