ত্রাণ শিবিরে কাটছে জীবন। তবু আনন্দে কচিকাঁচারা। টিংলিঙের শিবিরে রবিন রাইয়ের তোলা ছবি।
অভিজ্ঞ বাসিন্দাদের চোখে আগেই ধরা পড়েছিল—মিরিকের পাহাড় ক্রমশ ধস প্রবণ হয়ে উঠছে। উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীকে রীতিমতো চিঠিও দিয়েছিলেন তাঁরা। খবর গিয়েছিল জেলা প্রশাসনের কানেও। কিন্তু তারপরে তিন বছর কেটে গিয়েছে, কোনও কাজ হয়নি। বরং ১ জুলাইয়ের ধসে মিরিকের জনবসতির কিছু এলাকা যেন একরকম মুছেই গিয়েছে।
এ বার মিরিকের সেই বাসিন্দারা দ্বারস্থ হয়েছেন দার্জিলিঙের সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়ার। তার পরেই অহলুওয়ালিয়া এ দিন প্রশাসনের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন। তিনি বলেন, ‘‘বাসিন্দারা আগেই নির্দিষ্ট ভাবে তাঁদের আশঙ্কার কথা জানিয়েছিলেন। তারপরেও কেন রাজ্য সরকার ও প্রশাসনের তরফে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হল না, তা নিয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট পাঠাব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে।’’ তিনি বলেন, ‘‘কেন রাজ্যের পক্ষ থেকে বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হল না, তারও ব্যাখ্যা চাইতে অনুরোধ করব কেন্দ্রীয় সরকারকে।’’
এই চিঠির খবর জানাজানি হওয়ার পরে প্রশাসনের উপরে চাপ বাড়াতে শুরু করেছেন বামেরাও। শিলিগুড়ির মেয়র অশোক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ওই চিঠির প্রতিলিপি আমাকেও বাসিন্দারা দিয়েছেন। আমি চিঠিগুলো দেখে স্তম্ভিত।’’
যদিও, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলছেন, ‘‘রাজ্য সরকার প্রয়োজনীয় যা ব্যবস্থা নেওয়ার তা প্রশাসনিক ভাবে নিচ্ছে। তা নিয়ে উনি (সাংসদ) অত উদ্বিগ্ন না হলেও চলবে।’’ গৌতমবাবুর কথায়, গোটা পাহাড়ই ধস প্রবণ। সুতরাং ভাবতে হলে গোটা পাহাড় নিয়েই ভাবতে হবে।
তবে দার্জিলিং জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক অশোকবাবু বলেন, ‘‘আগে থাকতে জানা থাকায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়াই যেত। রাজ্য সরকার গুরুত্ব না দেওয়ায় এতগুলো প্রাণ চলে যাওয়া আটকানো গেল না।’’
টিংলিঙের যে বাসিন্দারা ওই চিঠিটি লিখেছিলেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন চা বাগানের কর্মী দীপেশ থাপা। এলাকার বাসিন্দাদের তরফে চিঠিতে সই করেছিলেন তিনিই। দীপেশবাবু বলেন, ‘‘২০১১ সালে লিম্বুগাঁওয়ের নীচের দিকে ধস নেমেছিল। তার আগেও ধস পড়েছিল। তবে সেটাই প্রথম বড় ধস। এরপরেই স্থানীয় চা বাগান কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ হই।’’ ওই চা বাগান কর্তৃপক্ষ প্রথমে মৌখিক ভাবে প্রশাসনকে জানায়। তারপরে লিখিত ভাবে জানায় ২০১৩ সালে। তখন মিরিকের তৎকালীন বিডিও বাসিন্দাদের আশঙ্কার কথা জেলা প্রশাসনকে জানান। দীপেশবাবুরা ওই বছরের জুলাইয়ে আলাদা একটি চিঠি লেখেন মন্ত্রী গৌতমবাবুকেও। চিঠিতে ২০১১ সালের ধসের প্রসঙ্গ তুলে জানানো হয়, নিকাশি ব্যবস্থা ঠিক না থাকায় বৃষ্টির জল পাহাড়ের ফাটলে ঢুকছে। ফলে ফাটল বড় হয়ে পাথরের ধস রোধ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে।
এখন সাংসদের কাছেও সেই চিঠি পৌঁছেছে। অহলুওয়ালিয়ার সমালোচনার মুখে পড়ে গৌতমবাবুর বক্তব্য, ‘‘রাজনীতি না করে সাংসদের উচিত কেন্দ্র থেকে আরও বেশি সাহায্য আদায় করে নিয়ে আসা। আর ধস বিধ্বস্ত এলাকা জিটিএ-র মধ্যে পড়ে। ফলে তাঁদেরও কিছু দায়িত্ব রয়েছে।’’ জেলা কংগ্রেসের সভাপতি শঙ্কর মালাকারও মন্ত্রীর পাশে দাঁড়িয়েছেন। তিনি জানান, চিঠিটি দেখেননি, তাই সে বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে পারবেন না। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিষয়ে কাউকে দোষারোপ করতে চান না, রাজ্য সরকার নিশ্চয় বিষয়টি দেখবে।
জিটিএ-র পক্ষ থেকেও বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। জিটিএ সদস্য তথা মোর্চা সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি বলেন, ‘‘আমরাও বিষয়টি নিয়ে সাংসদের সঙ্গে কথা বলব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy