Advertisement
০৪ মে ২০২৪
Recruitment Scam

চুনোপুঁটিদের ধরেই কি ক্ষান্ত হবে সিবিআই, ইডি, নাকি রাঘববোয়ালও ধরা পড়বে? প্রশ্ন প্রার্থীদের

চাকরিপ্রার্থীদের অনেকেই বলছেন, প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় কি একাই মূল চক্রী? নাকি তাঁর পিছনেও কারও মদত ছিল তা স্পষ্ট করে বলুক কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলি।

recruitment scam.

সিবিআই কিংবা ইডির হাতে গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিদের অধিকাংশই আক্ষরিক অর্থে দালাল। প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০২৩ ০৬:১৯
Share: Save:

স্কুল নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের হাতে যাওয়ায় ‘আশার আলো’ দেখেছিলেন চাকরিপ্রার্থীদের অনেকে। কিন্তু যত দিন গড়াচ্ছে তদন্তের অভিমুখ নিয়ে ততই প্রশ্ন উঠছে তাঁদের মনে। বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের বক্তব্য, তদন্তে প্রভাবশালী যোগ বলা হচ্ছে। অথচ প্রভাবশালী কে বা কারা, তা স্পষ্ট করা হচ্ছে না। সিবিআই কিংবা ইডির হাতে গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিদের অধিকাংশই আক্ষরিক অর্থে দালাল। কিন্তু এই দুর্নীতির পিছনে প্রভাবশালী মাথাদের গ্রেফতারের কোনও ইঙ্গিত মিলছে না। এক চাকরিপ্রার্থী প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘চুনোপুঁটিদের ধরেই কি ক্ষান্ত হবে সিবিআই, ইডি? নাকি রাঘববোয়ালও ধরা পড়বে?’’

এই প্রসঙ্গে অনেকেই সারদা কেলেঙ্কারির প্রসঙ্গ তুলেছেন। তাঁরা বলছেন, সেখানে সুপ্রিম কোর্টই ‘প্রভাবশালী যোগ’ খুঁজতে বলেছিল? তদন্তে নেমে সিবিআই, ইডি-ও ‘প্রভাবশালীদের’ নিয়ে নানা তত্ত্ব দিয়েছিল। দু-এক জন মন্ত্রী-সান্ত্রীকে গ্রেফতারের ছাড়া অবশ্য তেমন কোনও রাঘববোয়ালের দিকে তারা হাত বাড়ায়নি। তদন্ত শেষ হওয়া তো দূর, ধীরে ধীরে বিষয়টিই জনমানসে আবছা হয়ে গিয়েছে। নিয়োগ দুর্নীতি তদন্তের পরিণতিও তেমন হবে কি না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। যদিও তদন্তকারীদের তরফেও যুক্তি আছে। তাঁদের দাবি, দালালদের না-পাকড়াও করলে কোন কোন প্রভাবশালী জড়িত তার স্পষ্ট তথ্য মিলবে না। এই দাবির পরে অনেকে পাল্টা বলছেন, এত জন দালালকে গ্রেফতারের পরেও কেন দুর্নীতির মহীরুহের শিকড়ে পৌঁছনো যাচ্ছে না?

চাকরিপ্রার্থীদের অনেকেই বলছেন, প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় কি একাই মূল চক্রী? নাকি তাঁর পিছনেও কারও মদত ছিল তা স্পষ্ট করে বলুক কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলি। কেউ কেউ তো বলছেন, পার্থ একাই এত বড় দুর্নীতি করলেন এবং কাকপক্ষী টের পেল না, এমন ভেবে নেওয়া অসম্ভব নয় কি? এই তত্ত্বের পিছনে তাঁদের যুক্তি, কুন্তল ঘোষ, অয়ন শীলকে গ্রেফতারের পরে দুর্নীতির টাকা প্রভাবশালীদের কাছে গিয়েছে বলে দাবি করছে ইডি। পার্থ তো জেল হেফাজতে। তা হলে কি ধরে নিতে হবে যে তিনি ছাড়াও আরও কোনও প্রভাবশালী জড়িত? তিনি কে বা কারা? এর সদুত্তরও তদন্তকারীদের সূত্রে মিলছে না।

প্রসঙ্গত, নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তের গতিপ্রকৃতি নিয়ে মাঝেমধ্যে প্রশ্ন তুলেছে আদালতও। উল্লেখ্য, কয়েক দিন আগেই ধৃত তৃণমূল বিধায়ক তথা প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যকে জেরা করে কেন তথ্য মিলছে না, তা নিয়ে সিবিআইকে রীতিমতো তিরস্কার করেছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। বহু ক্ষেত্রে নিম্ন আদালতও তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

এই পরিস্থিতিতে হতাশার সুরও শোনা গিয়েছে চাকরিপ্রার্থীদের একাংশের গলায়। নবম-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক পদের চাকরিপ্রার্থী অভিষেক সেনের বক্তব্য, ‘‘কয়েকটা রাঘববোয়াল ধরা পড়লেও অনেকেই জালের বাইরে রয়েছে। এ দিকে, ৭৪৩ দিন রাস্তায় বসে কেটে গেল। আমাদের দাবি, রাঘববোয়াল ধরা পড়ুক এবং পাশাপাশি দ্রুত নিয়োগও হোক।’’

উচ্চ প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরিপ্রার্থী সুশান্ত ঘোষের মতে, ‘‘তদন্ত ঠিক মতো এগোচ্ছে কি? যে ক’জন রাঘববোয়াল ধরা পড়েছেন তাঁরাও তো দেখছি ফুরফুরে মেজাজে আছেন। কেউ তো বান্ধবীকে নানা ইশারাও করছেন! রাঘববোয়াল ধরে দ্রুত তদন্ত শেষ করা হোক।’’ নিয়োগের দাবি তুলেছেন তিনিও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE