Advertisement
E-Paper

ভাঙড়ে আক্রান্ত সব্যসাচী, নকশাল নেত্রী গ্রেফতার হতেই ফের অবরোধ

নকশাল নেত্রী শর্মিষ্ঠা চৌধুরী গ্রেফতারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অবরোধ তুলতে গিয়ে ভাঙড়ের ‘অন্য চেহারা’ দেখলেন রাজারহাট-নিউটাউনের তৃণমূল বিধায়ক সব্যসাচী দত্ত। প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন, বৃহস্পতিবার অবরোধ তুলতে যাওয়া বিধায়কের উপরে চড়াও হওয়ার অভিযোগ উঠল আন্দোলনকারীদের একাংশের বিরুদ্ধে।

শুভাশিস ঘটক

শেষ আপডেট: ২৭ জানুয়ারি ২০১৭ ০২:১৬
বকডোবায় বিক্ষুব্ধদের হুমকি দিচ্ছেন বিধায়ক সব্যসাচী দত্ত। ছবি: সামসুল হুদা।

বকডোবায় বিক্ষুব্ধদের হুমকি দিচ্ছেন বিধায়ক সব্যসাচী দত্ত। ছবি: সামসুল হুদা।

নকশাল নেত্রী শর্মিষ্ঠা চৌধুরী গ্রেফতারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অবরোধ তুলতে গিয়ে ভাঙড়ের ‘অন্য চেহারা’ দেখলেন রাজারহাট-নিউটাউনের তৃণমূল বিধায়ক সব্যসাচী দত্ত। প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন, বৃহস্পতিবার অবরোধ তুলতে যাওয়া বিধায়কের উপরে চড়াও হওয়ার অভিযোগ উঠল আন্দোলনকারীদের একাংশের বিরুদ্ধে। ধাক্কাধাক্কিতে পড়ে যান সব্যসাচী। শুরু হয় ইট-বৃষ্টি। তার মধ্যেই পুলিশ গাড়িতে চাপিয়ে বার করে দেয় বিধায়ককে। এলাকাবাসীর একাংশের পাল্টা দাবি, অবরোধ সরানোর নাম করে গুলি-বোমা ছুড়েছে বিধায়কের সঙ্গীরা।

গত মঙ্গলবার ভাঙড়ে সব্যসাচীর নেতৃত্বেই পোলেরহাট, খামারআইট, মাছিভাঙার মতো গ্রামগুলি থেকে অবরোধ সরানো হয়। পাওয়ার গ্রিডের সাব-স্টেশন নির্মাণকে কেন্দ্র করে গত ১৭ জানুয়ারি ধুন্ধুমারের পরে ওই অবরোধের জেরেই ভাঙড়ে ঢুকতে পারছিল না পুলিশ। বুধবার রাতে আন্দোলনের অন্যতম মুখ সিপিআই (এমএল) রেড স্টারের নেত্রী শর্মিষ্ঠা চৌধুরী গ্রেফতারের পরে মাছিভাঙা, খামারআইট, বকডোবা, শ্যামনগর-সহ কয়েকটি এলাকায় গাছের গুঁড়ি ফেলে, রাস্তা কেটে ফের অবরোধ শুরু হয়। সেই অবরোধ সরাতেই এ দিন ভাঙড়ে যান সব্যসাচী।

এ দিন দুপুর ২টো নাগাদ রাজারহাটের বিধায়ক দলবল নিয়ে লাউহাটির দিক থেকে বক়়ডোবা হয়ে পাওয়ার গ্রিড সংলগ্ন এলাকায় রাস্তা অবরোধ তুলতে আসেন। বিভিন্ন রাস্তায় ফেলে রাখা গাছ, কাঠের গুঁড়ি সরিয়ে তাঁরা এগোতে থাকেন। শর্মিষ্ঠাদেবীর গ্রেফতারি নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘‘রেড, হোয়াইট স্টার যা-ই হোক, অশান্তি পাকালে চুনকাম করে দেব!’’

গ্রামবাসীদের অভিযোগ, চাঁদপুর গ্রামে অবরোধ তোলার সময়ে বিধায়কের দলের এক জন তাঁদের দিকে ইট ছোড়ে। এর পর সব্যসাচীবাবু ও তাঁর দলবল পাওয়ার গ্রিডের দিকে এগিয়ে যান। আন্দোলনকারীদের একাংশের অভিযোগ, তখন বিধায়কের দলবল শূন্যে সাত রাউন্ড গুলি চালায় এবং ফাঁকা জায়গায় গোটা চারেক বোমা মারে। ঠিক এই সময়েই আন্দোলনকারীদের একাংশ দু’দিক থেকে বিধায়ক এবং তাঁর বাহিনীকে ঘিরে ফেলেন। তাঁদের অনেকের মন্তব্য, ‘‘শর্মিষ্ঠাদেবী যদি বহিরাগত হওয়ার অপরাধে গ্রেফতার হন, তা হলে সব্যসাচী ও তাঁর দলবলকেও গ্রেফতার করতে হবে। ওরাও বহিরাগত। ওদের গুন্ডামি সহ্য করব না।’’ ঘটনাচক্রে, পাওয়ার-গ্রিড লাগোয়া চাঁদপুর এলাকাটি সব্যসাচীর বিধানসভা এলাকার মধ্যেই পড়ে। পোলেরহাট, খামারআইট, মাছিভাঙার মতো ভাঙড়ের অন্য ‘উত্তপ্ত’ এলাকাগুলি অবশ্য ভাঙড় বিধানসভার অন্তর্গত।

বারুইপুর আদালতে ধৃত নকশাল নেত্রী শর্মিষ্ঠা চৌধুরী। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল।

খবর পেয়ে রাজ্য সশস্ত্র পুলিশের নবম ব্যাটেলিয়নের কম্যান্ডান্ট কঙ্করপ্রসাদ বারুই এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরীর নেতৃত্বে পুলিশ বাহিনী বিধায়ককে মুক্ত করার জন্য পাওয়ার গ্রিডের সামনে পৌঁছয়। তখন সব্যসাচীবাবুকে মোবাইলে চিৎকার করে বলতে শোনা যায়, ‘‘আরাবুলভাই (ইসলাম) তুমি কোথায়? আমাদের ঘিরে ফেলেছে!’’ কিছুক্ষণের মধ্যে আরাবুল সঙ্গীদের নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন। কিন্তু আন্দোলনকারীদের রণংদেহী মূর্তি দেখে আরাবুল-বাহিনী এগোয়নি।

সেই পরিস্থিতিতে কোনও রকমে পাওয়ার গ্রিডের সামনে থেকে বিধায়ক ও তাঁর লোকজনকে সরিয়ে নিয়ে যায় পুলিশ। কিন্তু চাঁদপুরের কাছে হাজারখানেক লোক ফের তাঁদের ঘিরে ফেলে। তখন সব্যসাচীবাবুকেও জনতার দিকে আঙুল তুলে শাসাতে দেখা যায়। দক্ষিণ ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার চন্দ্রশেখর বর্ধন ও সশস্ত্র পুলিশের তৃতীয় ব্যাটেলিয়নের ডেপুটি কম্যান্ডান্ট পাপিয়া সুলতানা কোনও রকমে তাঁকে ভিড় ঠেলে বার করে আনেন। ধাক্কাধাক্কির সময়ে মাটিতে পড়ে যান বিধায়ক। গ্রামবাসীদের একাংশ ইট-বৃষ্টি করেন। কোনও রকমে একটি পুলিশের গাড়িতে তুলে দেওয়া হয় সব্যসাচীবাবুকে। পুলিশি পাহারায় গাড়ি বেরিয়ে যায়।

সঙ্গীদের বিরুদ্ধে ওঠা বোমা-গুলি চালানোর অভিযোগ অস্বীকার করে সব্যসাচী পরে বলেন, ‘‘অবরোধ সরাতে গিয়েছিলাম। কিছু স্বার্থান্বেষী লোক শর্মিষ্ঠাদেবীকে কেন গ্রেফতার করা হয়েছে প্রশ্ন তুলে বিক্ষোভ দেখিয়েছে। তাদের বলেছি, এটা প্রশাসনের বিষয়। প্রশাসনই বলতে পারবে।’’ তাঁর দাবি, কেউ তাঁর বা তাঁর সঙ্গীদের উপরে ইট-বৃষ্টি করেনি।

এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকারকে এক হাত নিয়েছেন বিরোধীরা। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের ট্যুইট-বার্তা— ‘অবিলম্বে পুলিশ এবং তৃণমূলের গুন্ডাদের সরাতে হবে ভাঙড় থেকে। যাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাঁদের মুক্তি দিতে হবে। হারা-কিরি করতে না চাইলে ওই এলাকায় শান্তি ফেরানো হোক, শুরু হোক আলোচনা’। একই সুরে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেছেন, ‘‘আলোচনার বদলে ধরপাকড় করলে কাজ হবে না।’’ যদিও তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ভাঙড়ের গোটা ঘটনা এবং গ্রেফতারের ব্যাপারটা নিয়ে বিরোধীরা অর্থহীন জলঘোলা করছেন। ওখানে অশান্তি বাধানোর চেষ্টা চলছে।’’

এ দিন শিয়ালদহ স্টেশন থেকে আর এক নকশাল নেতা প্রদীপ সিংহ ঠাকুরকে গ্রেফতার করে সিআইডি। বুধবার রাতে ধরা পড়া শর্মিষ্ঠা, তাঁর সহযোগী সাহনওয়াজ মোল্লা এবং প্রদীপকে এ দিন বারুইপুর আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাঁদের আট দিন সিআইডি-হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।

Sabyasachi Dutta Sarmistha Chowdhury
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy