যে কোনও সমস্যায় ডাকলেই পাশে পাওয়ার আশ্বাস মেলে হরদম। কিন্তু মাইনে থেকে টাকা কেটে নেওয়ার মতো ব্যাপারে শিক্ষক সংগঠনগুলির তরফে তেমন সাড়াশব্দ নেই কেন? চুপ কেন নেতা-নেত্রীরাও? আপাতত এই প্রশ্নই হাতড়ে বেড়াচ্ছেন শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একটা বড় অংশ।
শিক্ষকদের বেতন থেকে বাড়িভাড়া বাবদ প্রাপ্য অর্থ কেটে নেওয়া হচ্ছে গত বেশ কয়েক মাস ধরে। এ নিয়ে আপত্তি রয়েছে খোদ শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের। কিন্তু তার পরেও অনেক স্কুল-কলেজেই এই টাকা কাটা হচ্ছে বলে অভিযোগ আসছে ভূরি ভূরি।
এ নিয়ে মামলাও দায়ের হয়েছে। এমনকী বিষয়টি নিয়ে অতিরিক্ত তৎপরতার অভিযোগে দায়িত্ব থেকে সরানো পর্যন্ত হয়েছে উচ্চশিক্ষা দফতরের এক কর্তাকে। তবু পরিস্থিতি বদলায়নি।
এই অবস্থাতেই প্রশ্নের মুখে পড়েছে শিক্ষক সংগঠনগুলির ভূমিকা। পাওনাগন্ডার বিষয়ে যারা নানা রকম দাবি তুলে বারবার সরকারের উপরে চাপ তৈরি করে, সেই শিক্ষক সংগঠনগুলি এ ব্যাপারে নীরব কেন, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়ে। কেউ স্মারকলিপি দিয়েই কাজ সেরেছে, কারও বা দাবি, ভুক্তভোগী শিক্ষকেরা তাদের কাছে সাহায্য চাইলেই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া হবে! আবার কোনও কোনও সংগঠনের নেতার যুক্তি, এখনও সে ভাবে বিষয়টি সামনে আসেনি, তাই এ সব নিয়ে মাথা ঘামানো হচ্ছে না। কিন্তু আচমকা বেতন থেকে একটা বড় অংশ কাটা পড়ায় যে শিক্ষক-শিক্ষিকারা সমস্যায় পড়েছেন, তাঁদের স্বার্থ সুরক্ষিত রাখার দায় কি সংগঠনগুলির নেই? এ প্রশ্নের সদুত্তর নেই কারও কাছেই।
২০১২ সালে অর্থ দফতরের একটি বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, কোনও শিক্ষকের স্বামী বা স্ত্রী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করলেও বাড়িভাড়া বাবদ দু’জনে মিলিত ভাবে ছ’হাজার টাকার বেশি পাবেন না। এর ভিত্তিতেই বেশ কিছু স্কুল ও কলেজ শিক্ষকের বেতনে আচমকা কোপ পড়ছে।
বিষয়টি নিয়ে সে ভাবে আন্দোলন হচ্ছে না কেন? পশ্চিমবঙ্গ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (ওয়েবকুটা) জানিয়েছে, ইতিমধ্যেই এর বিরোধিতায় স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে উচ্চশিক্ষা দফতরে। এ ছাড়া, চলতি মাসের শেষে বিকাশ ভবন অভিযানের পরিকল্পনাও আছে তাদের। কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছু হবে কি?
সংগঠনের সহ-সভাপতি তরুণ পাত্র বলেন, ‘‘সংগঠনের পক্ষ থেকে মামলা করার কথাও ভাবা হচ্ছে।’’ এখনও তা করা হয়নি কেন? তার জবাব নেই নেতাদের গলায়। শিক্ষকরাও কারণটা বুঝে উঠতে পারছেন না।
ওয়েবকুটা যেটুকু করছে, শাসক দলের শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুপা সেটুকুও করছে না। সংগঠনের সভানেত্রী কৃষ্ণকলি বসু আগেই জানিয়েছিলেন, বাড়িভাড়া বাবদ বেতন কাটার বিষয়টি আপাতত স্থগিত রাখা হবে বলে জানিয়েছেন উচ্চশিক্ষা দফতরের এক কর্তা। কোথাও এমনটা হয়ে থাকলে সে খবর দফতরের কর্তাদের কানে পৌঁছলে টাকা ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি মিলেছে বলেও কৃষ্ণকলিদেবীর দাবি। শনিবার তিনি বলেন, ‘‘আমি তো বারবার বলছি, যদি কোথাও টাকা কাটা হয়ে থাকে, তা হলে সেই শিক্ষক আমার সঙ্গে যোগাযোগ করুন। আমি তাঁর টাকা ফেরত পেতে সাহায্য করব। কারণ, দফতরের কর্তারাই বিষয়টি আপাতত স্থগিত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।’’
কৃষ্ণকলিদেবী যা-ই বলুন, অনেক শিক্ষক-শিক্ষিকাই দুম করে কোনও সংগঠনের কাছে যেতে অস্বস্তি বোধ করেন। এক শিক্ষিকার কথায়, ‘‘সংগঠনগুলি কোনও না কোনও রাজনৈতিক দলের ধামাধরা। তাই একটা সঙ্কোচ কাজ করে। তা ছাড়া, যাঁরা সংগঠন করছেন, তাঁদের তো নিজে থেকেই এগিয়ে আসা উচিত।’’
কিন্তু ঘটনা হল, কোনও সংগঠনই বিষয়টি নিয়ে সে ভাবে জোরকদমে আন্দোলনে যাচ্ছে না এখনই। স্কুল শিক্ষকদের সংগঠন এবিটিএ-র অন্যতম নেতা মৃণ্ময় রায় জানান, যেহেতু বিষয়টি এখনও কয়েকটি স্কুলেই সীমাবদ্ধ, তাই বড়সড় আন্দোলনের পথে যাননি তাঁরা। মৃন্ময়বাবুর কথায়, ‘‘কলকাতার জেলা স্কুল পরিদর্শক (ডিআই)-এর কাছে এ নিয়ে স্মারকলিপি দিয়েছি।’’ পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি দিব্যেন্দু মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘কিছু কিছু স্কুলে এমনটা হচ্ছে বলে শুনেছি। কিন্তু আমাদের কাছে কোনও শিক্ষক সমস্যার কথা জানাননি। তাই এ নিয়ে আর কিছু করা হচ্ছে না।’’
কলকাতার ডিআই দেবজ্যোতি বড়াল জানিয়েছেন, বাড়িভাড়া বাবদ বেতন কাটা হচ্ছে সরকারেরই নির্দেশে। তাঁর কথায়, ‘‘২০১২ সালের ফিনান্সের বিজ্ঞপ্তির ভিত্তিতে ২০১৩-য় একটি নির্দেশিকা জারি করে স্কুলশিক্ষা দফতর। সেই নির্দেশিকার ভিত্তিতেই বাড়িভাড়া বাবদ বেতন কাটা হচ্ছে।’’
শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বরাবরই এ ভাবে টাকা কেটে নেওয়ার বিরোধী। ওই নির্দেশিকাও তিনি দফতরে আসার আগেই জারি হয়েছিল। পার্থবাবু জানিয়েছেন, এ নিয়ে মামলা চলছে। আইনজ্ঞের পরামর্শ নিয়েই এ ব্যাপারে এগোবে শিক্ষা দফতর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy