Advertisement
E-Paper

দক্ষিণ কড়চা

বাইরে যতই লড়াই থাক, শাসক-বিরোধী এখানে হাত ধরাধরি করে থাকে! পঞ্চায়েত থেকে পুরসভা, বিধানসভা থেকে লোকসভা— ভোট এলেই রাজনৈতিক নেতারা এখানে এসে হাজার হাজার পতাকার ‘অর্ডার’ দিয়ে যান।

শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:৫৪

মাস্টারজি ঝান্ডাওয়ালা

বাইরে যতই লড়াই থাক, শাসক-বিরোধী এখানে হাত ধরাধরি করে থাকে! পঞ্চায়েত থেকে পুরসভা, বিধানসভা থেকে লোকসভা— ভোট এলেই রাজনৈতিক নেতারা এখানে এসে হাজার হাজার পতাকার ‘অর্ডার’ দিয়ে যান।

স্নাতক হওয়ার পরে কাজ মিলছিল না। দেড় দশক আগে কাজের আশায় হুগলির পোলবার ঘাটনির বাসিন্দা ফিরোজ আহমেদ দিল্লি পাড়ি দিয়েছিলেন। সেখানেও তেমন সুবিধা করতে না পেরে গৃহশিক্ষকতা শুরু করেন তিনি। নাম হয়ে যায় ‘মাস্টারজি’। যে বাড়িতে পড়াতেন, সেই বাড়ির কর্তার পতাকা তৈরির ব্যবসা ছিল। তিনিই মাস্টারমশাইকে এই ব্যবসার কথা বলেন। যেমন বলা তেমন কাজ। ফিরোজ ফিরে আসেন বাংলায়। তারপর আমেদাবাদ থেকে ছাপানো পতাকা কিনে এ রাজ্যে বিক্রির ব্যবসা শুরু করে‌ন। প্রথম দিকে কলকাতার বড়বাজারে দোকানে দিয়ে আসতেন। এখন নিজেই বিক্রি করেন। ব্যবসার নাম দিয়েছেন ‘মাস্টারজি ঝাণ্ডাওয়ালা’।

ফিরোজ এবং তাঁর ভাই মহম্মদ ইসরাফিল দু’জনে মিলে এখন এই ব্যবসা সামলান। তাঁরা জানান, এই বারের বিধানসভা ভোটে এখনও পর্যন্ত অন্তত ৫০ লক্ষ পতাকা তৈরির বরাত মিলেছে। নিজেরা তৈরি করেন না কেন? ফিরোজ আহমেদ বলেন, ‘‘এখানে পতাকা তৈরির উপযুক্ত পরিকাঠামো নেই। তাই আমেদাবাদ থেকে তৈরি করিয়ে আনা। এতে খরচ অনেক কম হয়।’’ ফিরোজ জানালেন, তৃণমূলের নেতারা ব্যক্তিগত ভাবে ‘অর্ডার’ দিয়ে যান। কংগ্রেস, বিজেপি নেতারাও তাই। তবে বাম দলগুলি দলগত ভাবে ‘অর্ডার’ দেয়। শুধু পতাকা নয়, টুপি, ব্যাজ থেকে মোটরবাইকে লাগানোর জন্য পতাকা পাওয়া যায় তাঁর কাছে। তবে নির্বাচন কমিশনের কড়াকড়ির জন্য এ বার অবশ্য মোটরবাইকে লাগানোর পতাকার বিক্রি প্রায় নেই। মাস্টারজি জানালেন, পতাকার নকশা প্রথমে কম্পিউটারে আঁকা হয়। তার পর সেটি ই-মেল অথবা হোয়াটস্ অ্যাপ করে আমেদাবাদে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ‘অর্ডার’ যাওয়ার দিন কয়েকের মধ্যেই চলে আসে পতাকা।

ইছামতীর মুখ

যে দেশ নদীমাত্রিক, সেই দেশেই কোনও নদী মন্ত্রক নেই। যে নদী আর্ন্তজাতিক, সেই নদীর দুর্ভোগ আরও চরমে। কূটনীতি আর রাজনীতির নাগপাশে সেই নদীকে নিয়ে অবহেলাও তীব্র। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে বহমান এমনই এক নদীর নাম, ইছামতী। সেই নদী নিয়ে কবিতা, উপন্যাস, চলচিত্র অনেক কিছুই হয়েছে, কিন্তু হয়নি নদীর যথাযথ সংস্কার। এই নদীকে আগের রূপে ফিরিয়ে দেওয়ার আর্তি নিয়েই প্রকাশিত হয়েছে ‘মুখ’ পত্রিকার ‘ইছামতী’ সংখ্যা। ২১শে ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের বেনাপোলে প্রকাশিত পত্রিকার এই সংখ্যাটি আদপে দুই মলাটের ভিতরে ইছামতি নদী পরিক্রমা। মাথাভাঙা হয়ে চূর্ণী নদীর শাখা হিসাবে নদিয়ার মাঝদিয়া থেকে বনগাঁ-বসিরহাটের উপর দিয়ে বয়ে চলেছে ইছামতী। এই নদীই কি বাংলাদেশের কুষ্টিয়া জেলায় শিলাইদহের কাছ দিয়ে প্রবাহিত? এই দুই ইছামতীই এক ইছামতী কি-না সে সম্পর্কে নানান কৌতূহল মেটাবে এই সংখ্যা। ‘মিলেনিয়াম বন্যা’ যা দীর্ঘদিন সংবাদপত্রের শিরোনাম হয়ে উঠেছিল তার কথাও উঠে এসেছে পত্রিকার পাতায়। বিভূতিভূষণের ইছামতি নিয়ে ভিন্ন ভাবনা নিয়ে কবি সন্দীপন চক্রবর্তীর সঙ্গে কথোপকথনও সুপাঠ্য। দীপঙ্কর দাস ও পার্থসারথিদের সম্পাদনা প্রশংসনীয়। পত্রিকা-সূচিতে তুষার কাঞ্জিলাল, কল্যাণ রুদ্র, নিত্যপ্রিয় ঘোষ, নিরঞ্জন বন্দোপাধ্যায়, বিপ্লব চন্দ, অনিল ঘোষ, টুইঙ্কিল দাঁ, বিভাস রায়চৌধুরী ছাড়াও রুকসানা কাজলের মতো বাংলাদেশের লেখকেরাও রয়েছেন।

নববর্ষ বার্তা

নববর্ষ। কারও মনে পড়ে হলুদ-লালে রাঙিয়ে দেওয়া কার্ডগুলোর কথা, কেউ বা আবার মুখ গুঁজে বসে বঙ্গাব্দের ইতিহাস সন্ধান করতেই পছন্দ করেন— এমনই বিচিত্র বিষয় নিয়েই দুই মেদিনীপুর থেকে প্রকাশিত হয়েছে ‘জ্বলদর্চি’র সাম্প্রতিক সংখ্যাটি। ঊর্মি নাথ, অচিন্ত মারিকদের ঝরঝরে গদ্যে পত্রিকাটি এক্কেবারে মেদহীন। সঙ্গে রয়েছে সাহিত্যিক কালকূট, ওড়িশায় রসিকানন্দ ইত্যাদি বিষয়ে বেশ কয়েকটি প্রবন্ধ এবং কবিতা বিভাগ। সোমা ভট্টাচার্যের হাতে পত্রিকার প্রচ্ছদটিও বেশ খুলেছে। নববর্ষ আর আড্ডা হবে না, তাও কি হয়! পত্রিকার উদ্যোগে বুধবার মেদিনীপুর শহরের লোকনাথপল্লিতে আড্ডা বসার কথা। থাকবে গান, কবিতা, ছবিতে এক জমাটি আসর। দিনের আলো দেখবে ‘দৃষ্টিপথ’ নামে একটি নতুন পত্রিকা এবং ‘অমিত্রাক্ষর’ পত্রিকার সাপ্তাহিক সংখ্যা।

নাটকে কাকদ্বীপ

ভোটবাজারের রোজকার আকচাআকচিকে সরিয়ে রেখে সপ্তাহব্যাপী সংস্কৃতি চর্চায় মেতে উঠেছিল কাকদ্বীপের রামগোপালপুর। সম্প্রতি মনসা পুজো উপলক্ষে স্থানীয় আমরা সবাই ক্লাবের উদ্যোগে আয়োজিত হয় যাত্রা, নাটক, নৃত্যনাট্য এবং বিচিত্রানুষ্ঠান। নৃত্যনাট্য পরিবেশন করে স্থানীয় সুরতাল গোষ্ঠী। দক্ষিণের বারান্দা নামে একটি নাট্যগোষ্ঠী মঞ্চস্থ করে নাট্যকার ভৈকম মহম্মদ বসিরের নাটক ‘দেওয়াল’। উৎসব উপলক্ষে প্রতি দিনই ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।

অমৃতকুম্ভের সন্ধানে

শহরের মানুষ হঠাৎ করেই এক দিন দেখলেন নগর সংকীর্তনের ছন্দে পা মিলিয়েছেন তাঁদের চেনা মাস্টারমশাই। ঝাড়গ্রামের বাসিন্দা বছর আটান্নর এই মাস্টারমশাইয়ের শ্রীরামকৃষ্ণের আদর্শের সঙ্গে যোগ সেই ছাত্রাবস্থা থেকেই। স্নাতক স্তরে পড়াশোনা নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনে। ‘শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃত’ পাঠ করতে করতে ঠাকুরের জীবন-আদর্শ মনে ধরে। সেই শুরু। ঝাড়গ্রামের ননীবালা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অমৃতকুমার নন্দীর গোলপার্কের রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অফ কালচারে আগে থেকেই যাতায়াত ছিল। ঝাড়গ্রামের শ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃত পাঠচক্র সেবা সমিতি, ঝাড়গ্রাম চেতনা প্রভৃতি সংগঠনেও তত দিনে তিনি সক্রিয় ভূমিকায়। ঝাড়গ্রামের পাড়ায় পাড়ায় তাঁর উদ্যোগে বসতে থাকল কথামৃত পাঠ, আলোচনার আসর। কলেজজীবন থেকেই লেখালিখি করেছেন নিয়মিত। একে একে লিখে ফেললেন ‘সংসার সংসারী শ্রীরামকৃষ্ণ’, ‘শ্রীরামকৃষ্ণের বিবেকানন্দ’, ‘শ্রীরামকৃষ্ণের সারদা’ নামে তিনটি বই। সমস্ত বইতেই এক জনের উৎসাহ-ঋণ লক্ষ করার মতো—গোলপার্ক ইনস্টিটিউট অফ কালচারের সম্পাদক স্বামী সুপর্ণানন্দ। অমৃতবাবুর লেখা তিনটি বইকে আসলে একটি মাত্র ভাবের ক্রম বিবর্তন বলা চলে। প্রথম বইতে শ্রীরামকৃষ্ণের কথামৃতের নির্যাস সংগ্রহ করেছেন লেখক। ভক্তিভাব থেকে কর্মযোগ, সেখান থেকে মুক্তি— জীবন রহস্যকে ধরার চেষ্টা দেখা যায় বইটিতে। দ্বিতীয় বইটি যেন নরেন থেকে বিবেকানন্দ হয়ে ওঠার কথা বলে। তৃতীয় বইতে রয়েছে ঠাকুরের অসুস্থতায় শ্রীমায়ের অক্লান্ত সেবার কথা। তবে এখানেই থামতে চান না অমৃতবাবু। প্রতিদিন ছাত্র গড়ার কাজ সেরে মাস্টারমশাই এখন ব্যস্ত রানি রাসমণির জীবনের উপাদান সংগ্রহে। তাঁর কথায়, ‘‘আনন্দের সন্ধানেই ঠাকুরের থেকে প্রেরণা পেয়ে এমন কাজ করে চলেছি।’’

cultural news
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy