Advertisement
E-Paper

গণপিটুনির ভয়ে ফেরিওয়ালা হয়ে যাচ্ছেন দিনমজুর!

গত কয়েকদিনে পরপর দু’বার ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে এলাকায়। এক বার অল্পের জন্য জনতার রোষের হাত থেকে বেঁচে গিয়েছেন অসমের এক যুবক। পুলিশ সচেতনতা প্রচার চালালেও আতঙ্ক, সন্দেহের পরিবেশ কাটেনি এলাকায়।

অর্ণব সাহা

শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৮ ০৪:৫৬
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

গুজব-আতঙ্ক গ্রাস করেছে এলাকাকে। কোথাও ছেলেধরার ভয়ে স্কুল ফাঁকা, কোথাও গণপিটুনির আতঙ্কে ফেরিওয়ালা বাধ্য হয়েছেন দিনমজুরি করতে।

আতঙ্কের এই ছবি জলপাইগুড়ির ধূপগুড়ির। গত কয়েকদিনে পরপর দু’বার ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে এলাকায়। এক বার অল্পের জন্য জনতার রোষের হাত থেকে বেঁচে গিয়েছেন অসমের এক যুবক। পুলিশ সচেতনতা প্রচার চালালেও আতঙ্ক, সন্দেহের পরিবেশ কাটেনি এলাকায়।

ডাউকিমারি বাজারের কাছেই বাশোয়ার ডাঙা শিশুশিক্ষা কেন্দ্র। এই শিশু শিক্ষাকেন্দ্রেই ছাত্র সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। ইদানীং ছেলেধরার গুজবে স্কুলে জনা সাতেকের বেশি পড়ুয়াই হচ্ছে না। এক শিক্ষিকা ক্লাস নিলে বসে রয়েছেন বাকি দুই শিক্ষিকা। তাঁদেরই একজন, গোপী সরকার বললেন, ‘‘ছেলেমেয়েরা স্কুলে আসতে চাইলেও মা বাবারা পাঠাচ্ছেন না। এ সব যে স্রেফ গুজব, তা কয়েক জনকে বুঝিয়েছি। কাজ হয়নি।’’

স্কুলের গেটের মুখেই ছোট্ট মুদি দোকান জগৎ রায়ের। এলাকার পুরোনো বাসিন্দা জগৎবাবু বলেন, ‘‘দু’দিন আগেও সকাল হতে না হতেই ফেরিওয়ালাদের হাঁকডাকে কান ঝালাপালা হয়ে যেত। স্কুলের সামনে আমসত্ত্ব, কুলফি এনে হাঁক দিতেন। আর অমনি ছেলেমেয়েরা ক্লাস ফেলে দৌড়ে বেরিয়ে আসত। এখন তো ফেরিওয়ালা দেখলেই ছেলেধরা বলে মারধর! ভয়ে আর কেউ গ্রামে ঢুকছে না।’’

আরও পড়ুন: ‘এ ভাবে প্রাণটা চলে গেল?’, ডুকরে উঠলেন মনীষার মা

সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট গণপিটুনি ঠেকাতে পৃথক আইন আনা ও গণপিটুনিকে পৃথক অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করার কথা বলেছে। সেই গণপিটুনি-আতঙ্কে পেশা বদলে ফেলেছেন ডাউকিমারির বাসিন্দা রতন সরকার। আগে গ্রামে গ্রামে গামছা ফেরি করতেন তিনি। এখন অন্যের জমিতে দিনমজুরি করছেন। রতনবাবুর জানান, গত সোমবার ডাউকিমারি হাইস্কুলের সামনে চার মহিলাকে মারধর করা হয়। তাঁর কথায়, ‘‘চোখের সামনে যে ভাবে ওই মহিলারা মার খেলেন তাতে বুকে কাঁপুনি ধরে গিয়েছিল। গ্রামগঞ্জের যা অবস্থা, তাতে ফেরিওয়ালা দেখলেই ছেলেধরা ভেবে লোক হইহই করে তেড়ে আসছে। প্রাণের ভয়ে গামছা ফেরি করা ছেড়ে দিয়েছি।’’

এক মানসিক ভারসাম্যহীন মহিলাও গণপিটুনির শিকার হন ধূপগুড়িয়া বারোঘড়িয়ায়। সেখানেও পরিস্থিতি থমথমে। ওই গ্রামের বাসিন্দা সুশীল বৈদ্য বলেন, ‘‘ফেরিওয়ালার কথা ছাড়ুন। ছেলেধরার গুজবে যে মারধরের ঘটনা ঘটছে তাতে ভিখিরিরাও ভিক্ষা করা ছেড়ে দিয়েছেন। অপরিচিত লোক দেখলেই এলাকায় গুঞ্জন শুরু হচ্ছে। সন্ধ্যা সাতটা বাজতে বাজতে দোকানপাট বন্ধ হয়ে বাজার ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে।’’

গাদং ২ পঞ্চায়েতের পশ্চিম শালবাড়িতে অল্পের জন্য গণপিটুনির হাত থেকে বেঁচে যান অসমের এক যুবক। তবে আতঙ্ক কাটেনি। এলাকার বাসিন্দা মনজুর আলম বলছেন, ‘‘জটেশ্বরে বোনের বাড়ি। প্রায় পাঁচ বছর যাই না। ভেবেছিলাম এক দিন যাব। কিন্তু অচেনা কাউকে দেখলেই গ্রামবাসীরা যে ভাবে সন্দেহ করছেন, তাতে সাহস পাচ্ছি না।’’

পুলিশ অবশ্য দাবি করছে, আগের থেকে অনেক সচেতন হয়েছেন মানুষ। ধূপগুড়ি থানার আইসি সঞ্জয় দত্ত বলেন, ‘‘গ্রামে গ্রামে মাইকে প্রচার হচ্ছে। ছেলেধরার গুজব নিয়ে এখন অনেকেই সতর্ক হয়েছেন। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি পাল্টাবে।’’

Police গণপিটুনি Lynch
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy