Advertisement
E-Paper

পিঁপড়েও রুখে দিচ্ছে বিএসএফ

বিএসএফের এক পদস্থ কর্তা জানান, বেশ কয়েক জনকে সীমান্ত  ব্যাটেলিয়ন অফিসে তলব করে দফায় দফায় জেরার কাজ চলছে সকাল থেকে।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৭ ০২:৫৩
খানাতল্লাশি: সীমান্তের খেতে যাওয়ার পথে বিএসএফের তল্লাশি। বুধবার রঘুনাথগঞ্জের চর পিরোজপুরে। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়

খানাতল্লাশি: সীমান্তের খেতে যাওয়ার পথে বিএসএফের তল্লাশি। বুধবার রঘুনাথগঞ্জের চর পিরোজপুরে। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়

পদ্মার বাঁকে বাংলাদেশের চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলায় জঙ্গি ঘাঁটিতে পুলিশি অভিযানের সুতোয় জড়িয়ে গেল মুর্শিদাবাদের নাম। শুধু মুর্শিদাবাদ নয়, বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া মালদহ জেলাতেও রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। সতর্ক করা হয়েছে পড়শি জেলা নদিয়াকেও।

ওই তিন জেলায়, পদ্মার বাঁকে প্রহরায় থাকা সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ৩৬ এবং ৪ নম্বর ব্যাটেলিয়নের কাছে নির্দেশ এসেছে— আপাতত পারাপার বন্ধ। আশপাশের গ্রামগুলিতেও স্থানীয় পুলিশের সাহায্যে শুরু হয়েছে চিরুনি তল্লাশি। তবে, রাত পর্যন্ত পাওয়া খবরে দুই জেলার সীমান্ত লাগোয়া গ্রামে কয়েক জনকে জেরা করা হলেও সন্দেহভাজন হিসেবে কাউকে গ্রেফতারের খবর নেই।

বিএসএফের এক পদস্থ কর্তা জানান, বেশ কয়েক জনকে সীমান্ত ব্যাটেলিয়ন অফিসে তলব করে দফায় দফায় জেরার কাজ চলছে সকাল থেকে। সেই তালিকায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিও রয়েছেন।


নজরদারি: সীমান্তে জারি ‘রেড অ্যালার্ট’। —নিজস্ব চিত্র

চাঁপাই নবাবগঞ্জ সদর উপজেলার এই চর এলাকা ভারত-বাংলাদেশ চোরা চালানের যে স্বর্গরাজ্য, তা নতুন কোনও তথ্য নয়। কয়েক বছর ধরে ওই নিঝুম চর, জামাতে ইসলামির নিশ্ছিদ্র ঘাঁটি হয়ে উঠেছে বলে বিএসেএফের কাছে খবর। তেমনই, নদিয়ার বেশ কিছু এলাকাতেও দু’দেশের মধ্যে চলাচল এত অনায়াস হয়ে উঠেছে যে সে পথে জঙ্গিদের যাতায়াতও অবাধ বলে মনে করছে সীমান্ত রক্ষী বাহিনি। চাঁপাই নবাবগঞ্জের চর আলতুলিতে জঙ্গি ধরপাকড়ের জেরে সেই চেনা তথ্য আরও সামনে এসে পড়েছে। আর পরোক্ষে জড়িয়ে সেই সুতোয় জড়িয়ে দিয়েছে মালদহ-মুর্শিদাবাদ-নদিয়ার সীমান্তগুলিকেও।

মঙ্গলবার ভোরে তখনও আঁধার কাটেনি বাংলাদেশ র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র‌্যাব) ঘিরে ফেলেছিল ওই চরের বেশ কয়েকটি বাড়ি। কয়েক পা এগোতেই একটি টিনের চালার বাড়ি থেকে পাল্টা উড়ে আসে গ্রেনেড। এর পরেই শুরু হয়েছিল গুলির লড়াই। প্রায় ঘণ্টা দুয়েক ধরে গুলির লড়াই শেষতক ঝিমিয়ে এলে ওই গুঁড়িয়ে যাওয়া টিনের ঘর থেকে তিন জঙ্গির ছিন্নভিন্ন দেহ মেলে। র‌্যাবের দাবি, মৃতেরা সকলেই জেএমবির সক্রিয় সদস্য। বড় ধরনের নাশকতার ছক কষতেই তারা ওই চরে আস্তানা গেড়েছিল। ওই ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওই বাড়ির মালিক রসিকুল ইসলাম তার স্ত্রী নাজমা বেগম এবং কুরশেদ আলমকে গ্রেফতার করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। তবে, কোথায় তাদের নাশকতার পরিকল্পনা ছিল সে ব্যাপারে ভেঙে বলতে চায়নি র‌্যাব।

তবে, সন্ধ্যা নামলেই খান্দুয়া, ভগবানগোলার চর লবনগোলা, রঘুনাথগঞ্জের বাহুরা-সহ বেশ কয়েকটি সীমান্ত চৌকি এলাকা দিয়ে গরু ও মাদক পাচরের ঘটনার সঙ্গে প্রায় সড়গড় হয়ে গিয়েছেন স্থানীয় গ্রামবাসীরা। বাধা দিলে তার ‘শাস্তি’ও অজানা নয়, জানেন তাঁরা।

সীমান্তের শস্যখেত মাড়িয়ে পিঁপড়ের পালের মতো গবাদি পশু নদী পার হয়ে বাংলাদেশে চালান যাওয়াটা মুর্শিদাবাদ জেলার পদ্মাপাড়ের কাছে নিতান্তই স্বাভাবিক ঘটনা। নদিয়ার মুরুটিয়া, শিকারপুর, গান্ধিনাও এর সাক্ষী। তারকাঁটার বেড়া সেখানে কোনও বাধাই নয়। গত সোমবার পর্যন্ত তারকাঁটা ডিঙিয়ে গবাদি পশু ও সঙ্গে পাচারকারী ওপারে পার হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান। সেই প্রাত্যহিক চেনা ছবিটা দু’ দিন ধরে বদলে গিয়েছে। গত মঙ্গলবার সকাল থেকে সীমান্ত এলাকা দিয়ে পিঁপড়েও না গলার মতো নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করেছে বিএসএফ। ফরাক্কা থেকে জলঙ্গি, পদ্মা বরাবর বাংলাদেশ সীমান্তের দৈর্ঘ ১৭২ কিলোমিটার। তার মধ্যে অর্ধেকের কম এলাকায় রয়েছে কাঁটাতারের বেড়া। বাকিটা জল সীমান্ত। স্থানীয় বাসিন্দারা যাঁকে বলেন, ‘পাচার-পথ’। চাঁপাই নবাবগঞ্জের ঘটনার পর সেই সীমান্তের চেহারাটাই বদলে গিয়েছে যেন।

জমি চাষ করতে যাওয়া স্থানীয় নিত্যকার মুখে চেনা গ্রামবাসীদেরও তল্লাশির বহর দেখে অবাক হয়ে গিয়েছেন গ্রামবাসীরা। জলা জমির ঘেরাটোপে স্তব্ধ চরে, যেখানে বিএসএফের পা পড়ত কদাচিৎ, বুধবার থেকে সেখানে চষে বেড়াচ্ছে ভারী বুট। রানিনগর, জলঙ্গির পদ্মার বাঁকে এ দিন চোখ থেকে বাইনোকুলারও-ই নামল না বিএসএফ কর্মীদের। এখন দেখার, এই গহিন নিরাপত্তার বেষ্টনী কত দিনের! শীত ফিরছে, কুয়াশা নামছে বিকেল থেকেই, সীমান্ত সুরক্ষিত তো?

তথ্য সহায়তা: অনল আবেদিন, বিমান হাজরা, সুজাউদ্দিন

BSF Bongaon Bangladesh বাংলাদেশ
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy