কলেজে ক্লাস চলাকালীন এক তরুণী উঠে দাঁড়িয়ে শিক্ষককে বলেছিলেন, মাঠে চাষ করে পড়তে আসেন তিনি।
কলেজে ক্লাস চলাকালীন এক তরুণী উঠে দাঁড়িয়ে শিক্ষককে বলেছিলেন, মাঠে চাষ করে পড়তে আসেন তিনি।
সে দিন তাঁর কথা না তো বিশ্বাস করেছিলেন শিক্ষক, না সহপাঠীরা। তবে চাষ নিয়ে তাঁর অভিজ্ঞতার কথা যখন খুলে বলেন সমাপ্তি, তখন সকলের চোখ কপালে।
উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়ার আনখোলা গ্রামের বাসিন্দা সমাপ্তি মণ্ডলের কথা জানাজানি হতেই হইচই পড়ে যায় বছর তিনেক আগে। প্রশাসনের কর্তারা তাঁর কাজ দেখে সম্মানিতও করেন। ‘কৃষিরত্ন’ পুরষ্কার দেয় রাজ্য সরকার।
ভূগোলে স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে চাকরি-বাকরির চেষ্টা করছেন সমাপ্তি। তবে নিজেদের ছ’বিঘা জমিতে আরও ভাল ভাবে চাষে মন দিয়েছেন। ইদানীং চাষের কাজে প্রযুক্তির ব্যবহার করে ফলনে তাক লাগিয়ে দিচ্ছেন বছর চব্বিশের তরুণী। তাঁর চাষের পদ্ধতি এখন দিশা দেখাচ্ছে আশপাশের অন্য গ্রামের চাষিদেরও। সমাপ্তির কথায়, ‘‘প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার করতে পারলে চাষই মানুষের জীবন গড়ে দিতে পারে।’’
এ বার ধান চাষ করেছিলেন সমাপ্তি। ফলন এবং আয় হয়েছে আগের থেকে বেশি। নতুন প্রযুক্তি, মেশিন ব্যবহার করেছেন। কৃষি দফতর সহযোগিতা করেছে। সমাপ্তির কথায়, ‘‘দফতরের আধিকারিকদের পরামর্শে ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে অনেক উন্নতি হয়েছে কাজে। এ বার ধান চাষে যা লাভ হয়েছে, আগে তা হয়নি, বরং প্রথাগত পদ্ধতিতে চাষ করে লোকসানও হজম করতে হয়েছিল।’’
সমাপ্তিকে ধান চাষে বীজ দিয়ে সাহায্য করেছে কৃষি দফতর। ধানের চারা জমিতে রোপণ করে দিয়েছে। ফলে চাষে খরচ হয়েছে কম। শ্রমিক লেগেছে কম। স্থানীয় বিধায়ক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক সমাপ্তিকে ট্র্যাক্টর দিয়েছিলেন। এ বার বাড়িতে বীজতলা তৈরি করেন সমাপ্তি। শ্রমিকদের সঙ্গে নিজে ধানও কেটেছেন বলে জানালেন। ধানের পরে এখন সর্ষে চাষ করছেন।
হাবড়া ১ ব্লক সহ কৃষি আধিকারিক কুসুমকমল মজুমদার বলেন, ‘‘চাষে যন্ত্রের সঠিক ব্যবহার সমাপ্তিকে শেখানো হয়েছিল। ফলে চাষে শ্রমিক কম লেগেছে। খরচ কমেছে। আমরা রাইস ট্রান্সপ্ল্যান্টার দিয়ে ওঁর জমিতে ধান রোওয়ার ব্যবস্থা করেছিলাম। ফলে রোগপোকার উপদ্রব কম হয়েছে। ওষুধ কম লেগেছে। সমাপ্তি চাষি হিসেবে খুবই উন্নতি করেছেন।’’
শুরুর দিনগুলিতে এলাকার প্রবীণ চাষিরা এগিয়ে এসে ভুলত্রুটি শুধরে দিতেন। এখন তাঁরাই সমাপ্তির কাছে পরামর্শ নিচ্ছেন।
সমাপ্তির বাবা ভোলানাথ দীর্ঘদিন অসুস্থ থেকে মারা যান। ওই সময়ে পরিবারের হাল ধরেন সমাপ্তির মা অঞ্জলি। তিনিই পারিবারিক জমিতে চাষবাস দেখাশোনা করতেন। ছোট মেয়ে সমাপ্তিও মায়ের সঙ্গে মাঠে যেত। কলেজে পড়ার সময়ে চাষবাসের পাশাপাশি কিছু ছাত্রছাত্রীও পড়াতেন সমাপ্তি। করোনা পরিস্থিতিতে সে সব বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু চাষের সাফল্য আর্থিক ঘাটতি মিটিয়ে দিচ্ছে।
ভূগোলের শিক্ষক প্রণবকুমার দাসের ক্লাসেই সমাপ্তি প্রথম জানিয়েছিলেন চাষের অভিজ্ঞতার কথা। প্রণববাবু এখনও নানা ভাবে উৎসাহ দেন সমাপ্তিকে। সমাপ্তির কথায়, ‘‘মন দিয়ে যে কোনও কাজ করলেই উন্নতি সম্ভব। আমি পুলিশে চাকরির পরীক্ষা দিয়েছি ঠিকই। কিন্তু কবে পরীক্ষায় সফল হব, সে দিকে তাকিয়ে বসে নেই। চাষবাস চালিয়ে যাচ্ছি। ভবিষ্যতেও তাই করব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy