Advertisement
০৩ মে ২০২৪

এ কেমন পরীক্ষা, পরপর দু’বছর একই প্রশ্ন

শুক্রবার রাজ্যের বিভিন্ন স্কুলে ওয়েস্ট বেঙ্গল সেকেন্ডারি টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন বা ডব্লিউবিএসটিডব্লিউএ-র তৈরি করা প্রশ্নপত্রে রসায়নের টেস্ট ছিল হাওড়ার একটি স্কুলে। পরীক্ষার হলে প্রশ্নপত্র খোলার পরে চোখ কপালে ওঠে রসায়ন শিক্ষকের।

উচ্চ মাধ্যমিকে অভিন্ন প্রশ্নে রসায়নের টেস্ট টানা দু’বছর। হাওড়ার স্কুলে।

উচ্চ মাধ্যমিকে অভিন্ন প্রশ্নে রসায়নের টেস্ট টানা দু’বছর। হাওড়ার স্কুলে।

অভিষেক চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৬ ০৪:৩৪
Share: Save:

ভুল দেখছেন না তো! চোখটা কচলে নিলেন রসায়নের শিক্ষক তথা পরীক্ষার পরিদর্শক। পরপর দু’বছরের প্রশ্ন এক হয় কী করে?

শুক্রবার রাজ্যের বিভিন্ন স্কুলে ওয়েস্ট বেঙ্গল সেকেন্ডারি টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন বা ডব্লিউবিএসটিডব্লিউএ-র তৈরি করা প্রশ্নপত্রে রসায়নের টেস্ট ছিল হাওড়ার একটি স্কুলে। পরীক্ষার হলে প্রশ্নপত্র খোলার পরে চোখ কপালে ওঠে রসায়ন শিক্ষকের। কারণ, রসায়ন পরীক্ষার যে-প্রশ্ন তাঁর সামনে খোলা ছিল, ২০১৫ সালে হুবহু সেই প্রশ্নগুলিই এসেছিল! তবু আরও নিশ্চিত হতে তিনি স্কুলের ড্রয়ার ঘেঁটে ২০১৫ সালের ওয়েস্ট বেঙ্গল সেকেন্ডারি টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের তৈরি রসায়নের প্রশ্নটি খুঁজে বার করেন এবং দেখেন, তাঁর সন্দেহ ঠিক। কিন্তু তখন আর পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়ার উপায় ছিল না। তাই বাধ্য হয়ে এ বারেও টেস্ট নেওয়া হয় একই প্রশ্নপত্রে।

বাম আমলে রাজ্যের প্রায় ৮০ শতাংশ স্কুলে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকে টেস্টের প্রশ্ন করত বাম শিক্ষক সংগঠন এবিটিএ। রাজ্যে পালাবদলের পরে ছবিটি পাল্টে গিয়েছে। এখন রাজ্যের অধিকাংশ স্কুলে ওয়েস্ট বেঙ্গল সেকেন্ডারি টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের তৈরি প্রশ্নপত্রে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের টেস্ট নেওয়া হয়।

তৃণমূল সূত্রের খবর, ওয়েস্ট বেঙ্গল সেকেন্ডারি টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের অস্তিত্ব শুধুই খাতায়-কলমে। এর পিছনে রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির কয়েক জন তাবড় নেতা। তাঁরা রাজ্যের স্কুলগুলিকে এই প্রশ্নপত্র নিতে অনুরোধ করেন। অনুরোধে কাজ না-হলে স্কুলগুলিতে সরকারি অনুদান বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। গত বছর একাধিক বিষয়ের প্রশ্নপত্রে ভুল আছে বলে অভিযোগ উঠেছিল। তবে পরপর দু’বছরের প্রশ্নপত্র হুবহু মিলে যাওয়ার অভিযোগ ওই সংগঠনের বিরুদ্ধে আগে ওঠেনি।

দু’বছরের প্রশ্নপত্রে মিল কতটা?

সবিস্তারে দেখতে ক্লিক করুন:

২০১৫ এবং ২০১৬ সালের উচ্চ মাধ্যমিক টেস্টে রসায়নের প্রশ্ন পাশাপাশি রেখে দেখা যাচ্ছে, ৭০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নের মাথায় সাল এবং কয়েকটি ‘অথবা’ ছাড়া প্রায় পুরোটাই এক। রাসায়নিক বিক্রিয়ার সঙ্কেত এবং অঙ্কের মানও বদলানো হয়নি। হাওড়া শহরের একটি স্কুলের রসায়ন শিক্ষক জয়নুল আবেদিনের ক্ষোভ, ‘‘উচ্চ মাধ্যমিকে টেস্টের নামে রসায়ন বিষয়ে প্রহসন করা হয়েছে। এতে অনেক পড়ুয়ার ফল খারাপ হতে পারে। তার দায় প্রশ্নকর্তারা নেবেন তো?’’ একাধিক স্কুলের শিক্ষকদের অভিযোগ, শুধু রসায়ন নয়, জীববিদ্যার প্রশ্নপত্রেও ‘রিপিট’ হয়েছে। এ ছাড়া পর্ষদের নির্ধারিত নিয়মের বাইরে গিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে বলেও অভিযোগ।

পরপর দু’বছরের প্রশ্ন মিলে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছেন তৃণমূল শিক্ষক সংগঠনের একাধিক নেতা। তাঁরা বলছেন, ‘‘এমনটা হওয়া কখনওই কাম্য নয়। এতে সংগঠনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।’’ কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি দিব্যেন্দু মুখোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছেন, এই প্রশ্নপত্র কারা তৈরি করেছে, তা তিনি জানেনই না!

শাসক দলের অনুগামী বিভিন্ন সংগঠনের বিভিন্ন রকম বক্তব্য শুনে কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না শিক্ষা শিবিরের একাংশ। বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সহ-সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, ‘‘তৃণমূল শিক্ষা সেলের ছত্রচ্ছায়ায় প্রশ্নপত্রের বিলিবণ্টন চলছে। অথচ প্রশ্নপত্রের দায় নিচ্ছে না কেউ। এ তো বড় অদ্ভুত ব্যাপার!’’ এবিটিএ-র হাওড়া জেলা কমিটির সম্পাদক ওমপ্রকাশ পাণ্ডের প্রশ্ন, তৃণমূলের শিক্ষক নেতারা কি নতুন প্রশ্ন তৈরি করার সময় পাচ্ছেন না? ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ছেলেখেলা করার অর্থ কী? ‘‘বিষয়টি আমরা শিক্ষা দফতরে জানাব,’’ বলেছেন ওমপ্রকাশবাবু।

কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভানেত্রী মহুয়া দাসের দাবি, তৃণমূলের কোনও সংগঠনের তৈরি প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেওয়ার প্রশ্ন উঠছে না। কোনও স্কুলই অন্য কোনও সংগঠনের কাছ থেকে প্রশ্নপত্র নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকের টেস্ট নিচ্ছে না। ‘‘আমাদের দেওয়া নমুনা প্রশ্ন অনুসারে স্কুলগুলি নিজেরাই প্রশ্ন তৈরি করে। অন্য কোনও সংগঠনের প্রশ্নে টেস্ট নেওয়া হচ্ছে বলে জানা নেই,’’ বললেন মহুয়াদেবী।

সহ-প্রতিবেদন: মধুমিতা দত্ত

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Question paper
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE