সুপারের এই বাংলোর সংস্কারেই বরাদ্দ কোটি টাকা। — নিজস্ব চিত্র
স্নাতকোত্তর পাঠক্রমের জন্য আগাম আবেদন পর্ব সেরে রেখেছিল কল্যাণীর জেএনএম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
কিন্তু পরিকাঠামো? হাসপাতাল ঢুঁড়ে সে সব কিছুই নজরে না পড়ায়, মাস কয়েক আগে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালটির এমবিবিএস পঠন-পাঠনের অনুমোদনই বাতিল হতে বসেছিল। তাতে অবশ্য টনক নড়েনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।
মেডিক্যাল কলেজ সুপারের বাংলো মেরামতিতে তাই বরাদ্দ হয়েছে কোটি টাকা। শুধু তাই নয়, হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েক কোটি টাকা খরচ করে হাসপাতাল চত্বরে সংস্কার করা হচ্ছে এমন কিছু ঘরবাড়ির, যেগুলির সঙ্গে মেডিক্যাল কলেজের পঠন-পাঠন বা হাসাপাতালের পরিষেবার আদৌ কোনও সম্পর্ক নেই।
হাসপাতালের চিকিৎসক-পড়ুয়া-সহ সব মহলেই তাই প্রশ্ন উঠেছে— এমন অবান্তর খরচের অর্থ কী? চিকিৎসকদের অনেকেই যা নিয়ে সরাসরি আশঙ্কা প্রকাশ করছেন— খাতায় কলমে পূর্ত দফতরকে দিয়ে কাজ করানোর কথা বলা হলেও, ওই নির্মাণের ফাঁকে সাব-টেন্ডার ডেকে বড় অঙ্কের টাকা আত্মসাৎ করা হবে।
আজ, মুখ্যমন্ত্রীর সফরের আগে সেই অস্বস্তিকর প্রশ্নের মুখেই পড়েছেন জেএনএম কর্তৃপক্ষ।
সম্প্রতি স্বাস্থ্য দফতর নির্দেশ জারি করেছিল, রাজ্য স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয় এবং তাঁদের অধীনে চলা কল্যাণী জেএনএম মেডিক্যাল কলেজে বেশ কিছু নির্মাণ এবং মেরামতির কাজ হবে। যে তালিকায় রয়েছে, হাসপাতাল সুপারের বাংলোটি। রয়েছে, পুরনো আর একটি বাংলো সংস্কার। এ ছাডা় অন্য কয়েকটি বাড়িরও মেরামতি বাবদ কয়েক লক্ষ টাকার সংস্কার খরচ বরাদ্দ হয়েছে।
ইতিমধ্যেই ছাত্রীদের হস্টেলের সম্প্রসারণের জন্য প্রায় চার কোটি টাকা খরচের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অনুমোদন মিলেছে ছাত্রদের হস্টেল সম্প্রসারণেরও।
সুপারের বাংলো এবং চিকিৎসকদের আবাসন গড়তে একটি বাড়ি সংস্কারের জন্যও খরচ ধরা হয়েছে আরও সাড়ে তিন কোটি টাকা। সব মিলিয়ে খরচের অঙ্ক ১২ কোটি টাকার বেশি।
অথচ, মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার সুপারিশ ছিল— অন্য কিছু নয়, সবার আগে সংস্কার দরকার, হাসপাতালের মূল বাড়িটি। এমসিআই তাই স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছিল— এমবিবিএস পাঠক্রমের জন্য হাসপাতালের পরিকাঠামো আদৌ যথেষ্ঠ নয়। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে জানা গিয়েছে, যার জেরে, মাস কয়েক আগে ওই হাসপাতালে পঠনপাঠনের অনুমোদনই বাতিল হয়ে যেতে বসেছিল। হাসপাতালের কর্মীরা বলছেন, লোডশেডিং হলে আউটডোরে সব সময় জেনারেটর চলে না। হাসপাতালের চর্ম বিভাগের মতো কিছু বিভাগ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হওয়া জরুরী। সেখানে চিকিৎসক, রোগী—সকলকে গলদঘর্ম হয়ে বসে থাকতে হয়। পড়ুয়াদের হস্টেলে জেনারেটর নেই। এমন অবস্থায় কোটি টাকা খরচ করে ঘরবাড়ির কার্যত সৌন্দর্যায়নের যৌক্তিকতা কোথায়?
মেডিক্যাল কলেজের শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের ইউনিট সভাপতি সৌমব্রত মিত্র বলছেন, ‘‘আমাদের হাসাপাতালে পরিকাঠামো কোথায়, যে স্নাতকোত্তর পঠন-পাঠন হবে, উল্টে ঢেলে সাজা হচ্ছে সুপারের বাংলো!’’ যা শুনে হাসপাতালের মেডিক্যাল সুপার স্নেহপ্রিয় চৌধুরী বলছেন, ‘‘আমার বাংলোর কী সংস্কার হবে তা ঠিক করবে স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আমার কোনও হাত নেই।’’
আর, স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য? ভবতোষ বিশ্বাস সটান বলে দিচ্ছেন, ‘‘এ বিষয়ে কিছুই বলব না।’’
কে বলবেন? এখন, প্রশ্ন সেটাই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy