ভূমিকম্পে ফাটল ধরেছে শিলিগুড়ির একটি বেসরকারি স্কুলের ক্লাসঘরের দেওয়ালে। ক্লাসের ফাঁকে সে দিকেই নজর খুদেদের। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।
ভূমিকম্পের ধাক্কা গিয়ে লাগল স্কুলের উপস্থিতির হারেও। শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ির একাধিক বাচ্চাদের স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। শিলিগুড়ি ও জলপাইগুড়ির কিছু উচ্চ বিদ্যালয়েও আতঙ্ক কাটছে না। শিলিগুড়ি বয়েজ হাইস্কুলে সাধারণ দিনে উপস্থিতির হার ৮০ শতাংশ। মঙ্গলবার ভূমিকম্পের পরে বুধবার স্কুলে এসেছে তার অর্ধেক, ৪০%। শিলিগুড়ি গার্লস স্কুলে সাধারণ দিনে ৮০% ছাত্রী থাকে, এ দিন এসেছে ৫০%। জলপাইগুড়ি সদর গার্লস হাই স্কুলের অপর্ণা বাগচি জানান উপস্থিতির হার এ দিন নেমে দাঁড়িয়েছে ৪৫ শতাংশে।
মাত্র ১৮ দিনে বারবার ভূকম্পে মাটি কেঁপে ওঠায় আতঙ্কিত বড়রাও। বুধবারও সকাল থেকে দুপুর অবধি ১০ বার হালকা কম্পন অনুভূত হয়েছে শিলিগুড়িতে। তাতে ছোটাছুটি তেমন হয়নি। কিন্তু, ভয় চেপে বসেছে। মঙ্গলবারের ভূমিকম্পের পরে উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুর থানার সুজালি এলাকাতে আতঙ্কে মহম্মদ ধোন্দুল (৫৬) নামে এক জনের মৃত্যু হয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। বুধবার সকালে ইসলামপুর থানার রামগঞ্জ ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর বাড়ি সুজালি এলাকার টিকরামগছ এলাকাতে। ইসলামপুরের বিডিও স্মিতা সুব্বা বলেন, ‘‘এক ব্যক্তি ভূমিকম্পের পরই আতঙ্কে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। সকালে তিনি মারা গিয়েছেন বলে শুনেছি।’’
সে খবরও ছড়িয়ে পড়ার পরে বৈশাখের প্রবল গরমেও গা যেন আতঙ্কে হিম। প্রাইমারির পড়ুয়া থেকে বেসরকারি ব্যাঙ্কের ম্যানেজার, সকলেই যেন ভয়ে ভয়ে পা ফেলছেন। দুঁদে পুলিশ কর্তা থেকে জেলা প্রশাসনের শীর্ষে থাকা আইএএস অফিসার পর্যন্ত কাজের ফাঁকে পায়ের তলাটা ফের দুলে উঠল কি না, সে দিকে খেয়াল রাখছেন।
ভয়ে-দুশ্চিন্তায় অনেকেই ভিড় জমাচ্ছেন ডাক্তারের কাছে। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক শেখর চক্রবর্তীর কাছে রোজই প্রায় এমন রোগীর ভিড় উপচে পড়ছে। শেখরবাবুর কথায়, ‘‘পর পর প্রবল ভূ-কম্পনের জন্য এমন অনেক সময়ে হয়ে থাকে। এটা এক ধরনের ফোবিয়া।’’ কী করতে হবে? শেখরবাবুর পরামর্শ, মনটা শান্ত রাখতে হবে। ভাল করে ঘুমোনোও জরুরি। অযথা ভয় পেলে চলবে না।
ভয় পাওয়া আটকাবে কে? কারও পায়ের নড়াচড়ায় ডাইনিং টেবিলে রাখা বোতলের জল একটু কেঁপে উঠলেও ভয়ে রেস্তোরাঁ ছেড়ে বাইরের দিকে পা বাড়াচ্ছেন খদ্দের। বুধবার দুপুরেই হিলকার্ট রোড, বিধান রোড, সেবক রোডের একাধিক হোটেলে এমনই ঘটনা ঘটেছে। ৫-৬ তলা হোটেলের ঘরের চাহিদা রাতারাতি অনেকটাই কমে গিয়েছে। আবার কোথাও অফিসে কম্পিউটারের সামনে কাজ করার সময়ে আচমকা যেন চেয়ার দুলে উঠল ভেবে লাফিয়ে উঠছেন ডাকসাইটে ম্যানেজার।
মঙ্গলবার শিলিগুড়ির বহু থানায় গারদে থাকা আসামিরা কোলাপসিবল গেট ধরে দাঁড়িয়ে কেঁপেছেন। ভূমিকম্প কমলে কেউ দু’কান মলে বলে উঠেছে, ‘স্যার, কোথাও পালাব না। শুধু ভূকম্প হলে একটু বাইরে দাঁড়াতে দেবেন।’ শিলিগুড়ির সুভাষপল্লির বাগরাকোটের জেলে তো আরেক কাণ্ড। যতবারই কাঁপুনি হয়, সমস্বরে কলরোল উঠছে। ঘটনাচক্রে, জেলের এক বড় কর্তা এদিনই শিলিগুড়িতে পৌঁছে কয়েদিদের ঘরদোর ঠিকঠাক আছে কি না, বিশদে তার খোঁজখবর নিয়েছেন।
থানা-জেলে এমন হচ্ছে। ঘর-গেরস্থালিতে কী ঘটছে? আশ্রমপাড়ার রত্না চৌধুরীর মতো একাধিক গৃহবধূর বিবরণ অনুযায়ী, ফ্ল্যাটবাড়িতে ঘর মোছার ফাঁকে আচমকা যেন সব দুলছে ভেবে বলে আঁতকে উঠছে পরিচারিকা। আবার অনেক বহুতলের ফ্ল্যাটে পরিচারিকারা টানা গরহাজির। অনেকেই রাতে সামান্য দুলুনিতে হইচই করে বেরিয়ে সোজা রাস্তায় ছুটছেন।
এত আতঙ্ক কেন? কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের সিকিমের আধিকারিক গোপীনাথ রাহা বলেন, ‘‘সিকিম সহ উত্তরবঙ্গ ভূমিকম্প প্রবণ এলাকা। এখানে বারেবারে আফটার-শক হতেই পারে। সে জন্য আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন অনেকে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy