Advertisement
E-Paper

জোটে ইয়েচুরির সায়, দ্বিধায় বুদ্ধ

পশ্চিমবঙ্গের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা করতে রাজি সিপিএমের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। কংগ্রেস সম্পর্কে নিজের পূর্বসূরি প্রকাশ কারাটের মতাদর্শগত আপত্তি সরিয়ে রেখে তৃণমূলকে চাপে ফেলার কৌশলগত প্রয়োজনীয়তাকেই বেশি গুরুত্ব দিতে চান তিনি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৩:০৭
সাংবাদিক বৈঠকে সীতারাম ইয়েচুরি এবং সূর্যকান্ত মিশ্র।—নিজস্ব চিত্র।

সাংবাদিক বৈঠকে সীতারাম ইয়েচুরি এবং সূর্যকান্ত মিশ্র।—নিজস্ব চিত্র।

পশ্চিমবঙ্গের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা করতে রাজি সিপিএমের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। কংগ্রেস সম্পর্কে নিজের পূর্বসূরি প্রকাশ কারাটের মতাদর্শগত আপত্তি সরিয়ে রেখে তৃণমূলকে চাপে ফেলার কৌশলগত প্রয়োজনীয়তাকেই বেশি গুরুত্ব দিতে চান তিনি। আজ, দলীয় প্লেনাম শুরুর আগের দিন কলকাতায় এক সাংবাদিক বৈঠকে ইয়েচুরির মন্তব্য, ‘‘যাঁরা এ রাজ্যে অগণতান্ত্রিক, অত্যাচারী তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন, সেই সব বাম ও গণতান্ত্রিক শক্তিকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি।’’ প্রশ্ন ওঠে, এই গণতান্ত্রিক শক্তির মধ্যে কংগ্রেসও তো পড়ে? ইয়েচুরি বলেন, ‘‘আমি তা অস্বীকার করছি না।’’

তবে সিপিএম সূত্রের খবর, কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা প্রশ্নে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও বিমান বসুর শঙ্কা রয়েছে। সেটা হল, সমঝোতা হলেই কি কংগ্রেসের ভোট সিপিএমের দিকে চলে আসবে? বুদ্ধবাবু, বিমানবাবুরা মনে করেন, এমনটা হবে মনে করাটা অতি সরলীকরণ। চিরাচরিত ভাবে যাঁরা কংগ্রেসের ভোটার, ৩৪ বছরের বাম শাসনের কারণে তাঁদের মধ্যে সিপিএম-বিরোধী মানসিকতা তীব্র। এখন বাম-কংগ্রেস জোটের ফলে সেই ভোট যদি উল্টে তৃণমূলের দিকে চলে যায় তা হলে হিতে বিপরীত হবে। তাই কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছনোর আগে বিষয়টি নিয়ে আরও আলোচনা করতে আগ্রহী সিপিএমের রাজ্যনেতারা।

ইয়েচুরিও এ দিন বলেছেন, কোন রাজ্যে কী পরিস্থিতিতে দল কার সঙ্গে জোট করবে, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পূর্ণ ক্ষমতা রাজ্য কমিটির রয়েছে। তবে সেই সিদ্ধান্ত দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে অনুমোদন করাতে হবে। গোটা বিষয়টি নিয়ে প্লেনামের পরেই আলোচনা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। ইয়েচুরির কথায়, ‘‘রাজ্যে কী হবে তা নিয়ে প্লেনামের পরে সিদ্ধান্ত হবে। তবে কেবল আমরা ভাবলেই তো হবে না। অন্য দল কী চায় তা-ও দেখতে হবে।’’

বর্তমান পরিস্থিতিতে বামেরাই যে তাঁদের স্বাভাবিক মিত্র, সেটা অবশ্য প্রদেশ কংগ্রেস নেতাদের একটা বড় অংশ বুঝতে পারছেন বলেই দলীয় সূত্রে খবর। সোমেন মিত্র, প্রদীপ ভট্টাচার্য, আব্দুল মান্নানের মতো নেতারা ইতিমধ্যেই বামেদের সঙ্গে জোট করার দাবি নিয়ে দলীয় সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীর কাছে দরবার করেছেন। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীও তৃণমূলের সঙ্গে জোটের বিরোধী। আজ বর্ধমান আদালত চত্বরে এক সভায় তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূলের সঙ্গে কোনও বন্ধুত্বে যাব না। ২০১৬ সালে হিসাব-কিতাব বুঝে নেব।’’ কংগ্রেস সূত্র বলছে, রাজ্যে দলের যা অবস্থা তাতে কারও সঙ্গে জোট না-করলে ভোটের ফল আরও খারাপ হবে। ফলে কংগ্রেস নেতাদের অনেকেই বামেদের সঙ্গে চলার কথাই বলছেন। যদিও এ ব্যাপারে শেষ কথা বলবেন সনিয়াই।

তবে সিপিএমের কেরল ইউনিটও পশ্চিমবঙ্গে বাম-কংগ্রেস জোটের পথে বাধা। দুই রাজ্যেই এক সঙ্গে ভোট। এবং কেরলে সিপিএমের প্রধান প্রতিপক্ষ কংগ্রেসই। কারাট এবং কেরলে সিপিএম রাজ্য সম্পাদক পিনারাই বিজয়নের বক্তব্য, কংগ্রেস সর্বভারতীয় দল। পশ্চিমবঙ্গে সমঝোতা হলে, কেরলে কী ভাবে তাদের বিরোধিতা করা হবে! আর এই মিডিয়ার যুগে আগের মতো গোপন সমঝোতা অসম্ভব। জোট হতে পারে একমাত্র মতাদর্শগত সাযুজ্য থাকলেই।

পশ্চিমবঙ্গের প্রেক্ষিত বিচার করে অবশ্য কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করলে রাজনৈতিক লাভ বেশি বলেই মনে করেন ইয়েচুরি। রাজ্য নেতৃত্বের একটি অংশও তাঁর সঙ্গে একমত। তাঁদের বক্তব্য, জেলায় জেলায় তৃণমূল দলীয় সংগঠনের কোমর ভেঙে দিয়েছে। এই সে দিন পর্যন্ত জেলায় মিছিল করার লোক পাওয়া যেত না। ফলে ভোটের সময় যত সঙ্গী পাওয়া যায়, ততই ভাল। দলের এক পলিটব্যুরো সদস্যের কথায়, ‘‘তৃণমূল জেলায় জেলায় সন্ত্রাস চালাচ্ছে। গণতন্ত্রের পরিবেশ রক্ষা করতেই জোট প্রয়োজন।’’ অনেকের মতে, কেরল কমিটির থেকে আলাদা মত পোষণ করে আলিমুদ্দিন চাইলে যাতে কংগ্রেসের সঙ্গে চলার পক্ষে সায় দিতে পারে, সেই জন্যই ইয়েচুরি সিদ্ধান্তের ভার রাজ্যের উপরে ছেড়ে দিয়েছেন।

সমঝোতার প্রশ্নে কারাট-জমানার গোঁড়ামি থেকে যে তিনি বেরিয়ে আসতে চান, সেটা আজ সাংবাদিক বৈঠকে স্পষ্টই বুঝিয়ে দিয়েছেন ইয়েচুরি। সিপিএম সূত্র বলছে, দলীয় নীতিতেও তার সমর্থন রয়েছে। রাজনৈতিক ও কৌশলগত লাইন সম্পর্কিত দলীয় রিপোর্টের ২৯ ও ৩০ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে সকল ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দল সম্পর্কে মন খোলা রাখতে হবে কৌশলগত কারণে। ফলে মতাদর্শগত জোট না-হলেও কংগ্রেসের সঙ্গে কৌশলগত আসন সমঝোতা হতেই পারে।

কংগ্রেসের সঙ্গে চলার প্রশ্নে খোলা মনেই এগোতে চান ইয়েচুরি।

state news Sitaram Yechury
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy