পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আইনজীবী আদালতকে জানিয়েছেন, প্রাক্তন মন্ত্রী শারীরিক ভাবেও অসুস্থ। অর্পিতার আইনজীবীরা জামিন চাননি। ফাইল চিত্র।
ভার্চুয়াল শুনানির বদলে আদালতে হাজির হয়ে শুনানিতে যোগ দেওয়ার আর্জি জানিয়েছিলেন পার্থ এবং অর্পিতার আইনজীবী। পার্থ তাঁর আইনজীবীর মাধ্যমে এ-ও জানিয়েছিলেন যে, আদালতে সশরীরে হাজির হওয়া তাঁর মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে। তা থেকে যেন তাঁকে বঞ্চিত না করা হয়। কিন্তু আদালতের নির্দেশে দেখা গেল পার্থ এবং অর্পিতা দু’জনকেই ভার্চুয়াল শুনানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ জেলের বাইরে বেরোনোর ইচ্ছে পূরণ হল না পার্থ-অর্পিতার।
১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পার্থ এবং অর্পিতার জেল হেফাজতের নির্দেশ দিল আদালত। পার্থ আদালতে জামিনের আবেদন করেছিলেন। অর্পিতা করেননি। ফলে অর্পিতা যে জেল হেফাজতেই থাকবেন তা জানা ছিল। এ দিকে, পার্থ আদালতকে বলেছিলেন, তিনি যে কোনও মূল্যে জামিন চান। তাই দেখার ছিল তিনি জামিন পেলেন কি না। শেষ পর্যন্ত দেখা গেল জামিন পাননি পার্থ। তাঁকে আগামী ১৪ দিন জেলেই বন্দি থাকতে হবে।
পার্থ এবং অর্পিতার ভার্চুয়াল শুনানি শেষ, কিছু পরেই নির্দেশ দেবে আদালত। তখনই জানা যাবে, পার্থ জামিন পাবেন কি না। না কি তাঁকে আবার জেল হেফাজতে পাঠানো হবে। প্রসঙ্গত, অর্পিতার তরফে জামিনের আবেদন জানানো হয়নি। ফলে তিনি যে জেল হেফাজতেই থাকবেন, তা নিশ্চিত। পরের দফায় কত দিন, সেটাই জানাবে আদালত।
জামিন চেয়ে পার্থ বললেন, ‘‘যে ফার্ম হাউসের কথা বলা হচ্ছে, তাতে আমার নামে কিছু নেই। অছি হিসাবে আমার কোনও পরিবারের সদস্যেরও নাম নেই। পরিবারের সদস্য বলতে এক জনই। তিনি বিবাহিত এবং আমেরিকায় থাকেন।’’
পার্থের জামিনের আবেদনের পর আদালতকে সিম্বায়োসিস নামে একটি সংস্থার কথা জানাল ইডি। এই সংস্থার শেয়ার ২.৭ কোটি টাকায় বিক্রি হয়েছে বলে দাবি ইডির। তারা জানিয়েছে, এই সংস্থার মাধ্যমে কালো টাকা সাদা করা হয়েছে। অপা ইউটিলিটি নামের সংস্থাটির জমি কিনতেও ভুয়ো সংস্থার নাম ব্যবহার করা হয়েছে।
আদালতে পার্থের আবেদন, ‘‘আমি যে কোনও মূল্যে জামিন চাইছি।’’ পার্থ বললেন, ‘‘আমি অসুস্থ। আমি প্রভাবশালীও নেই। কোনও পদ নেই আমার। দরকারে বাড়িতে নজরবন্দি করে রাখুন।’’ পার্থের আর্জি, তাঁর চিকিৎসা দরকার, বাড়িতে থেকে সেই চিকিৎসা চলুক।
অর্পিতার আইনজীবী জানিয়েছেন, তিনি জামিন চান না। তবে পার্থের মতোই অর্পিতারও আদালতে সশরীরে হাজিরার অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়েছে।
পার্থের জামিনের আবেদনের বিরুদ্ধে ইডির যুক্তির পাল্টা তাঁর আইনজীবীরা বললেন, উনি ৪২ দিন ধরে হেফাজতে রয়েছেন। ওঁর শারীরিক সমস্যার জন্য রোজ ১৭টি করে ওষুধ খেতে হয়। তা ছাড়া উনি কোনও সরকারি পদেও নেই।
তদন্তে নেমে বহু ফ্ল্যাট এবং জমির সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। ইডি-র দাবি সেই সব সম্পত্তি কেনার ক্ষেত্রেও ভুয়ো সংস্থাকে ব্যবহার করা হয়েছিল।
পার্থের আইনজীবীদের পাল্টা যুক্তি দিয়ে ইডি বলল, আরও ২৫টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট পাওয়া গিয়েছে। অন্তত ১০০টি অ্যাকাউন্ট এখনও আতশকাচের তলায়। তদন্তে জানা গিয়েছে, ওই সব ভুয়ো সংস্থায় ‘ডামি ডিরেক্টর’ তৈরি করা হত। ওই পদের জন্য তাঁদের ১৫ হাজার টাকা দেওয়া হত।
পার্থের আইনজীবীরা বললেন, ‘‘ওঁর বাড়ি থেকে তো টাকা বা এলআইসি কিছুই পাওয়া যায়নি। এমনকি, তদন্তে যে সমস্ত ভুয়ো সংস্থার কথা উঠে এসেছে তার মালিকানা বা শেয়ারও ওঁর নামে নয়।’’
আদালতকে পার্থ জানালেন, ভার্চুয়ালি নয়, তিনি কোর্টে সশরীরে হাজিরা দিতে চান। পার্থ বললেন, ‘‘আদালতে সশরীরে হাজির হওয়া আমার মৌলিক অধিকার।’’
পার্থের নানা শারীরিক অসুস্থতার কথা আদালতকে জানালেন তাঁর আইনজীবী। তাঁরা জানিয়েছেন, পার্থের রক্তাল্পতার সমস্যা রয়েছে। হিমোগ্লোবিন কম। ক্রিয়েটিনিনের পরিমাণ বেশি। প্রাক্তন মন্ত্রীর শ্বাসকষ্টের সমস্যাও আছে বলে আদালতকে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। আদালতকে আইনজীবীরা বলেন, পার্থের শিরদাঁড়াতেও সমস্যা রয়েছে।
এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্ত রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের জামিন চেয়ে আবেদন করলেন আইনজীবীরা। আদালতের কাছে তাঁদের প্রশ্ন প্রাক্তন মন্ত্রীর জামিনে আপত্তি কোথায়?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy