Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
ঘোষণা রাজ্যের

কচিকাঁচার মন বসাতে স্কুলকে খেলনা-দোলনা

উঁচু ক্লাসের ছেলেমেয়েদের জন্য সাইকেল বরাদ্দ হয়েছে আগে। প্রাথমিকের পড়ুয়াদের জন্য পোশাক-জুতোর বন্দোবস্তও মজুত। প্রাথমিকের কচিকাঁচাদের স্কুলে টানার লক্ষ্যে এ বার সরকারি বিতরণ-তালিকায় জুড়ছে দোলনা, স্লিপ আর খেলার সরঞ্জাম।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০১৬ ০৪:২১
Share: Save:

উঁচু ক্লাসের ছেলেমেয়েদের জন্য সাইকেল বরাদ্দ হয়েছে আগে। প্রাথমিকের পড়ুয়াদের জন্য পোশাক-জুতোর বন্দোবস্তও মজুত। প্রাথমিকের কচিকাঁচাদের স্কুলে টানার লক্ষ্যে এ বার সরকারি বিতরণ-তালিকায় জুড়ছে দোলনা, স্লিপ আর খেলার সরঞ্জাম।

সোমবার বিধানসভায় শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ঘোষণা করেছেন, রাজ্যের প্রাথমিক স্কুলে স্কুলে পড়ুয়াদের জন্য দোলনা, স্লিপ ও খেলার সামগ্রী জোগাবে সরকার। তবে শর্ত আছে। যে সব স্কুল নিজস্ব ফাঁকা জায়গা দেখাতে পারবে, এ সব জুটবে শুধু তাদেরই কপালে।

প্রশাসনের বড় অংশের মতে, বিধানসভা ভোটে বিরোধীদের কার্যত সাফ করে তৃণমূল যে ভাবে দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় এসেছে, তার নেপথ্যে এ হেন ‘জনপ্রিয়’ প্রকল্পগুলির ভূমিকা যথেষ্ট। জয়ের পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও জানিয়েছিলেন, এমন প্রকল্পকে তিনি এগিয়ে নিয়ে যেতে চান। সেই সূত্রেই সরকারের অন্দরে নয়া ভাবনার গোড়াপত্তন বলে নবান্নের অন্দরের ইঙ্গিত।

পাশাপাশি স্কুলছুটের হারে রাশ টানা ও পড়ুয়ার সংখ্যাবৃদ্ধির তাগিদও কাজ করছে। প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘গ্রাম হোক বা শহর, বাচ্চাদের স্কুলে আনাটা মোটেই সহজ নয়।’’ এ ক্ষেত্রে খেলনার ‘টোপ’ বিশেষ সহায়ক হতে পারে বলে ওঁদের পর্যবেক্ষণ। ‘‘খেলা বা খেলনার প্রতি বাচ্চাদের স্বাভাবিক আকর্ষণ। ওদের বেশি সংখ্যায় স্কুলমুখী করতে খেলার সরঞ্জাম সেরা অস্ত্র হতে পারে।’’ — বলছেন কর্তাটি। সরকারি এক সূত্রের দাবি, ‘‘শৈশবে খেলাধুলো মানসিক গঠনে সাহায্য করে— এই চিরন্তন সত্যটিও সিদ্ধান্ত নিতে সরকারকে সাহায্য করেছে।’’

পরিকল্পনার সমর্থনে আরও বিশদ ব্যাখ্যা পাওয়া যাচ্ছে শিক্ষা দফতর থেকে। এক শিক্ষা-কর্তার বক্তব্য: বহু পড়ুয়া প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত যেতে অনীহা বোধ করে। স্কুলের ক্ষেত্রে মূল কারণ যদি হয় সংসারের অনটন, কলেজ স্তরে সেটাই হয়ে ওঠে উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাব। এর মোকাবিলায় সরকারকে নানা ব্যবস্থা নিতে হয়। ‘‘মিড-ডে-মিল তো রয়েইছে। স্কুলের ছেলেমেয়েরা এখন পোশাক, জুতো, ব্যাগ, সাইকেল ইত্যাদি পাচ্ছে। সম্প্রতি কলেজের ভিতরে ওয়াইফাই চালুর ঘোষণা হয়েছে।’’— উদাহরণ দিচ্ছেন তিনি।

একই ভাবে খুদে পড়ুয়াদের কাছে স্কুলের আকর্ষণ বাড়াতে এ বার খেলনা-দোলনার আয়োজন। এ দিন শিক্ষামন্ত্রীর ঘোষণা, ‘‘যে সব প্রাথমিক স্কুলে জমি আছে, সেখানে সরকার দোলনা, স্লিপ ও খেলার সরঞ্জাম দেবে। মিড-ডে মিল, জামাকাপড় আগে থেকেই দেওয়া হচ্ছে।’’ খেলার সামগ্রী পেলে তার আকর্ষণে বেশি পড়ুয়া নিয়মিত স্কুলে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী। শিক্ষাবিদেরা কী বলেন? রবীন্দ্রভারতীর প্রাক্তন উপাচার্য পবিত্র সরকারের প্রতিক্রিয়া, ‘‘সরকার যা ভেবেছে, তা ভাল। সেই সঙ্গে বাচ্চাদের খেলার সময়ও কিন্তু দিতে হবে।’’ বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য আনন্দদেব মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দোলনা খুব গুরুত্বপূর্ণ নয়। অন্য অনেক খেলার জিনিস আছে। তবে সার্বিক ভাবে খেলার সরঞ্জাম জোগানো খুবই ভাল উদ্যোগ।’’ তবে অনেক স্কুলে যে খেলার জায়গা নেই, আনন্দদেববাবু তা মনে করিয়ে দিয়েছেন। ঘটনা হল, ফাঁকা জায়গার অভাবের কথাই ঘুরে-ফিরে শোনা যাচ্ছে। যার সূত্র ধরে উঠে আসছে উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্যসাধন সম্পর্কে সংশয়ও। ‘‘শহরের সিংহভাগ প্রাইমারি স্কুলে ক্লাসরুমের বাইরে বিশেষ ফাঁকা জায়গা নেই! ক’টা স্কুল এ সব পাবে?’’— প্রশ্ন তুলছেন কেউ কেউ। কারও প্রশ্ন, ‘‘পড়াশোনার চাপে বাচ্চাদের খেলার সময়ই মেলে না! শেষে এমন হবে তো যে, সরঞ্জাম এল অথচ খেলার অভ্যেস তৈরি হল না?’’ প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ অমল মুখোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘‘অধিকাংশ স্কুলে উপযুক্ত শৌচাগার, খেলার মাঠ নেই। দোলনা যে দেবেন, টাঙানো হবে কোথায়?’’

সরকারি তরফে স্পষ্ট সমাধান-সূত্র এখনও নেই। এক শিক্ষাকর্তা জানিয়েছেন, খেলাধুলোর সরঞ্জামের সঙ্গে জমি বা ফাঁকা জায়গার ব্যবস্থাও করে দেওয়া সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়। স্কুলকেই তা জোগাড় করতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE