Advertisement
১১ মে ২০২৪

অগ্রিম দিলেই বাড়ি বয়ে চকলেট

পর পর সাত-আট জনের কাছে ‘না’ শুনতে হয়েছে। তার পরেই এক জন বললেন ‘হ্যাঁ’। চকলেট বোমার খোঁজ করা ক্রেতাকে আপাদমস্তক দেখে নিয়ে বিক্রেতার বক্তব্য, ‘‘হ্যাঁ, পাওয়া যাবে। তবে অ্যাডভান্স লাগবে ২০০ টাকা। ঠিকানা আর ফোন নম্বর দিন। মাল বাড়িতে পৌঁছে যাবে।’’

অঙ্কন: সুমিত্র বসাক

অঙ্কন: সুমিত্র বসাক

মেহবুব কাদের চৌধুরী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:৩৩
Share: Save:

পর পর সাত-আট জনের কাছে ‘না’ শুনতে হয়েছে। তার পরেই এক জন বললেন ‘হ্যাঁ’। চকলেট বোমার খোঁজ করা ক্রেতাকে আপাদমস্তক দেখে নিয়ে বিক্রেতার বক্তব্য, ‘‘হ্যাঁ, পাওয়া যাবে। তবে অ্যাডভান্স লাগবে ২০০ টাকা। ঠিকানা আর ফোন নম্বর দিন। মাল বাড়িতে পৌঁছে যাবে।’’

কারখানা, গুদাম ও দোকানে হানা দিয়ে পুলিশ এ বছর ক্রেতাদেরও ব্যাগ তল্লাশি করছে। কিন্তু তার পরেও তল্লাশি-নজরদারিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে চকলেট বোমার হোম ডেলিভারি চলছে, যাতে ঝুঁকি নেই।

ব্রেবোর্ন রোডের দু’ধারে ফুটপাথে বাজির পসরা সাজিয়ে বসেছেন খুচরো বিক্রেতারা। মাঝবয়সী মহিলা থেকে কিশোর— সকলেই বাজি বিক্রি করছেন। কোনও শব্দবাজি নেই। শুধু ফুলঝুরি, চরকি, রংমশাল, তুবড়ির ছড়াছড়ি। ক্রেতা সেজে আতসবাজি দেখতে দেখতে নিচু গলায় জিজ্ঞেস করা গেল, ‘‘এ সব না! চকলেট বোমা কোথায় পাব?’’ কেউ জবাব দিলেন, ‘‘না না, ও সব পাওয়া যাবে না। ও সব বিক্রি করলে পুলিশ ধরবে।’’ কেউ বললেন, ‘‘এ বার পুলিশ গত কয়েক দিন খুব কড়াকড়ি করছে। বাজি তো ধরছেই, অ্যারেস্টও করে নিচ্ছে। অন্য বাজির প্যাকেটে লুকোনো চকলেট বোমা, দোদমাও টেনে বার করছে।’’

বোঝা গেল ক্রেতা সেজে সাদা পোশাকে পুলিশও বাজির দরদস্তুর করছে। তাই বাড়তি সতর্ক ওই তল্লাটে বাজির খুচরো বিক্রেতারা। লালবাজার বলছে, এখনও পর্যন্ত শহরে আড়াই হাজার কেজিরও বেশি শব্দবাজি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে এবং এই ব্যাপারে ধৃতের সংখ্যা প্রায় হাজার। ডিসি (রিজার্ভ ফোর্স) অশেষ বিশ্বাসের বক্তব্য, নিষিদ্ধ বাজি সব চেয়ে বেশি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে ক্যানিং স্ট্রিট ও আশপাশের তল্লাট থেকেই।

তবু কি নির্মূল হয়েছে শব্দবাজি? ‘না’ ‘না’ শুনতে শুনতেই হঠাৎ মিলে গেল হোম ডেলিভারির আশ্বাস। বছর চল্লিশের এক মহিলা বাজি বিক্রেতা বললেন, ‘‘অগ্রিম টাকা ও ফোন নম্বর দিন। আপনার বাড়িতে চকোলেট বোমা পৌঁছে যাবে।’’ তার পরেই ভয় পেলেন, সাদা পোশাকের পুলিশ নয় তো? পাশের মহিলা কানে কানে কী একটা বলতেই আগের জন বলে উঠলেন, ‘‘না দাদা, চকোলেট বোমা বিক্রি করলে পুলিশ ধরবে।’’ তবে নিরাশ করলেন না বছর একুশের যুবক। পরনে কমলা টি শার্ট ও নীল জিনস। ক্রেতাকে প্রথমে আধ মিনিট জরিপ করলেন তিনি। তার পর গলা নামিয়ে অগ্রিম টাকা চেয়ে বাড়িতে বাজি পৌঁছে দেওয়ার প্রস্তাব। যুবকের কথায়, ‘‘কিচ্ছু ভাবতে হবে না। তবে বাড়িতে ডেলিভারি তো, বাজির দাম ছাড়া আর একটু টাকা লাগবে। আমাদের যাতায়াতের খরচ।’’ বড়বাজারের ওল্ড চায়না বাজারের অপরিসর গলিতে বসে থাকা বিক্রেতাদের এক জনও একই আশ্বাস দিলেন। বললেন, ‘‘টাকা দিয়ে হাতে হাতে বাজি কিনতে পারবেন না। তবে চাইলে আপনার কাছে পৌঁছে দেব। অ্যাডভান্স দেবেন।’’

ব্রেবোর্ন রোডের বিক্রেতা জানালেন, ইতিমধ্যেই তাঁর কাছে দশ জন অগ্রিম টাকা দিয়ে গিয়েছেন। চম্পাহাটি ও নুঙ্গির বাজি কারখানা থেকে পাইকারি দরে চকোলেট বোমা, দোদমা কিনে তা খদ্দেরদের বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হবে। একাধিক বিক্রেতাই কবুল করলেন, সেপ্টেম্বর মাসেই ওই সব জায়গায় প্রচুর চকলেট বোমা, দোদমা, আলুবোমা তৈরি হয়ে গিয়েছে। ‘‘সরকার এখন বারণ করলে কী হবে? ওই বাজিগুলো কি ফেলে দেবে কারিগররা? এক বার যখন তৈরি হয়েছে, তখন বিক্রি হবেই।’’ শনিবার সন্ধ্যায় ময়দানের আশপাশের এলাকা থেকে এক লপ্তে বিপুল পরিমাণ শব্দবাজি বিকট জোরে ফেটেছে। স্থানীয় মানুষজন জানাচ্ছেন, মনে হচ্ছে দীপাবলির মহড়া হয়ে গেল!

অথচ পরিবেশমন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায় কিন্তু স্পষ্টই বলেছেন, শব্দবাজি যিনি কিনবেন, তাঁর বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তা হলে?

ক্যানিং স্ট্রিটের বাজি বিক্রেতা বললেন, ‘‘খদ্দেরদের যাতে সমস্যা না হয়, সেটা দেখতে হবে। সেই জন্যই তো হোম ডেলিভারি করছি। অ্যাডভান্স দিলে আমাদের কাছে আর দ্বিতীয় বার আসার দরকার নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

firecrackers chocolate
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE