নর্দমা নেই। তাই বিজেপি। শৌচালয় নেই। তাই বিজেপি।
চেতলা লকগেট সাইডিং বস্তির বাসিন্দাদের তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি সমর্থক হয়ে ওঠার অন্যতম কারণ এই ধরনের ন্যূনতম পুর পরিষেবার অভাব।
বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ ওই বস্তিতে গিয়ে বাসিন্দাদের ঘরে গিয়েছিলেন গত বুধবার। তাঁকে দেখার জন্য সে দিন ওই বস্তির উঠোনে যথেষ্ট ভিড় হয়েছিল। বস্তির সামনের মাঠে অমিতের সভা শুনতেও জড়ো হয়েছিলেন বেশ কিছু মানুষ। ওই বস্তি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের খাস তালুক ভবানীপুরের মধ্যে। এ হেন এলাকায় অমিতের প্রতি মানুষের আগ্রহ এবং আতিথেয়তার বহর দেখে বিজেপি দাবি করছে, নানা কেলেঙ্কারি এবং সরকারের সংখ্যালঘু তোষণের জেরে ওই বস্তির বাসিন্দারা তৃণমূল ছেড়ে তাদের দিকে আসছেন।
কিন্তু অমিতের চেতলা সফরের ৭২ ঘণ্টা পরে ওই বস্তিতে গিয়ে জানা গেল, সেখানকার বাসিন্দারা ২০১৪ সাল থেকে বিজেপি-র দিকে ঝুঁকেছেন এবং তার অন্যতম কারণ বস্তি উন্নয়ন না হওয়ার ক্ষোভ। কল্পনা মণ্ডল, অতনু মণ্ডল, সন্ধ্যা বৈদ্য-সহ বস্তিবাসীরা জানান, তিন বছর আগে থেকে বিজেপি করা সত্ত্বেও গত বছর বিধানসভা নির্বাচনে তাঁরা তৃণমূলকেই ভোট দিয়েছিলেন। তাঁদের ২৬৯ নম্বর বুথে ২০১৪ সাল থেকে পরপর সব ভোটে তৃণমূলই এগিয়ে থেকেছে। কারণ, তৃণমূলের স্থানীয় কাউন্সিলর ওই বস্তিতে পাকা রাস্তা, পানীয় জল এবং বিদ্যুতের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। কিন্তু নর্দমা এবং শৌচালয়ের দাবি মেটেনি। সামান্য বৃষ্টিতেই আদিগঙ্গার নোংরা জলে পানীয় জলের কল ডুবে যায়। দূষিত জল ঢুকে পড়ে ঘরে। এই অবস্থায় বিজেপি-কে বিকল্প হিসাবে খুঁজে নিয়েছেন তাঁরা।
ওই বস্তি কলকাতা পুরসভার যে ৮২ নম্বর ওয়ার্ডে, এক সময় তার কাউন্সিলর এবং বরো চেয়ারম্যান ছিলেন অধুনা মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তাঁর বাড়িও ওই এলাকায়। বস্তিবাসী অর্জুন মাইতির অভিযোগ, ‘‘ফিরহাদ হাকিমের তরফে কাজল বলে এক জন এই বস্তির দায়িত্বপ্রাপ্ত। তাঁর কাছে গেলেই তিনি বলেন, বস্তির বাসিন্দারা তিন-চারটে রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করে। তাই এখানে কী করে উন্নয়ন হবে?’’ স্থানীয় কাউন্সিলর তাঁদের দাবি পূরণ করলে তাঁরা কি ফের তৃণমূলে ফিরে যাবেন? বস্তিবাসীদের তরফে বুদ্ধেশ্বর বৈদ্য বলেন, ‘‘আর যাব না। আবার তৃণমূলে যাব, আবার ওরা একটা কাজ করে বন্ধ করে দেবে, তখন কি ফের বিজেপি-তে যাব? তা হয় না!’’
৮২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রণব বিশ্বাস অবশ্য বলছেন, ‘‘ওই বস্তি কলকাতা বন্দরের জমিতে। বন্দর কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র ছাড়া ওই কাজ করা যাবে না। ওখানে শৌচালয় হলে আবর্জনা আদি গঙ্গায় মিশবে। তখন মামলাও হয়ে যেতে পারে। কারণ আদালতের নির্দেশ আছে, আদি গঙ্গাকে দূষণমুক্ত রাখতেই হবে।’’