Advertisement
E-Paper

বহিরাগত রুখতে রক্ষী রেজিস্ট্রারই

বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণের তোরণ-দরজা হাট করে খোলা। যেমন থাকে রোজই। রক্ষীর নির্ধারিত পোশাক পরা বেশ কয়েক জন নিরাপত্তাকর্মী আছেন। যেমন থাকেন রোজ। তারই মধ্যে শুক্রবার দেখা গেল, রক্ষীদের পাশে দাঁড়িয়ে আগন্তুকদের পরিচয় যাচাই করছেন শাড়ি পরা এক মহিলা। যেমনটা দেখা যায় না রোজ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:৪৯
গেটে দাঁড়িয়ে নিজেই পরিচয়পত্র দেখছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার সোমা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার রণজিৎ নন্দীর তোলা ছবি।

গেটে দাঁড়িয়ে নিজেই পরিচয়পত্র দেখছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার সোমা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার রণজিৎ নন্দীর তোলা ছবি।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণের তোরণ-দরজা হাট করে খোলা। যেমন থাকে রোজই।

রক্ষীর নির্ধারিত পোশাক পরা বেশ কয়েক জন নিরাপত্তাকর্মী আছেন। যেমন থাকেন রোজ।

তারই মধ্যে শুক্রবার দেখা গেল, রক্ষীদের পাশে দাঁড়িয়ে আগন্তুকদের পরিচয় যাচাই করছেন শাড়ি পরা এক মহিলা। যেমনটা দেখা যায় না রোজ।

রোজ কেন, এর আগে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও রেজিস্ট্রারকে ওই ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সদর এবং পাশের দরজায় দাঁড়িয়ে আগন্তুকদের পরিচয় পরীক্ষা করতে দেখা গিয়েছে কি না, প্রবীণেরাও তা ঠিক মনে করতে পারছেন না। তবে এ দিন সেটা দেখা গেল দীর্ঘ ক্ষণ। এবং দিনশেষে রেজিস্ট্রার সোমা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিলেন, এটা কোনও চমক নয়। নৈতিক দায়িত্ব পালনের জন্য তিনি এ ভাবে সদরে রক্ষীদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে আগন্তুকদের পরিচয় যাচাই করবেন বারবার। এবং শুধু কলেজ স্ট্রিটে প্রতিষ্ঠানের মূল ক্যাম্পাস নয়। রেজিস্ট্রার এ বার থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি ক্যাম্পাসে একই ভাবে ‘রক্ষী’র কাজ করবেন বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর।

কেন?

‘‘নিরাপত্তারক্ষীদের পাশে থেকে অবাঞ্ছিত বহিরাগতদের প্রবেশ আটকানো আমার নৈতিক দায়িত্ব। তাই এসেছি। প্রয়োজনে বারবার আসব,’’ রীতিমতো সঙ্কল্পবদ্ধ শোনাল রেজিস্ট্রার সোমাদেবীকে।

ঠিক কী ঘটেছিল এ দিন?

বেলা তখন ১২টা। অন্যান্য কাজের দিনের মতোই বিশ্ববিদ্যালয় সরগরম। প্রতিটি দরজাতেই ব্যস্ত লোকজনের যাতায়াত। রক্ষীরাও ব্যস্ত। তখনই দেখা যায়, এক হাতে সেলফোন ও রুমাল এবং অন্য হাতে আগন্তুকদের কাগজপত্র পরীক্ষা করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার। পড়ুয়াদের পরিচয়পত্র যাচাই করে এবং অন্যদের খাতায় সই করিয়ে তবেই ঢুকতে দিচ্ছেন। পনেরো মিনিট বা আধ ঘণ্টা নয়। নিজের ঘর ছেড়ে বেলা ১২টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত সদর ও পাশের দরজায় রক্ষীদের সঙ্গে এই দায়িত্ব পালন করেন সোমাদেবী। খোদ রেজিস্ট্রারকে রক্ষীর ভূমিকায় দেখে পড়ুয়া-শিক্ষক-কর্মীরাও চমৎকৃত।

চমকে দেওয়ার মতো ঘটনা। তবে ব্যাপারটা যে আদৌ চমক নয়, সেটা নিজেই জানাচ্ছেন রেজিস্ট্রার। বলছেন, এটা তাঁর নৈতিক দায়িত্ব। শিক্ষাঙ্গনে অবাঞ্ছিত বহিরাগতদের ঠেকানোর দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষের এবং রেজিস্ট্রার সেই কর্তৃপক্ষের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। সবই ঠিক। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন কাজের ভার তো বিভিন্ন জনের উপরে ন্যস্ত করা আছে। যেমন আগন্তুকদের পরিচয় পরীক্ষার দায়িত্ব দ্বাররক্ষীদের। প্রশ্ন উঠছে, সেই নিরাপত্তারক্ষীরা থাকতেও প্রতিষ্ঠানে বহিরাগত আটকাতে খোদ রেজিস্ট্রারকে পথে নামতে হল কেন?

বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরের খবর, কলেজ স্ট্রিট এবং রাজাবাজার ক্যাম্পাসে গত কয়েক মাসের একের পর এক অবাঞ্ছিত ঘটনাই এর কারণ। গত বছর জুলাইয়ে শিক্ষকদের আন্দোলন চলাকালীন শিক্ষকদের মারধর করার ঘটনা ঘটে। অভিযোগ ওঠে, বহিরাগত কিছু যুবক সিন্ডিকেট হলের সামনে ঢুকে পড়েছিল। শিক্ষকদের মারধর করে সেই বহিরাগতদের একাংশ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু পড়ুয়া। কয়েক মাস আগে ব্যাপক গন্ডগোল হয় রাজাবাজার ক্যাম্পাসেও। সেখানে মারধর করা হয় ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদককে। সে-ক্ষেত্রেও অভিযোগের তির বহিরগতদের দিকেই। সম্প্রতি কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসে ছাত্র সংসদের ঘরের বাইরে কালি লেপে দেওয়ার ঘটনায় ফের কাঠগড়ায় তোলা হয় বহিরগতদের। ঠিক কে বা কারা কালি লেপেছিল, শেষ পর্যন্ত অবশ্য তারও কোনও হদিস পাওয়া যায়নি। কয়েক দিন আগেই কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসের ছাত্র সংসদে হাতাহাতি হয়। ব্লেড দিয়ে আক্রমণের অভিযোগও ওঠে। তাতেও বাইরের লোকজনের হাত ছিল বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর।

শিক্ষা শিবিরের অনেকের বক্তব্য, রেজিস্ট্রারকে যে রক্ষীর ভূমিকা নিতে হচ্ছে, সেই পরিপ্রেক্ষিত তৈরি করে দিয়েছে লাগাতার এই বহিরাগত-হাঙ্গামা। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্তা বলেন, ‘‘নিরাপত্তারক্ষীদের কার্যত ধমকে ক্যাম্পাসে ঢুকে পড়ছিলেন অনেকে। বহিরাগতদের ঠেকাতে কর্তৃপক্ষ যে বদ্ধপরিকর, সেটা বোঝাতেই সোমাদেবী এ দিন পরিচয়পত্র পরীক্ষকের ভূমিকা নেন।’’

কিন্তু তিনি যে রেজিস্ট্রার, তিনি যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ পদাধিকারী, এ দিন নিরাপত্তারক্ষীদের কাজে সহায়তার সময় সোমাদেবীর গলায় সেই পরিচয়পত্র ঝোলানো ছিল কি, প্রশ্ন তুলছেন কৌতূহলী অনেকেই।

‘‘আমাদের প্রতিষ্ঠানে পরিচয়পত্র গলায় ঝোলানোর ব্যবস্থাটাই চালু হয়নি এখনও,’’ বলছেন সোমাদেবী।

university outsiders
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy