Advertisement
০৪ মে ২০২৪

মর্যাদার লড়াই আর ‘পানি কেস’

এ বড় শক্ত ঠাঁই, জানে দুই শিবিরই। দু’পক্ষের কাছেই কার্যত মর্যাদার লড়াই ডোমকল। পেশিশক্তি দেখানোর লড়াইও হয়তো বা।শাসক দল তৃণমূলের মরণপণ জেদ, যে ভাবেই হোক, ডোমকলের দুর্গ দখল করতেই হবে।

সুজাউদ্দিন
ডোমকল শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৭ ০৩:৫৭
Share: Save:

এ বড় শক্ত ঠাঁই, জানে দুই শিবিরই। দু’পক্ষের কাছেই কার্যত মর্যাদার লড়াই ডোমকল। পেশিশক্তি দেখানোর লড়াইও হয়তো বা।

শাসক দল তৃণমূলের মরণপণ জেদ, যে ভাবেই হোক, ডোমকলের দুর্গ দখল করতেই হবে। তার জন্য ফিরহাদ হাকিম থেকে অনুব্রত মণ্ডল, একের পর এক নামী নেতাকে নিয়ে গিয়ে টানা সভা করানো হয়েছে। মাটি কামড়ে পড়ে আছেন দলের মুর্শিদাবাদ জেলা পর্যবেক্ষক শুভেন্দু অধিকারী, তরুণ নেত্রী মহুয়া মৈত্রেরা।

উল্টো দিকে জোট গড়ে দুর্গরক্ষায় নেমেছে বাম-কংগ্রেস। দলবদলের ধাক্কায় নিজের গড় বহরমপুর-সহ সাতটি পুরসভা ইতিমধ্যে তৃণমূলের কাছে খুইয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী। এখন ডোমকল তিনি কোনও ভাবেই হারাতে চান না। তাই গত বিধানসভা ভোটে যে ডোমকলে তিনি বামেদের সঙ্গে জোটে যেতে চাননি, এ বার সেই রাস্তাই ধরেছেন।

বিধানসভা ভোটে জোট না হলেও সকালে এক সিপিএম কর্মী খুন হতেই কার্যত তলায়-তলায় সমঝোতা হয়ে গিয়েছিল বাম-কংগ্রেসের। সিপিএম প্রার্থী আনিসুর রহমানের বাক্সে গিয়ে পড়ে কংগ্রেসের একটা বড় অংশের ভোট। তৃণমূলের সৌমিক হোসেনকে হাজার ছয়েক ভোটে হারিয়ে জিতে যান আনিসুর। এ বার হাত ধরাধরিটা প্রকাশ্যে, কিন্তু গত এক বছরে বেশ কিছু এলাকায় কংগ্রেসের ঘরে ধস নামিয়েছে তৃণমূল। এবং তার মধ্যে ডোমকলের তিনটি এলাকাও আছে।

চারটি পঞ্চায়েত এলাকা জুড়ে গড়া ডোমকল পুরসভা এ বারই প্রথম ভোটে যাচ্ছে। ২০১৩-র পঞ্চায়েত নির্বাচনে ওই চার এলাকায় তৃণমূল শুধু তৃতীয় স্থানে নয়, ভোটের অঙ্কে অনেকটাই পিছিয়ে ছিল বাম ও কংগ্রেসের থেকে। কিন্তু বিধানসভা ভোটে তারা দু’নম্বরে চলে আসে। চার এলাকাতেই এগিয়ে ছিল সিপিএম। কিন্তু গত এক বছরে কংগ্রেসের সদস্য ছিনিয়ে জিতপুর ও আজিমগঞ্জ গোলা পঞ্চায়েতের দখল নিয়েছে শাসকদল। ডোমকল পঞ্চায়েতে ডামাডোল। শুধু জুগিন্দা পঞ্চায়েত এখনও শক্ত হাতে ধরে রেখেছে সিপিএম। এই দলবদল যদি শুধু নেতাদেরই না হয়ে থাকে, তবে কংগ্রেস-সিপিএম ভোট যোগ হলেও টক্কর হবে সমানে-সমানে। এর মধ্যে নেমে বিজেপি যদি জোটের ভোট কাটে, তবে বাড়তি সুবিধা পেয়ে যেতে পারে তৃণমূল।

কিন্তু, ভোটের পাটিগণিত নয়, জোট শিবিরকে বরং বেশি ভাবাচ্ছে সন্ত্রাসের আশঙ্কা। দীর্ঘদিন ধরেই রাজনৈতিক খুনোখুনির জন্য কুখ্যাত বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা ডোমকল। ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটের দিন ১৪টা লাশ পড়েছিল। এমনকী গত বিধানসভা নির্বাচনে ভোটের দিন খুন হয় গোটা রাজ্যে এক মাত্র ডোমকলে। এ বার সৌমিক যেখানে দাঁড়িয়েছেন, সেই ৫ নম্বর ওয়ার্ডে বিরোধীদের কোনও দেওয়াল লিখন নেই। পতাকা বা ফেস্টুন লাগালেও ছিঁড়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।

মিথ্যা মামলা সাজিয়ে পুলিশও শাসকদলের সন্ত্রাসে মদত দিচ্ছে বলে অভিযোগ। ডোমকলের অলিগলিতে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে ‘পানি কেস’-এর কথা। সীমান্তে দেদার গাঁজা কিংবা কাশির সিরাপ পাচারের কারবার রুখতে নারকোটিক্স-ড্রাগস সাইকোট্রপিক সাবস্ট্যানসেস অ্যাক্টে মামলা দেয় পুলিশ। চলতি কথায়, সেটাই ‘পানি কেস’। বিরোধীদের মিটিং-মিছিলে গেলেই পুলিশ নাকি সেই পানি-কেস দিয়ে দেবে বলে শাসাচ্ছে, অনুযোগ বিরোধীদের।

পুলিশ অবশ্য এ সব কথা হেসেই উড়িয়ে দিচ্ছে, উড়িয়ে দিচ্ছেন তৃণমূল নেতারাও। আর দু’পক্ষই তাল ঠুকছে — ভোট যদি ঠিকঠাক হয়, আমাদের ঠেকায় কে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Municipality election TMC CPIM Congress
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE