Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Diesel

ডিজেলের দাম বৃদ্ধি, জলে নামেনি দশ হাজার ট্রলার

গত কয়েক মাস ধরে ডিজেলের অত্যধিক দাম বাড়ার ফলে প্রায় দশ হাজার ট্রলার ডাঙায় বসে গিয়েছে বলে অভিযোগ মৎস্যজীবীদের।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

মেহবুব কাদের চৌধুরী
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৭:০১
Share: Save:

সমুদ্রে মাছ ধরতে যায় রাজ্যের প্রায় পনেরো হাজার ট্রলার। ট্রলার চলে ডিজেলে। গত কয়েক মাস ধরে ডিজেলের অত্যধিক দাম বাড়ার ফলে প্রায় দশ হাজার ট্রলার ডাঙায় বসে গিয়েছে বলে অভিযোগ মৎস্যজীবীদের।

‘দিঘা ফিশারম্যান অ্যান্ড ফিশ ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সাধারণ সম্পাদক শ্যামসুন্দর দাসের অভিযোগ, ‘‘অনেক আশা করেছিলাম, এ বারের কেন্দ্রীয় বাজেটে সামুদ্রিক মৎস্যজীবীদের জন্য ডিজেলের দামে ভর্তুকি দেওয়ার ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। আমরা হতাশ।’’

ডিজেলে ভর্তুকি না দেওয়ার প্রতিবাদে ২২ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় রানি রাসমণি রোডে দিনভর ধর্না ও অবস্থানে বসছেন সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়া কয়েক হাজার মৎস্যজীবী। এই রাজ্যে প্রত্যক্ষ ভাবে প্রায় চার লক্ষ মানুষ সমুদ্রে মাছ ধরেন। সব মিলিয়ে প্রায় ছ'লক্ষ মানুষের পরোক্ষে রুটি রুজি এই পেশার সঙ্গে যুক্ত।

পূর্ব মেদিনীপুরের জুনপুটের ট্রলার মালিক সমরেশ তলা বলেন, "আমার পাঁচটি ট্রলার। ডিজেলের দাম বাড়ায় মাস দু’য়েক আগে সবগুলোকে বসিয়ে দিতে হয়েছে। পাঁচটি ট্রলারের প্রতিটিতে পনেরো জন করে মৎস্যজীবী কাজ করতেন। এখন ওই ৭৫ জনের সংসার চালাতে গিয়ে আমাকে ধার-দেনা করতে হচ্ছে।’’ একই অভিযোগ খেজুরির ট্রলার মালিক সুবোধ চন্দ্র কান্ডা-র। তাঁর কথায়, ‘‘ডিজেলের দাম বাড়ায় আমার সাতটি ট্রলারের মধ্যে সাতটিই গত তিন মাস ধরে জলে নামেনি।’’ একই কারণে কাঁথির রামকৃষ্ণ মান্না বা দীঘার বিবেকানন্দ বরেরাও তাঁদের ট্রলার বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছেন।

বিবেকানন্দবাবু জানিয়েছেন, এক একটি ট্রলারে ১২-১৫ জন মৎস্যজীবী থাকেন। একটানা সাত থেকে ১০ দিন ধরে তাঁরা সমুদ্রে ঘুরে মাছ ধরেন। মাসে প্রায় তিনটি ট্রিপ হয়। প্রতি ট্রিপে ডিজেল বাবদ আগে খরচ হচ্ছিল ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকার মতো। ট্রলারে মাছ সংরক্ষণ করতে বরফ লাগে ২০ হাজার টাকার। কর্মীদের বেতন বাবদ প্রতি ট্রিপে লাগে পঞ্চাশ হাজার টাকা। এ ছাড়াও মাছ ধরতে জাল, বিভিন্ন প্রকার দড়ি, কমিশন, ট্রলার চালক, রক্ষণাবেক্ষণ, মৎস্যজীবীদের খাওয়ার খরচ বাবদ আরও প্রায় ৭০ হাজার টাকার দরকার।

বিবেকানন্দবাবুর কথায়, ‘‘প্রতি ট্রিপে ডিজেল লাগে ২ হাজার লিটার। এখন ডিজেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রতি ট্রিপে অতিরিক্ত ৩০ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। যা মাছ বিক্রি হয়, তার থেকে আমাদের প্রতি ট্রিপে প্রায় ৩০ হাজার টাকা করেই লাভ থাকত। এখন সেই লাভের টাকার পুরোটাই ডিজেলের পিছনে চলে যাচ্ছে।’’

ট্রলার মালিকেরা এখনও পর্যন্ত দাঁতে দাঁত চেপে মৎস্যজীবীদের মাসিক বেতন দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু, এ রকম চলতে থাকলে, ট্রলার বসিয়ে রাখলে আগামী দিনে সেই বেতন বন্ধ হয়ে যাবে। সারা রাজ্যে মাছের সরবরাহও ভয়ানক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে। ফলে, আন্দোলনে নামছেন দুই পক্ষই। তাঁদের বক্তব্য, ডিজেলের দামে ভর্তুকি না দেওয়া পর্যন্ত তাঁদের এই আন্দোলন চলতে থাকবে।

‘কাকদ্বীপ ফিশারম্যান ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর সাধারণ সম্পাদক বিজন মাইতির কথায়, ‘‘মোট খরচের ৮০ শতাংশই ডিজেল কিনতে চলে যায়। ডিজেলের দামে ভর্তুকি চেয়ে আমরা প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় মৎস্য দফতর-সহ রাজ্য সরকারের কাছে একাধিক বার চিঠি লিখেছি। লাভ হয়নি।’’

রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ বলেন, ‘‘ডিজেলের দামে ভর্তুকি দেওয়ার সিদ্ধান্তটা কেন্দ্রীয় সরকারের। মৎস্যজীবীদের পাশে থেকে ডিজেলের দামে ভর্তুকি দিতে আমরা কেন্দ্র সরকারের কাছে আবেদন করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Diesel
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE