Advertisement
২১ মে ২০২৪

গাড়ু নিয়ে মাঠে বসতেই হুলোর হুইস্‌ল

এ তো মহা জ্বালাতন! ভোরে চা খাওয়ার আগেই অমলবাবুর বেগ আসে। সে দিন গাড়ু নিয়ে কাদা প্যাচপ্যাচে মাঠ পেরিয়ে বাঁশবনে বসতে যাবেন, তখনই কিনা হুলো ছোঁড়ার হুইস্‌ল!

অঙ্কন: মণীশ মৈত্র

অঙ্কন: মণীশ মৈত্র

পীযূষ নন্দী
পুরশুড়া শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০১৬ ০৩:১৭
Share: Save:

এ তো মহা জ্বালাতন!

ভোরে চা খাওয়ার আগেই অমলবাবুর বেগ আসে। সে দিন গাড়ু নিয়ে কাদা প্যাচপ্যাচে মাঠ পেরিয়ে বাঁশবনে বসতে যাবেন, তখনই কিনা হুলো ছোঁড়ার হুইস্‌ল!

ব্যাপারটা কী?

উত্তর না দিয়ে বিল্টু খ্যাঁকখ্যাঁক করে হাসে। শোনার সময় ছিল না। অমলবাবু দূরে সরে গিয়ে বসলেন। দস্যিরা তখনও দাঁড়িয়ে।

সূর্য ওঠার আগেই নদীবাঁধের ধারে ঠান্ডা হাওয়ায় কাজটা সেরে ফেলা রহিম খুড়োর অনেক দিনের অভ্যাস। বিল্টু-ছোট্টু-প্রদীপেরা ইতিমধ্যেই তাঁকে হুঁশিয়ারি দিয়েছে, ‘‘খুড়ো, আবার বাঁধের ধারে দেখা গেলে বাড়িতে পোস্টার পড়বে’’। বোঝো ঠ্যালা! পুলিশ প্রশাসনও কিনা বজ্জাতগুলোকে তোল্লাই দিচ্ছে!

সকাল-সন্ধ্যায় পুড়শুড়া ব্লক জুড়ে এখন ওই একরত্তিদেরই দাপট।

প্রকৃতির ডাকে মাঠেঘাটে বসে পড়া ঠেকাতে ব্লক প্রশাসন স্কুল পড়ুয়াদের নিয়ে তৈরি করে ফেলেছে নজরদারি দল। দিন কয়েকের প্রশিক্ষণের পরে তারা কাজেও নেমে পড়েছে। আপাতত তারা বড়দের সতর্ক করছে। এর পরে রয়েছে বাড়িতে পোস্টার সাঁটানো এবং ব্লক অফিসে নালিশ ঠোকা।

কেমন হবে সে পোস্টার?

‘অমলকাকু বাঁশবনে গিয়েছিলেন’, বা ‘পরিমল জেঠু গামছা পরে মাঠে গিয়েছিলেন’— এমনই। জানালেন ব্লক প্রশাসনের এক কর্তা। কিন্তু কেন এমন উদ্যোগ?

ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি মাসের গোড়ায় হুগলির জেলাশাসক সঞ্জয় বনশল ব্লকগুলিতে এক নির্দেশিকায় জানান, আগামী ১৫ অগস্ট হুগলিকে ‘নির্মল জেলা’ হিসেবে ঘোষণা করা হবে। লক্ষ্য সফল করতে নতুন কর্মসূচি নিতে হবে। তাতে স্কুলের ছেলেমেয়েদেরও সামিল করা যেতে পারে। সেই মতো পুরশুড়ার ৮টি পঞ্চায়েত এলাকার ৯টি স্কুলের পড়ুয়াদের নিয়ে মঙ্গলবার ব্লক অফিসে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। গড়া হয় একাধিক নজরদারি দল। দলগুলি নিজেদের স্কুল এবং বাড়িকে পরিষ্কার রাখার পাশাপাশি ব্লকের বিভিন্ন স্থানে সকাল-সন্ধ্যায় নজরদারি চালাবে।

পুরশুড়ার বিডিও অনির্বাণ রায় বলেন, ‘‘গোটা ব্লকে বাড়ি বাড়ি শৌচাগার নির্মাণ কার্যত শেষ হয়ে গিয়েছে। তবু অনেকে তা ব্যবহার না করে মাঠেঘাটে যান। এটা বন্ধ করতে এই উদ্যোগ। কোনও ব্যক্তি নিজের নামে পোস্টার দেখার পরে আর মাঠে যাবেন না বলেই আমাদের আশা। খুদে পড়ুয়ারাই এই পথ বাতলেছে।’’

ব্লক প্রশাসনের উৎসাহে ছোটরা বেজায় উৎসাহে ভোরে বেরিয়ে পড়লেও বড়দের কেউ কেউ তিতিবিরক্ত। দীর্ঘদিনের অভ্যাস পাল্টাতে হচ্ছে যে!

ভাঙামোড়া গ্রামের বছর পঞ্চান্নর প্রৌঢ় তো বলেই দিলেন, ‘‘ছেলেবেলা থেকে মাঠে যাই। এ ভাবে অভ্যেস পাল্টানো যায়! গ্রামের ছেলেমেয়েদের লেলিয়ে দিচ্ছে প্রশাসন। নাম দিয়ে পোস্টার সাঁটবে বলছে! কী যে করি!

সে দিন বেজায় অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছিলেন কেলেপাড়ার আজগর মিঁয়া। ব্রাশ করতে করতে বিশেষ জায়গাটায় গিয়ে দেখেন বিচ্চুগুলো দাঁড়িয়ে দাঁত মাজছে। জটলা করছে। ঘরে ফিরে যান তিনি। আজগরও বলেন, ‘‘ওদের জ্বালায় মনে হচ্ছে বদ্ধ ঘরে বসেই কাজটা সারতে হবে। না হলে যে পোস্টার সাঁটবে বলছে!’’

হাসছে ছোটরা। খুশি প্রশাসন। ইয়ের ঠিকানা পাল্টাচ্ছে যে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

to evacuation Campaign
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE