টোপ: বাঘ ধরতে খাঁচায় বন্দি জ্যান্ত ছাগল। বসল ফাঁদ। শনিবার মেলখেরিয়ার জঙ্গলে। ছবি: বন দফতরের সৌজন্যে
মোরাম রাস্তায় গাড়ির ভিড়। বনপথে সাংবাদিক, আলোকচিত্রীদের আনাগোনা। আর ঝরা পাতার জঙ্গলে বুটের শব্দ।
আট-ন’ বছর আগের সেই চেনা ছবি ফিরল লালগড়ে। ফিরল হানাদারের ভয়ও। তবে এ বার আর ইনসাস হাতে জংলা পোশাক পরা হানাদার নয়, এ হানাদার ডোরাকাটা।
মাওবাদী পর্বে শিরোনামে থাকা লালগড় ফের সংবাদপত্রের প্রথম পাতায় উঠে এসেছে এক বাঘের সৌজন্যে। শুক্রবার বন দফতরের ট্র্যাপ-ক্যামেরায় বন্দি সেই বাঘের ছবি প্রকাশ্যে আসতেই বুক ঢিপঢিপ দশা লালগড়ের মেলখেরিয়া, মধুপুর, কুমারবাঁধ, ছোটপেলিয়া, আমলিয়ার মতো জঙ্গল লাগোয়া গ্রামগুলির বাসিন্দাদের। ঠিক যেমনটি হতো, কিষেনজি-বিকাশদের দাপটের আমলে।
শনিবার দিনভর অবশ্য মেলখেরিয়ার জঙ্গলে ক্যামেরা-বন্দি বাঘের আর কোনও খবর মেলেনি। তাকে ধরতে ছাগলের টোপ দিয়ে খাঁচা পাতা হয়েছে। এ দিন সকালেই দু’টি ফাঁদ-খাঁচা (ট্র্যাপ কেজ) ও একটি ট্রান্সলোকেশন কেজ (বাঘ ধরা পড়লে এই খাঁচায় নিয়ে যাওয়া হবে) নিয়ে লালগড়ে পৌঁছন সুন্দরবন থেকে আসা বনকর্মীরা। ডিএফও (মেদিনীপুর) রবীন্দ্রনাথ সাহার নেতৃত্বে কালিয়ারবাঁধ ও মধুপুরের জঙ্গলে জ্যান্ত ছাগল বেঁধে দু’টো খাঁচা বসাতে দুপুর গড়িয়ে যায়। পরে পরিদর্শনে আসেন রাজ্যের মুখ্য বনপাল (পশ্চিম চক্র) শক্তিশঙ্কর দে। বাঘকে আকর্ষণ করতে কিছু জৈব তরলও ছড়ানো হয় খাঁচার আশপাশে। সন্ধ্যায় জঙ্গল এলাকায় বিশেষ গাড়িতে (রেট্রো ভেহিকেল) বনকর্মীদের টহলও শুরু হয়েছে। রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) রবিকান্ত সিংহ বলেন, ‘‘খাঁচা পাতা হয়েছে। তবে শুক্রবার রাত থেকে ওই এলাকায় বাঘের উপস্থিতির নতুন করে কোনও প্রমাণ মেলেনি।’’ একই জঙ্গলে হাতি থাকায় জোড়া উদ্বেগে রয়েছেন বনকর্তারা।
আপাতত লালগড় বিট অফিসই ঠিকানা মেদিনীপুরের ডিএফও রবীন্দ্রনাথ সাহার। তিনি বলেন, “বাঘটিকে নিরাপদে বন্দি করতে সব ব্যবস্থা হয়েছে। ঝাড়গ্রাম জেলা পুলিশ সহযোগিতা করছে। গ্রামবাসীর সহযোগিতা চেয়েছি। বলেছি, ক’টা দিন সন্ধের পরে বেরোবেন না।”
সূর্য ডুবলেই দোরে খিল এঁটে আতঙ্কের প্রহর বহু গুনেছে লালগড়। মাওবাদী নাশকতার সেই বছরগুলোতে দিনেও লোকজন জঙ্গল এড়িয়ে চলতেন। হাতির উপদ্রবও কম সইতে হয় না জঙ্গলবাসীদের। কিন্তু বাঘের ভয় যে বড় ভয়! শনিবার দুপুরে ঝিটকা বড় ক্যানালের কাছে দেখা গেল জটলা। লালগড় ব্লক যুব তৃণমূলের নেতা শ্যামল মাহাতোও দলে ছিলেন। এক সময় জনগণের কমিটির আন্দোলনের মুখ ছত্রধর মাহাতোর সহযোগী শ্যামল মানছেন, “বাঘের জন্য লালগড় আবার গমগম করছে। ভয়ও রয়েছে।”
বীরকাঁড় গ্রামের বিশ্বজিৎ মাহাতো, চাঁদাবিলার শ্যামাপদ আহিররা আবার টাঙি হাতে পথে নেমেছেন। বিশ্বজিৎ বলছিলেন, “হাতি নিয়ে বারোমাস ঘর করি। তবে বাঘের মোকাবিলা তো করিনি। তাই ভয়ে আছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy