Advertisement
E-Paper

রবীন্দ্র-গানের স্বরলিপিকারদের স্মরণ ছোটপর্দায়

নিজে স্বরলিপি লিখতেও পারতেন না। কেবলই ভুলতেন গানের কথা ও সুর। এতে তাঁর নিজের সুরের যেমন হেরফের ঘটত, কথার উপরেও কেরামতি চালাতেন অন্য গায়ক-গায়িকারা।

আবীর মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১০ মে ২০১৬ ০৩:৪২

নিজেই লিখছেন, নিজের গান নিজে মনে রাখতে পারতেন না তিনি!

নিজে স্বরলিপি লিখতেও পারতেন না। কেবলই ভুলতেন গানের কথা ও সুর। এতে তাঁর নিজের সুরের যেমন হেরফের ঘটত, কথার উপরেও কেরামতি চালাতেন অন্য গায়ক-গায়িকারা। ‘নিজের রচনায় রচয়িতার দায়িত্ব পাকা’ করতে তাই রবীন্দ্রনাথ নির্ভর করেছিলেন স্বরলিপিকারদের উপর। তাঁর গানের ভাণ্ডারী দিনুঠাকুর-সহ, তেমন তিরিশজন রবীন্দ্রগানের স্বরলিপিকারকে নিয়ে এ বার কবিপক্ষে ১২ পর্বের একটি অনুষ্ঠান শুরু করল দূরদর্শন। সোমবার ছিল তার প্রথম পর্ব।

বাংলা স্বরলিপিকে ব্যবহারযোগ্য করে তোলেন প্রথম জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর। আর কবির গানকে প্রথম যুগে যাঁরা সেই স্বরলিপির খাঁচায় ধরে রাখলেন, তাঁরা হলেন প্রতিভাদেবী, সরলাদেবী, ইন্দিরাদেবী চৌধুরানী প্রমুখ। দিলীপকুমার রায়ের সঙ্গে আলাপচারিতায় কবি নিজেই বলেছিলেন, ‘‘তুমি কি বলতে চাও যে আমার গান যার যেমন ইচ্ছা সে তেমনিভাবে গাইবে? আমি তো নিজের রচনাকে সেরকমভাবে খণ্ডবিখণ্ড করতে অনুমতি দেইনি।... আজকালকার দিনে ছাপাখানা ও স্বরলিপি প্রভৃতি উপায়ে নিজের রচনায় রচয়িতার দায়িত্ব পাকা করে রাখা সম্ভব, তাই রচনাবিভাগে সরকারি যথেচ্ছাচার নিবারণ করা সহজ এবং করা উচিত।’’ আপন গানের সংরক্ষণে স্বরলিপিকারদের সাহায্য নিয়ে সেই ব্যবস্থাই করেছিলেন কবি। ছোটপর্দায় বারো দিনের বারোটি পর্বের মধ্য দিয়ে জানা যাবে সেই সব স্বরলিপিকারদের কথা। সঙ্গে রয়েছে প্রাসঙ্গিক গান, তার রাগ-তাল-লয় এবং রচনার প্রেক্ষাপট।

রবীন্দ্রনাথের গান নিয়ে চর্চা হলেও, তাঁর স্বরলিপিকারদের নিয়ে এমন অনুষ্ঠান কমই হয়েছে। স্বরলিপিকারদের নিয়ে মূল গবেষণাটি করেছেন পীতম সেনগুপ্ত। শ্রী সেনগুপ্ত বর্তমানে দিল্লিতে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে কর্মরত। অনুষ্ঠানে তথ্য ও ভাষ্যপাঠ করেছেন পীতমবাবু এবং ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায়। পীতমবাবু বলেন, ‘‘১৪৩ বছরের যাত্রাপথের অভিজ্ঞতা বলে যে, স্বরলিপি ছাড়া রবীন্দ্রনাথের গান গাওয়া যায় না। এবং এটিই দস্তুর। কিন্তু ক’জন জানেন এই গানের আড়ালে রয়ে যাওয়া গুণী ব্যক্তিদের কথা, যাঁরা কবির গান ও সুরকে বেঁধে রেখেছিলেন কলমের নিখুঁত আঁকিবুকির আঁচড়ে। আমি সেই সমস্ত স্বরলিপিকারকে সকলের দরবারে পরিচিত করাতে চেয়েছি।’’

নিজের গানের শুদ্ধরূপটিকে রক্ষা করতে চেয়ে, কবি এতই ভাবতেন, যে কখনও-সখনও সংশয়ও প্রকাশ করেছেন তাঁর স্বরলিপিকারদের করা স্বরলিপি নিয়ে। ১৯১৪-য় রামগড়ের ‘হৈমন্তী’ বাড়ি থেকে ‘জ্যোতিদাদা’কে একটি চিঠিতে যেমন তিনি লিখছেন, ‘‘আমার মুশকিল এই যে সুর দিয়ে আমি সুর ভুলে যাই। দিনু কাছে থাকলে তাকে শিখিয়ে দিয়ে বেশ নিশ্চিন্ত মনে ভুলতে পারি। নিজে যদি স্বরলিপি করতে পারতুম কথাই ছিল না। দিনু মাঝে মাঝে করে কিন্তু আমার বিশ্বাস সেগুলো বিশুদ্ধ হয় না। সুরেন বাঁড়ুজ্যের সঙ্গে আমার দেখাই হয় না, কাজেই আমার খাতা ও দিনুর পেটেই সমস্ত জমা হচ্ছে।... কলকাতায় গিয়ে এসব গান গাইতে গিয়ে দেখি কেমন ম্লান হয়ে যায়!’’ বলার অপেক্ষা রাখে না, অনুষ্ঠানে এসেছে এমন সব প্রসঙ্গও!

গানে রয়েছেন শিল্পীদের মধ্যে শ্রীনন্দা মুখোপাধ্যায়, রাজশ্রী ভট্টাচার্য, পূবালী দেবনাথ, জয়তী চক্রবর্তী, শ্রাবণী সেন, প্রবুদ্ধ রাহা, মনোজ মুরলী নায়ার প্রমুখ। যন্ত্র সঙ্গীতে সঙ্গত করেছেন এস্রাজে সৌগত দাস, নন্দন দাশগুপ্ত, বাঁশিতে সৌম্যজ্যোতি ঘোষ প্রমুখ। ‘তোমার কথা হেথা কেহ তো বলে না’ শীর্ষক অনুষ্ঠানটি প্রতি সোমবার কলকাতা দূরদর্শনে ‘চিরদিনের গান’ বিভাগে কবিপক্ষে সম্প্রচারের উদ্যোগ নিয়েছে প্রসার ভারতী।

tagore Small screen notation writers
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy