Advertisement
০১ মে ২০২৪

বাবাকে খুনে অভিযুক্ত ছেলে আত্মঘাতী

বাবাকে খুন করায় অভিযুক্ত ছেলে ইদের সকালে গিয়েছিলেন মায়ের কাছে ক্ষমা চাইতে। নমাজে ব্যস্ত মা ছেলের কথায় সাড়া দিতে পারেননি। সাড়া না পেয়ে মাথায় পাইপগান ঠেকিয়ে ট্রিগার টিপে দেন ছেলে আশরাফুল শেখ (৪৬)। ন’বছর আগে বাড়ির উঠোনের যে অংশে তিনি বাবাকে খুন করেছিলেন বলে অভিযোগ, ঠিক সেখান থেকেই তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

হালিমা বেওয়া

হালিমা বেওয়া

নিজস্ব সংবাদদাতা
বেলডাঙা শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৫ ০৩:২১
Share: Save:

বাবাকে খুন করায় অভিযুক্ত ছেলে ইদের সকালে গিয়েছিলেন মায়ের কাছে ক্ষমা চাইতে। নমাজে ব্যস্ত মা ছেলের কথায় সাড়া দিতে পারেননি। সাড়া না পেয়ে মাথায় পাইপগান ঠেকিয়ে ট্রিগার টিপে দেন ছেলে আশরাফুল শেখ (৪৬)। ন’বছর আগে বাড়ির উঠোনের যে অংশে তিনি বাবাকে খুন করেছিলেন বলে অভিযোগ, ঠিক সেখান থেকেই তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

শনিবার মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা থানার দেবপুরের ঘটনা। জেলার পুলিশ সুপার সি সুধাকর বলেন, ‘‘বাবাকে খুনের অভিযোগে ন’বছর ধরে পুলিশ আশরাফুলকে খুঁজছিল। এ দিন পাইপগান থেকে গুলি চালিয়ে তিনি আত্মঘাতী হন। পাইপগানটি উদ্ধার করা হয়েছে। কোথা থেকে তিনি আগ্নেয়াস্ত্রটি পেলেন, তা দেখা হচ্ছে।’’

স্থানীয় সূত্রের খবর, বাবা আমির শেখের সঙ্গে সম্পর্ক খুব ভাল ছিল না বড় ছেলে আশরাফুলের। সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার কারণ আশরাফুলের মেজাজ। ২০০৬ সালে চার ছেলেমেয়ের মধ্যে সম্পত্তি ভাগ করার সময় আমির শেখ আশরাফুলকে কিছুই দেননি। সেই রাগেই আশরাফুল তাঁকে কুপিয়ে খুন করেন বলে অভিযোগ। ওই ঘটনায় ছেলের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন মা হালিমা বেওয়া। কিন্তু আশরাফুল গ্রাম ছেড়ে পালান।

এলাকার বাসিন্দা চৈতন্যপুর ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান আব্দুর রাজ্জাক জানান, স্বামী গ্রাম ছাড়ার পরে আশরাফুলের স্ত্রী ও ছেলেমেয়েরা আশ্রয় নেন আশরাফুলের দিদিমার বাড়িতে। গত ন’বছর ধরে কখনও ফোনে, কখনও লুকিয়ে গ্রামে এসে স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন আশরাফুল। মাঝেমধ্যেই মায়ের কাছে গিয়ে নিজের অপরাধ কবুল করে ক্ষমাও চাইতেন। তবে হালিমা নরম হননি।

এ দিন সকালে গ্রামের বেশিরভাগ লোকজন গিয়েছিলেন ইদগাহ ময়দানে। বাড়িতে একা নমাজ পড়ছিলেন হালিমা বেওয়া। আচমকা গুলির শব্দ শুনে পড়শিরা এসে দেখেন, বাড়ির উঠোনে পড়ে রয়েছে আশরাফুলের রক্তাক্ত দেহ।

আশরাফুলের স্ত্রী আসরুনা বিবি জানান, ভিন্-রাজ্যে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন তাঁর স্বামী। তিনি বলেন, ‘‘চার দিন আগে বাড়ি ফিরে পরিবারের সবার জন্য নতুন পোশাক কিনেছিলেন উনি। এ দিন সকালে নতুন জামাকাপড় পরে শাশুড়ির কাছে ফের ক্ষমা চাইতে যান। কিন্তু নমাজে ব্যস্ত থাকায় শাশুড়ি কথা বলেননি। বার বার চেয়েও ক্ষমা না পাওয়ার অভিমানেই হয়তো উনি নিজেকে শেষ করে দিলেন!’’ হালিমা বেওয়া বলেন, ‘‘আশরাফুল বলছিল, ‘মা বাবাকে মারাটা অন্যায় হয়েছে। আমাকে ক্ষমা করে দাও’। ও আগেও এমন বলেছে। তাই ভেবেছিলাম, নমাজ শেষ হলে কথা বলব। সেটুকু অপেক্ষা না করেই ও এমন করে বসল! এত মেজাজ! এই মেজাজের জন্যই ওর বাবা পছন্দ করত না। মেজাজই ওকে শেষ করে দিল!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

father suicide beldanga murshidabad
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE