এই সেই ট্রাস্ট। ছবি: সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়
‘সুজিত দত্ত মেমোরিয়াল ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট’— বছর দু’য়েক আগে বাবার মৃত্যুর পরে তাঁরই নামে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা গড়েছিল মেয়ে। সেই সংস্থা থেকেই চলত শিশু পাচারের কাজ-কারবার! প্রয়াত জাহাজ কর্মী সুজিতবাবুর মেয়ে পলি দত্ত ওরফে উৎপলা ব্যাপারীকে গ্রেফতার করে এই তথ্য জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা।
বাদুড়িয়ার বাগজোলা ও হাবরার মছলন্দপুরের মাঝামাঝি প্রত্যন্ত এলাকা রাঘবপুর। সেখানেই সুজিতবাবুর কয়েক বিঘা জমির উপরে বহু টাকা ব্যয়ে তৈরি হয়েছে ট্রাস্টের ভবন। কাজ ছিল, প্রতি সপ্তাহে এক দিন অসুস্থ, দরিদ্র মানুষদের বিনা খরচে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। এ ছাড়া, প্রতিদিন বিকেলে এলাকার দুঃস্থ মেধাবী শিশুদের পড়াশোনা করানো।
সেই কাজটা জাঁকজমক করেই চলত। এলাকায় বড় বড় পোস্টার সেঁটে ফলাও করে লেখা আছে সে কথা। ট্রাস্টের ভবনের ভিতরে যিশুখ্রিস্ট, সেন্ট টেরিজার বিশাল বিশাল ছবি লাগানো। প্রার্থনার জন্য আলাদা ঘর। একপাশের একতলা ভবনে বড় বড় পাঁচটা ঘর। ভিতরে একটি করে বেড। সদ্যোজাতদের রাখার জন্য ‘কট’।
কী কাজ হতো ওই ঘরগুলি থেকে?
জানা গিয়েছে, প্ল্যাটফর্ম, রাস্তাঘাট, বাজার— বিভিন্ন এলাকায় ভবঘুরে প্রসূতিদের জোগাড় করা হতো লোক লাগিয়ে। ট্রাস্টের নিজস্ব অ্যাম্বুল্যান্সে ওই মহিলাদের আনা হতো এই ঘরে। সেখানে রেখে যত্নআত্তি করে প্রসব করানো হতো। তারপরে ওই শিশুও বেচে দেওয়া হতো দেশ-বিদেশে।
এ ছাড়াও, এক কিলোমিটার দূরের সোহান নার্সিংহোম থেকেও শিশুদের এনে রাখা হতো এখানে। তাদেরও নিঃসন্তান দম্পতিদের কাছে চড়া দামে বিক্রি করে দেওয়া হতো। সিআইডি ইতিমধ্যেই হানা দিয়েছে ট্রাস্টে। সিল করা হয়েছে ভবনটি।
কিন্তু দত্তক নেওয়ার নির্দিষ্ট সরকারি পন্থা না মেনে এ ধরনের ভুঁইফোড় ট্রাস্টের থেকে কেন সন্তান দত্তক নেবেন কেউ?
তপনকুমার বিশ্বাসের বাড়ি। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।
পুলিশের এক কর্তা জানান, সরকারি নিয়ম মেনে দত্তক নেওয়া বেশ সময়সাপেক্ষ। তা ছাড়া, সেখানে ইচ্ছে মতো ছেলে বা মেয়ে সন্তান না-ও পাওয়া যেতে পারে। ছেলে বা মেয়ের গায়ের রঙ কেমন হবে, সে সব নিয়ে বায়নাক্কাও শোনা হয় না। কিন্তু এই ট্রাস্টের কাছে ১-২ লক্ষ টাকার বিনিময়ে ইচ্ছে মতো শিশু মিলে যায়।
মছলন্দপুরের এই ট্রাস্টে সুজিতবাবুর মেয়ে পলি (উৎপলা) ছিল প্রেসিডেন্ট। সত্যজিৎ সিংহ ছিল সম্পাদক। দু’জনেই ধরা পড়েছে সিআইডি-র জালে। জানা যাচ্ছে, সত্যজিতের সঙ্গে ব্যবসায়িক লেনদেন ছাড়াও দু’জনের ‘ঘনিষ্ঠ’ সম্পর্ক ছিল।
পুলিশ জানতে পেরেছে, সমাজসেবার ভেক ধরে বহু বিদেশি লগ্নিও পেত এই ট্রাস্ট। সেই সূত্রে যোগাযোগ হতো বিদেশি মানুষজনের সঙ্গে। পলি-সত্যজিতেরা বিদেশেও শিশু পাচার করেছে বলে জানতে পেরেছে সিআইডি। তবে তদন্ত আরও একটু না এগোনো পর্যন্ত এ নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন তদন্তকারীরা।
অন্য দিকে, গাইঘাটার বড়া গ্রামের চিকিৎসক তপনকুমার বিশ্বাসের বাড়িতেও এ দিন হানা দেয় সিআইডি। ওই চিিকৎসক অবশ্য পলাতক। সে আদৌ ডিগ্রিধারী নাকি স্রেফ হাতুড়ে, তা নিয়ে সংশয়ে আছেন তদন্তকারীরা। সোহান নার্সিংহোমের সঙ্গে যুক্ত ওই চিকিৎসকও শিশু পাচার চক্রে জড়িত বলে সন্দেহ সিআইডির। তার বিশাল বাড়িতেও অবৈধ গর্ভপাত করানো হতো বলে অনুমান তদন্তকারীদের। বাদুড়িয়ার ওই নার্সিংহোমে প্রসূতিদের যেতে উৎসাহী করতে তপন আর তার লোকজন গ্রামে মাইক নিয়ে প্রচার চালাত বলে জানিয়েছেন স্থানীয় মানুষজন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy