Advertisement
০৩ মে ২০২৪
Education

কৃষ্ণা-ভাষ্যে বাঙালির ইতিহাস সন্ধান

একই ভাবে সেই আমলে ম্যাট্রিক পাশ করলেই মেয়েদের বিয়ের রীতিও উঠে আসে স্মৃতিচারণায়। টুকরো-টুকরো এই কথাতেই ফুটে ওঠে বাঙালির বুদ্ধিচর্চার ইতিহাস।

কৃষ মনজাপরা ও সুগত বসু। মঙ্গলবার।

কৃষ মনজাপরা ও সুগত বসু। মঙ্গলবার। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩ ১০:১০
Share: Save:

সাবেক প্রেসিডেন্সি কলেজের একটি খুপরি ঘরে কয়েক জনকে পড়াচ্ছিলেন ইংরেজির অধ্যাপক তারকনাথ সেন। মাস্টারমশাইয়ের কাছে শেক্সপিয়র, মিলটন পড়তে পড়তে কখন যে দুপুর থেকে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমেছে তা খেয়ালই করেননি কেউ। ক্লাস শেষ হওয়ার পর বাইরে এসে দেখলেন, গোটা কলেজ নিঃস্তব্ধ। চারপাশ অন্ধকার, শুধু লাইব্রেরি এবং অধ্যাপকের ঘরে আলো জ্বলছে। তবুও সদ্য তরুণী ছাত্রীর মনে হয়েছিল, ‘প্রাণে যেন শান্তি নেমে এসেছে।’

বিংশ শতকের কলকাতায় জ্ঞানচর্চার আঁতুড়ঘর হিসেবে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির গুরুত্ব অনস্বীকার্য। সে দিনের তরুণী ছাত্রী, অধুনা প্রয়াত অধ্যাপক কৃষ্ণা বসুর ৯৩তম জন্মদিন উপলক্ষে নেতাজি রিসার্চ ব্যুরো আয়োজিত স্মারক বক্তৃতায় সেই প্রসঙ্গই ফিরে এসেছে। এ দিনের বক্তা বস্টনের নর্থইস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টার্নস ট্রাস্টি প্রফেসর অব হিস্ট্রি অ্যান্ড গ্লোবাল স্টাডিজ় কৃষ মনজাপরাও কলকাতার জ্ঞান এবং বুদ্ধিচর্চার ধারার তিনটি ভরকেন্দ্রে হিসেবে উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শহুরে আবহ (আরবান স্পেস) এবং চলমানতাকেই চিহ্নিত করেছেন এবং অধ্যাপক বসুর ভাষ্যে তাকে ফিরে দেখতে চেয়েছেন।

মৌখিক ইতিহাস রচনায় ২০০৯ সালে অধ্যাপক বসুর সাক্ষাৎকার রেকর্ড করেছিলেন কৃষ।সেই সাক্ষাৎকারে ধরা পড়েছে তাঁর শৈশব, সঙ্গীত শিক্ষার পরিমণ্ডল, তেমনই ধরা পড়েছে পাড়া সংস্কৃতিতে প্রতিবেশী নরেন্দ্রনাথ দেব, রাধারানী দেব, বুদ্ধদেব বসুর প্রসঙ্গ। নানা বিষয়ে মতপার্থক্য হওয়া সত্ত্বেও ‘বিখ্যাত’ কাকা নীরদ সি চৌধুরীর সঙ্গেও কিশোরী কৃষ্ণার সখ্যের সরস বর্ণনাও এসেছে। বস্তুত, ব্যক্তিগত নানা স্মৃতি থেকেই ইতিহাস রচনার উপাদান খুঁজে পাওয়া যায়। তেমন ভাবেই এই সাক্ষাৎকার তুলে ধরে শিশুপাঠ্য ‘মৌচাক’ পত্রিকায় খ্যাতনামা সাহিত্যিকদের নিয়মিত লেখার কথা কিংবা নৌবিদ্রোহের আবহে কলকাতার রাস্তায় মিছিলের প্রভাবের কথা। একই ভাবে সেই আমলে ম্যাট্রিক পাশ করলেই মেয়েদের বিয়ের রীতিও উঠে আসে স্মৃতিচারণায়। টুকরো-টুকরো এই কথাতেই ফুটে ওঠে বাঙালির বুদ্ধিচর্চার ইতিহাস।

বসু পরিবারের ছোট ছেলে অধ্যাপক সুমন্ত্র বসু অবশ্য অনুষ্ঠানের শেষে সখেদে বলেন, ‘‘বাঙালি বুদ্ধিজীবী আর নেই।’’ সাম্প্রতিক কালের জনপ্রিয় শব্দ ‘বিদ্বজ্জন’ সম্পর্কে মায়ের বিতৃষ্ণার বিবরণও দিয়েছেন তিনি। ‘বিদ্বজন’ কেমন হবেন তা নিজের ‘হারানো ঠিকানা’ গ্রন্থেই লিখেছেন কৃষ্ণা বসু। প্রাগ শহরে এক অধ্যাপককে দেখে তাঁর মনে হয়েছিল, ঠিক যেন প্রেসিডেন্সি কলেজের মাস্টারমশাই তারকনাথ সেন। শান্ত অথচ দৃঢ় ব্যক্তিত্ব এবং নিরভিমানী পাণ্ডিত্য।

বাঙালির বিদ্যাচর্চায় সেই ব্যক্তিত্বের কি অভাব ঘটছে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Education Society West Bengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE