Advertisement
E-Paper

‘আমার ভাই, আমায় ফিরিয়ে দাও’, আর্জি রোহিঙ্গা যুবার

মাঝখানে দু’টো কোল্যাপসিবল গেটের আড়াল। তিন বছর বাদে ভাইয়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে দাদা। 

মহম্মদ এরশাদ। —নিজস্ব চিত্র।

মহম্মদ এরশাদ। —নিজস্ব চিত্র।

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০১৮ ০৩:২৩
Share
Save

মাঝখানে দু’টো কোল্যাপসিবল গেটের আড়াল। তিন বছর বাদে ভাইয়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে দাদা।

কয়েক মুহূর্ত! চোখ ফেটে জল আসে ৩৪ বছরের রোগাটে যুবকের। রপ্ত করা হিন্দি ভুলে মাতৃভাষা বলে ফেলেন রোহিঙ্গা যুবা মহম্মদ এরশাদ। ‘‘আঁরো বাই, আঁরে দি ফেলো।’’ (আমার ভাই, আমায় ফিরিয়ে দাও।) মা, বাবা, ছ’ভাই, দু’বোন বছরখানেক ধরে বাংলাদেশের কক্সবাজারের কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে। মায়ানমারে সেনা, পুলিশের অত্যাচার সইতে না পেরে চলে এসেছেন তাঁরা। আর আট মাস আগে এ দেশে এসেছেন সবার বড় এরশাদ। তার পরে দিল্লি থেকে রাষ্ট্রপুঞ্জের উদ্বাস্তু পরিচয়পত্র জোগাড় করে লড়াই শুরু নামমাত্র শিক্ষিত যুবকের। ছোট ভাই, ১৭ বছরের মহম্মদ জুবের যে হাওড়ার বাগনানে একটি হোমে ‘বন্দি’।

মেরঠে মোবাইল টাওয়ার বসানোর দিনমজুরিতে পেট চলছে এরশাদের। ভাইকে উদ্ধারে মাসে-মাসে আসতে হয় কলকাতায়। হাওড়া ময়দানের মসজিদ-চত্বরে রাতভর পড়ে থাকেন এরশাদ! ছোটাছুটি চলে বাগনানের হোম, কলকাতা, হাওড়ার সমাজকল্যাণ দফতর, উকিলের চেম্বার বা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার অফিসে!

আরও পড়ুন: মেয়েগুলো কে? মত্তদের মার দাদাকে

বাগনানের হোম কর্তৃপক্ষ স্বরাষ্ট্র দফতরের নির্দেশ দেখান— রোহিঙ্গাদের ছাড়া যাবে না, তাঁদের মায়ানমারে ফেরাবে দিল্লি। এর বিরুদ্ধেই মামলা গড়িয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। অন্যতম আবেদনকারী পশ্চিমবঙ্গের শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশন। চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘রাষ্ট্রপুঞ্জের শর্ত অনুযায়ী, কোনও শিশুকে বিপদের মুখে ফেলা যায় না। জুভেনাইল জাস্টিস অ্যাক্ট অনুযায়ীও, উদ্বাস্তু এই শিশুদের সুরক্ষায় সরকার দায়বদ্ধ।’’ কিন্তু পশ্চিমবঙ্গেই বিভিন্ন হোমে জনা ২৯ রোহিঙ্গা নাবালক আটক। দমদম জেলেও আছে আরও ১৭টি শিশু, মায়ের সঙ্গে। হাওড়া, মুর্শিদাবাদ, পশ্চিম মেদিনীপুর, মালদহের হোমে খুদেদের দেশ, পরিবার— নেই কিছুই। আইনজ্ঞদের মতে, শিশু অধিকার রক্ষা আইনে, এই নাবালকদের পরিবারের কাছে তুলে দেওয়ায় বাধা নেই। উদ্বিগ্ন স্বরাষ্ট্র সচিব অত্রি ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘দেখছি কী করা যায়।’’ এরশাদের সমস্যাটি তাঁর কানেও পৌঁছেছে।

ভাইকে নিয়ে এরশাদ অবশ্য মায়ানমারে ফেরার কথা ভাবতেই পারেন না। রাখাইন প্রদেশের মংডু উপনগরীর কাছে বাদৌলা গ্রামে বাড়ি, জমিজমা ছিল তাদের। জন্মভূমিতেও পুলিশের হুমকি নিত্যসঙ্গী বরাবরই। তিন বছর আগে জুবের মামাবাড়ি গিয়েছিল। তখনই পুলিশ পরিবারের সবার নাম নথিভুক্ত করতে আসে। জুবের বাড়ি না-থাকায়, তার অস্তিত্ব অস্বীকার করে পুলিশ। ভয় পেয়ে জুবেরকে ভারতের হায়দরাবাদে কয়েক জন পরিচিত রোহিঙ্গার আশ্রয়ে পাঠায় পরিবার। বছর দুয়েক আগে বাড়ির জন্য মন কেমন করায় পশ্চিমবঙ্গ, বাংলাদেশ হয়ে ফেরার কথা ভাবে সে। এর পরই হাওড়ায় রেলপুলিশের হাতে ধরা পড়ে। গতি হয় হোমে। পরে তা জানতে পারে পরিবার।

হোমে চটের কাজ, চুল কাটায় হাত পাকিয়েছে জুবের। ফিরতে চায় পরিবারের কাছে। এরশাদ বলেন, ‘‘মা-বাবা আমার পথ চেয়ে। আর হোমে গেটের ও-পারে ভাইটার সামনে দাঁড়ালে পাগল-পাগল লাগে!’’ জন্মভূমিতে অত্যাচারের রোজনামচা, আর এ দেশে ভাইয়ের জন্য দোরে-দোরে হা-হুতাশ—এর মাঝে মানুষের মতো জীবনের স্বাদটা এখনও অজানা দেশহীন যুবকের কাছে।

Rohingya রোহিঙ্গা

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}