Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
JU Student Death

মৃত্যুর নেপথ্যে কি হস্টেলে ‘বেআইনি ভাবে’ থাকা প্রাক্তনীরা? র‌্যাগিংয়ের হোতা তাঁরাই?

সোমবার থেকে বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হয়েছে। হস্টেলে এক বন্ধুর সঙ্গে থাকছিলেন। সেখানেই ঘটল বিপত্তি। আঙুল কি সহ-আবাসিকদের দিকে? না কি ‘বেআইনি’ ভাবে থাকা আবাসিকদের দিকে?

image of JU student

রহস্যমৃত্যু যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের পড়ুয়া স্বপ্নদীপ কুন্ডুর। গ্রাফিক্স: শৌভিক দেবনাথ।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০২৩ ১৩:৫৭
Share: Save:

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন হোস্টেল থেকে ‘পড়ে গিয়ে’ ছাত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যুতে র‌্যাগিংয়ের অভিযোগ তুলেছে পরিবার। পরিবারের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ পেয়ে যাদবপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এই গোটা ঘটনায় আরও একটি বিষয় প্রকাশ্যে এসেছে। আঙুল উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে ‘বেআইনি ভাবে’ থেকে যাওয়া প্রাক্তনীদের দিকে। ছাত্রদের একাংশের দাবি, হোস্টেলে ‘র‌্যাগিং’-এর নেপথ্যে রয়েছেন মূলত তাঁরাই। এই দাবিতে সিলমোহর দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠনের সভাপতি পার্থপ্রতিম রায়। তিনি অভিযোগ করেছেন, যাঁরা পড়ুয়া নন, আবাসিক নন, তাঁদের এখনই হোস্টেল থেকে বার করে দেওয়া হোক। তা হলেই হোস্টেলের পরিবেশ ‘সুস্থ’ হবে।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেলের ‘এ’ ব্লকের তৃতীয় তলার বারান্দা থেকে ‘কোনও ভাবে’ পড়ে গিয়ে মৃত্যু হয় স্বপ্নদীপের। তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে জল্পনা তৈরি হয়েছে। তবে তাঁর পরিবার এই দাবি মানেনি। স্বপ্নদীপের মামা অরূপ কুন্ডু দাবি করেছেন, র‌্যাগিং করা হয়েছে তাঁর ভাগ্নেকে। বুধবার রাতে মাকে ফোন করে ‘ভাল নেই’ বলে জানিয়েছিলেন স্বপ্নদীপ। প্রশ্ন উঠছে, কারা র‌্যাগিং করেছিলেন স্বপ্নদীপকে? হস্টেলের সহ-আবাসিকেরা? অরূপ জানিয়েছেন, সোমবার থেকে বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হয়েছে। হস্টেলে জায়গা পাননি স্বপ্নদীপ। এক বন্ধুর সঙ্গে থাকছিলেন। সেখানেই এই ঘটনা।

তবে স্বপ্নদীপ একা নন, অভিযোগ, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলে এমন অনেকেই থাকেন, যাঁরা পড়ুয়া নন। আবাসিক নন। বহু বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে বেরিয়ে গিয়েছেন। এখন চাকরি করছেন। তবু হোস্টেলেই থাকেন। অন্য কোনও আবাসিকের সঙ্গে ভাগাভাগি করে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পড়ুয়া জানিয়েছেন, এই প্রাক্তনীরা প্রায়ই হস্টেলে মত্ত অবস্থায় ঝামেলা করেন। র‌্যাগিং করেন। তাঁর আশঙ্কা, স্বপ্নদীপের রহস্যমৃত্যুর নেপথ্যেও এ রকম প্রাক্তনীদের হাত থাকতে পারে।

জুটার প্রেসিডেন্ট পার্থপ্রতিম মেনে নিয়েছেন যে, স্বপ্নদীপের মৃত্যু স্বাভাবিক নয়। তিনি বলেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে যতটা জানা যাচ্ছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে স্বাভাবিক মৃত্যু নয়। মর্মান্তিক ঘটনা।’’ তিনি জানিয়েছেন, বুধবার রাতে যাদবপুরের বেসরকারি হাসপাতালে ওই ছাত্রকে নিয়ে যাওয়ার পর এসএসকেএমের ট্রমা সেন্টারে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু অবস্থার অবনতি হওয়ায় তা সম্ভব হয়নি। এর পরেই দোষীদের শাস্তির দাবিতে সরব হয়েছেন পার্থপ্রতিম। তিনি বলেন, ‘‘যাঁরা দোষী, তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে শাস্তি দেওয়া হোক। আরও দাবি জানাচ্ছি, যাঁরা হস্টেলে বেআইনি ভাবে রয়েছেন, যাঁরা পড়ুয়া নন, আবাসিক নন, তাঁদের যেন এখনই হস্টেল থেকে চলে যেতে বলা হয়। যাতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির হস্টেলের পরিবেশ একটু সুস্থ, স্বাভাবিক হয়।’’

পার্থপ্রতিমের দাবি, এমন বহু প্রাক্তনী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে যাওয়ার পরেও হস্টেল ছাড়েননি। তাঁর কথায়, ‘‘বহু বছর আগে পাশ করেছেন ওই পড়ুয়ারা। চাকরি করছেন। তাঁদের বড় অংশ বেআইনি ভাবে হস্টেলে থাকছেন। বার বার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, তাঁরা বেআইনি ভাবে থাকছেন। তাঁদের থাকার কথা নয়।’’ তিনি আরও বললেন, ‘‘আবাসিকেরা সচেতন না হলে এই ঘটনা চলতেই থাকবে। দায় সকলকে নিতে হবে।’’

স্বপ্নদীপের পরিবার অবশ্য যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ করেননি। অরূপ জানিয়েছেন, বাংলার ক্লাস করতে বেশ ভালই লাগছিল স্বপ্নদীপের। বাবাকে ফোন করে সে কথা জানিয়েছিলেন। এই ঘটনার পর, বৃহস্পতিবার বাংলা বিভাগে প্রথম বর্ষের ক্লাস হয়নি। বিভাগীয় প্রধান প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁদের পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সাহায্য করেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jadavpur University Ragging JUTA Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE