Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

রূপার সভা স্বস্তি দিল বিজেপিকে

রাজ্য সভাপতির সভায় লোক জড়ো করতে না পেরে মনোবলে চিড় ধরেছিল বিজেপি কর্মীদের। এর ক’দিন পরেই শনিবার বাঁকুড়ায় অভিনেত্রী তথা বেজেপি নেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের সভায় তুমুল ভিড় বিজেপি নেতাদের স্বস্তি এনে দিল।

সবার মাঝে। শনিবার বাঁকুড়া শহরের তামলিবাঁধে বিজেপির সভায় রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। ছবি: অভিজিৎ সিংহ।

সবার মাঝে। শনিবার বাঁকুড়া শহরের তামলিবাঁধে বিজেপির সভায় রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। ছবি: অভিজিৎ সিংহ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০১৬ ০০:৩৫
Share: Save:

রাজ্য সভাপতির সভায় লোক জড়ো করতে না পেরে মনোবলে চিড় ধরেছিল বিজেপি কর্মীদের। এর ক’দিন পরেই শনিবার বাঁকুড়ায় অভিনেত্রী তথা বেজেপি নেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের সভায় তুমুল ভিড় বিজেপি নেতাদের স্বস্তি এনে দিল। যদিও সেই ভিড়ে বিজেপি সমর্থক ক’জন আর অভিনেত্রীকে দেখতে ক’জন এসেছিলেন, তা নিয়ে সংশয় রইল।

বৃহস্পতিবার ছাতনার কামারকুলি মোড়ে পথসভা করতে এসেছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। সেই সভায় মেরেকেটে শ’দেড়েক লোক হয়েছিল। এর পরে বিজেপির জনভিত্তি নিয়েই প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল জেলা জুড়ে। বিজেপি নেতাদের একাংশ ওই দিন খারাপ আবহাওয়াকেই কারণ হিসেবে দেখান। তবে দলের অভ্যন্তরেই অনেকে জানিয়েছিলেন, নতুন জেলা সভাপতিকে ঘিরে দ্বন্দ্বে ওই সভায় তেমন ভিড় হয়নি।

বিজেপি সূত্রের খবর, রূপার সভায় তাই ভাল দেখানো রীতিমতো চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলেন জেলা নেতৃত্ব। দলের বাঁকুড়া বিভাগের সম্পাদক শ্যামাপদ মণ্ডল আগেই দাবি করেছিলেন সভায় ঠাসা ভিড় হবে। হলও তাই। পুলিশের হিসেবেই তামলিবাঁধ মোড়ে এ দিনের সভায় ভিড় ছিল দু’হাজারের বেশি। আর দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সুভাষ সরকারের দাবি, ‘‘১০ হাজার মানুষ এসেছিলেন।’’

যদিও এই ভিড়ের অনেকটাই ছিল বাঁকুড়া শহরের বাইরের আশপাশের ব্লকের লোকজনের ভিড়। আবার শহরের অনেকেই দেখতে এসেছিলেন রূপালী পর্দার অভিনেত্রী ‘রূপা’-কে। খাস বিজেপি নেতারাও তাঁর অভিনেত্রী ইমেজকে অনেকটাই ভাঙিয়েছেন। মাইকে একাধিকবার তাঁর নামের আগে ‘মহাভারত সিরিয়ালের দ্রৌপদী’ বলে প্রচার করেছেন। শহরের বহু পথচলতি মানুষও সেই ‘নায়িকা’ দেখার জন্য দাঁড়িয়ে ভিড় জমিয়েছেন সভায়।

তবে মঞ্চে বক্তব্য রাখতে গিয়ে যখনই রাজ্য নেতা সুভাষবাবু বা রূপাদেবী রাজ্য সরকারকে কটাক্ষে বিদ্ধ করেছেন হাততালি দিয়ে স্বাগত জানিয়েছেন উপস্থিত দর্শক। সেই হাততালি দেখিয়েই জেলা নেতাদের দাবি, তাঁদের দলের সমর্থকেরাই এসেছিলেন নেত্রী রূপার বক্তব্য শুনতে।

তবে ভিড় জমিয়ে বিজেপির সম্মান কিছুটা পুনরুদ্ধার হলেও দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কাঁটা অবশ্য রয়েই গেল। এ দিনের সভাতেও দলের বিক্ষুব্ধ নেতা প্রাক্তন জেলা সহ-সভাপতি জীবন চক্রবর্তী ও প্রাক্তন মুখপাত্র অজয় ঘটকদের দেখা যায়নি। রাজ্যে রাহুল সিংহকে সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে সম্প্রতি ওই পদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দিলীপ ঘোষকে। আর তার পর থেকেই বিভিন্ন জেলায় রাহুলবাবুর অনুগামী জেলা সভাপতিদের সরিয়ে নতুন মুখ নিয়ে আসা হয়। এই জেলাতেও সভাপতির পদ থেকে জয়ন্ত মণ্ডলকে সরিয়ে ওই পদ দেওয়া হয় আরএসএস প্রভাবিত ছাত্র সংগঠন এবিভিপি-র বাঁকুড়ার বিভাগ প্রমুখ পার্থসারথি কুণ্ডুকে। এর প্রতিবাদে সভাপতি পরিবর্তনের দাবি তোলেন জীবনবাবু, অজয়বাবুরা। দল অবশ্য সেই দাবি নাকচ করে দিয়েছে। উল্টে দলের জেলা কমিটি থেকেই ওই দুই নেতাকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর থেকেই দলীয় কর্মসূচিতে দেখা যাচ্ছে না তাঁদের।

এ দিনও তাঁরা আসেননি। সভা শেষে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়ে প্রশ্ন করা হলে রূপাদেবী বলেন, “হাতের সব আঙুল সমান হয় না। মতানৈক্য থাকতেই পারে। তবে তা দ্বন্দ্বের জায়গায় পৌঁছয়নি। যাঁরা দল ভালবাসেন তাঁরা ঠিক আসবেন।” এ দিন নিজের বক্তব্যে রূপাদেবী বলেন, “রাজ্যে সাইকেল বিলি করতে যে টাকা ব্যয় করা হচ্ছে সেই টাকায় চারটি বড় শিল্প গড়া যেতে পারত। মানুষ সেখানে স্থায়ী চাকরি পেতেন। তৃণমূল সরকারকে না সরাতে পারলে রাজ্যটাকে আর বাঁচানো যাবে না।” যদিও তৃণমূলের জেলা নেতাদের কটাক্ষ, ‘‘আগে ওঁরা এখানে নিজেদের দলটাকে বাঁচান। তারপর রাজ্যের কথা ভাববেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

state news rupa ganguly bjp
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE