Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

মণির মাণিক্য ৭৪ কোটি, খুশি ক্যালিফোর্নিয়া

অনুদানের পরিমাণ ১১ মিলিয়ন ডলার। মানে, ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৭৪ কোটি টাকা। মার্কিন মুলুকে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়স ৯৭ বছর। ওই প্রতিষ্ঠানের পদার্থবিদ্যা ও জ্যোতির্বিজ্ঞান বিভাগ এর আগে কোনও দিন এই পরিমাণ আর্থিক অনুদান পায়নি। সেটা এল এক বাঙালির হাত ধরে। তিনি ওই বিশ্ববিদ্যালয়েরই একদা গবেষক, পদার্থবিজ্ঞানী মণি ভৌমিক।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৬ ০৩:৫৭
Share: Save:

অনুদানের পরিমাণ ১১ মিলিয়ন ডলার। মানে, ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৭৪ কোটি টাকা।

মার্কিন মুলুকে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়স ৯৭ বছর। ওই প্রতিষ্ঠানের পদার্থবিদ্যা ও জ্যোতির্বিজ্ঞান বিভাগ এর আগে কোনও দিন এই পরিমাণ আর্থিক অনুদান পায়নি। সেটা এল এক বাঙালির হাত ধরে। তিনি ওই বিশ্ববিদ্যালয়েরই একদা গবেষক, পদার্থবিজ্ঞানী মণি ভৌমিক।

প্রবাসী এই বাঙালিই এক্সিমার লেজার আবিষ্কার করেছেন। অতি সূক্ষ্ম অস্ত্রোপচার সম্ভব হয়েছে ওই লেসার আবিষ্কারের ফলে। ডজন খানেক লেসার-এর ‘পেটেন্ট’ তাঁর গবেষণা ও মেধার ফল। সেই সুবাদেই বিপুল সম্পদশালী তিনি। এ বার তারই একাংশ তিনি তুলে দিলেন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হাতে, একটি গবেষণাকেন্দ্র তৈরির জন্য।

অথচ নিজের জীবনে ষোলো বছর বয়সের আগে মণির পায়ে জুতো, থুড়ি চটি জোড়াও ওঠেনি। ওই সময়েও যে চটি উঠেছিল, তার কারণ, তমলুকের শিউরি গ্রাম থেকে কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজে পড়তে আসা। শহরের পথে খালি পায়ে হাঁটা কষ্টের, তাই বাধ্য হয়েই একজো়ড়া চটি তাঁকে কিনতে হয়েছিল। তার আগে খালি পায়েই চার মাইল হেঁটে স্কুলে যেতে ও ফিরতে হতো। এ কথা ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়কে দেওয়া বিবৃতিতে মণি নিজেই উল্লেখ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর জেনে ব্লক বলেছেন, ‘‘মণি ভৌমিকের সেবামূলক মনোভাব ও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি তিনি যে

আস্থা রেখেছেন, সেই জন্য তাঁকে ধন্যবাদ জানাই।’’

স্লোন ফাউন্ডেশনের বৃত্তি পেয়ে ১৯৫৯-এ মণি যোগ দিয়েছিলেন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। গ্রামের লোকেরা চাঁদা তুলে বিমান ভাড়ার টাকা জোগাড় করে দিয়েছিলেন। আমেরিকায় যখন পৌঁছলেন, তখন তাঁর পকেটে মোটে তিন ডলার। ‘‘তবু এখানে সবাইকে সমান মর্যাদা দেওয়া হতো। আমার দেশের মতো না, যেখানে দরিদ্রদের দেখা হতো আবর্জনা হিসেবে,’’ বলছেন ৮৫ বছরের মণিলাল।

এর আগে এই বাঙালি সেবাব্রতী খড়্গপুর আইআইটি-কে ১৫০ মিলিয়ন ডলার অনুদান দিয়েছিলেন। মণিই ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রথম ডক্টরেট। পদার্থবিদ্যায়। সেটা ১৯৫৮। তার আগে কিংবদন্তি পদার্থবিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসুর ওই ছাত্র কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি পান। স্নাতক স্তরে তিনি যেখানে পড়াশোনা করেছিলেন, সেই স্কটিশ চার্চ কলেজের নবনির্মিত মিলেনিয়াম ভবনের জন্য ২০০০ সালে মণি প্রায় ২৭ লক্ষ টাকা অনুদান দিয়েছিলেন। কলেজের সেই সময়ের অধ্যক্ষ জন আব্রাহাম এ দিন এই তথ্য জানান।

ওই ভবনেরই একতলায় মণি ভৌমিকের নামে একটি অডিটোরিয়ামও তৈরি হয়েছে।

দারিদ্রের সঙ্গে যুদ্ধ করতে মেধা়ই যে তাঁর একমাত্র হাতিয়ার, মণি সে কথা ভোলেননি। শুক্রবার তমলুকের গ্রামের বাড়িতে বসে মণিবাবুর ভাইপো, বিভাস বলছিলেন, তাঁর সঙ্গে তাঁর জ্যাঠার টেলিফোনে প্রায়ই কথা হয়। বিভাস বলেন, ‘‘পরিবারের সকলের খোঁজ নেওয়ার পরেই এখনও উনি জানতে চান, এলাকার ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা কেমন চলছে। এলাকার মানুষের আর্থিক অবস্থাই বা কেমন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Moni bhowmik UCL
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE