Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
আজ এলাকায় বিধায়ক

‘দলবদলু’ মানসকে নিয়ে নির্লিপ্ত সবং

বিধানসভা ভোটের পরে এই প্রথম নিজের নির্বাচনী এলাকায় আসছেন মানস ভুঁইয়া। কিন্তু যাদের প্রতীকে ভোটে জিতেছিলেন, মানসবাবু আর সেই কংগ্রেসের নন।

দলত্যাগীদের ইস্তফার দাবিতে সবংয়ে মিছিল বামেদের। নিজস্ব চিত্র।

দলত্যাগীদের ইস্তফার দাবিতে সবংয়ে মিছিল বামেদের। নিজস্ব চিত্র।

দেবমাল্য বাগচী
শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:৩৬
Share: Save:

বিধানসভা ভোটের পরে এই প্রথম নিজের নির্বাচনী এলাকায় আসছেন মানস ভুঁইয়া। কিন্তু যাদের প্রতীকে ভোটে জিতেছিলেন, মানসবাবু আর সেই কংগ্রেসের নন। তিনি এখন তৃণমূলের। আর সেই পরিচয়েই আজ, সোমবার সবংয়ের মাটিতে পা রাখবেন প্রবীণ এই নেতা।

তবে দলবদলের পরে মানসবাবুর এই সবং সফর ঘিরে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যাওয়া স্থানীয় নেতা-কর্মীরা ছাড়া আর বিশেষ কেউ উৎসাহী ননয়। সবংয়ের তৃণমূল নেতৃত্ব থেকে এলাকাবাসী, সকলেই বেশ নির্লিপ্ত। জানা গিয়েছে, তৃণমূলের পক্ষ থেকে আজ পিংলার জামনা মোড়ে মানসবাবুকে স্বাগত জানানো হবে। তারপর বাইক র‌্যালি করে তাঁকে সবং পঞ্চায়েত সমিতির কার্যালয়ে নিয়ে আসা হবে। তারপর সবং পঞ্চায়েত সমিতির সাধারণ সভায় যোগ দেবেন বিধায়ক। তবে এই সবের তোড়জোড় মূলত কংগ্রেস ছেড়ে আসা কর্মীদের। কংগ্রেসের প্রাক্তন ব্লক সাধারণ সম্পাদকের পদ ছেড়ে সদ্য তৃণমূলে আসা আবু কালাম বক্স বলেন, “পাঁচমাস পরে দাদার এই আগমন আমরা সাড়ম্বরে উদ্‌যাপন করব। বিশাল বাইক র‌্যালি হবে। সবংয়ের হাজার-হাজার মানুষ দাদাকে অভিনন্দন জানাবেন।”

গোটা বিষয়টিতে তৃণমূল নেতৃত্বের গা-ছাড়া ভাব অবশ্য স্পষ্ট। তৃণমূলের সবং ব্লক সভাপতি প্রভাত মাইতি তাই বলছেন, “একটা বাইক র‌্যালির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে শুনেছি। কিন্তু কোত্থেকে কোথায় ওই র‍্যালি হবে বা কীভাবে হবে তা জানিনা।” তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি অজিত মাইতির আবার বক্তব্য, “মানস ভুঁইয়া আসবেন বলে কোনও বাইক র‌্যালি করা হবে বলে আমি জানি না। তবে পঞ্চায়েত সমিতি আমন্ত্রণ পেয়েছি। আমি জেলা পরিষদ সদস্য হিসেবে উপস্থিত থাকব।” বৈঠকে অবশ্য থাকবেন না জেলা পরিষদ কর্মাধ্যক্ষ অমূল্য মাইতি। তিনি বলেন, “মানস ভুঁইয়া যে আসছেন সে কথা আমাকে ফোন করে বলেননি। আমাকে জেলা থেকেও জানানো হয়নি। তা ছাড়া, সোমবার আমার জেলা পরিষদে জরুরি কাজ রয়েছে। তাই পঞ্চায়েত সমিতির বৈঠকে থাকতে পারব না।” মানস ভুঁইয়ার সঙ্গে দেখা করবেন না? এ বার অমূল্যবাবুর জবাব, “আমি ১৮ বছর তৃণমূলের একনিষ্ঠ সৈনিক হয়ে কাজ করছি। আর তৃণমূলে মানসবাবুর বয়স ৬ দিন। তাই কে কার সঙ্গে দেখা করব ঠিক করিনি।”

মানস-প্রশ্নে সবংয়ের সাধারণ মানুষও নিরুত্তাপ। সবংয়ের স্কুল শিক্ষক অরিজিৎ দাস অধিকারী যেমন বলেন, “মানসবাবু আসবেন খবরের কাগজে পড়েছি। তবে সত্যি বলতে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের মধ্যে এ নিয়ে উৎসাহ নেই। আগে কেউ দলবদল করলে এই মানসবাবু তাঁদের ‘দলবদলু’ বলে কটাক্ষ করতেন। এখন তো উনি নিজেই তাই করলেন।”

মানসবাবু নিজে অবশ্য এ সব গায়ে মাখছেন না। তিনি বলেন, ‘‘সরকারি বৈঠকে যোগ দিতে যাচ্ছি। পাঁচ মাস এলাকার বাইরে থাকলেও সবংবাসীর জন্য কাজ করে গিয়েছি। আর আমার কারও সার্টিফিকেট প্রয়োজন নেই।’’ দলত্যাগী মানসবাবুকে আর গুরুত্ব দিতে চাইছে না কংগ্রেসও। রবিবার সবংয়ের নেতা তথা কংগ্রেসের জেলা সাধারণ সম্পাদক চিরঞ্জীব ভৌমিক বলেন, “মানস ভুঁইয়া দলবদল সবংয়ের মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। এমন প্রতারকের মুখোমুখি হতে আমরা চাই না।” তবে কংগ্রেস সূত্রে জানা গিয়েছে, মানসবাবুর এই সফরের কী প্রভাব সবংয়ে পড়ে তা দেখতে উৎসুক দল। তা ছাড়া দলবদলের কী ব্যাখ্যা তিনি সবংবাসীকে দেবেন সেটাও দেখতে চাইছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। তাই এখনই প্রতিবাদের রাস্তায় হাঁটতে চাইছে না তাঁরা। তবে এত দিন গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি থাকায় এলাকায় আসেননি মানসবাবু। এ বার সবংয়ে পুলিশ কী করবে, সেই প্রশ্ন তুলে কটাক্ষ করতে ছাড়ছেন না কংগ্রেস নেতারা। দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক অনিল শিকারিয়া বলেন, “এলাকায় না আসায় এতদিন সবংয়ের পুলিশ তাঁকে খুঁজে পাচ্ছিল না। আশা করি, এ বার সবং পুলিশ তাঁকে দেখতে পাবে।”

সিপিএম অবশ্য পথে নেমেছে। সবংয়ের দলত্যাগী জনপ্রতিনিধিদের পদত্যাগের দাবিতে রবিবার মিছিল করে তারা। ব্লকের অডিটোরিয়াম থেকে বাজার পর্যন্ত মিছিলে মহিলার সংখ্যা ছিল নজরে পড়ার মতো। সিপিএমের জোনাল সম্পাদক চন্দন গুছাইত বলেন, “যাঁরা একটি দলের প্রতীকে নির্বাচিত হয়ে অন্য দলে যোগ দিচ্ছেন, তাঁদের সবংয়ের মানুষ বরদাস্ত করবে না। সকলকে পদত্যাগ করতে হবে। সাহস থাকলে মানসবাবু-সহ দলত্যাগী জনপ্রতিনিধিরা পুনর্নিবাচিত হয়ে আসুন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sabang Manas Bhunia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE