Advertisement
E-Paper

পূর্বাভাস গুলিয়ে হঠাৎ হাওয়া বদল

হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস বলেছিল, সোমবার দক্ষিণবঙ্গে তাপমাত্রা চড়বে। গত ক’দিন যে রকম ভ্যাপসা গরম যাচ্ছিল, সেটাও আরও বাড়বে। সকালে খবরের কাগজে সেই পূর্বাভাস পড়ার আগেই অবশ্য এ দিন ঘুম ভেঙে যায় লোকজনের। মুষলধার বৃষ্টি আর কড়কড় করে ঘনঘন বাজ পড়ার শব্দ!

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০১৬ ০৯:৩৯

হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস বলেছিল, সোমবার দক্ষিণবঙ্গে তাপমাত্রা চড়বে। গত ক’দিন যে রকম ভ্যাপসা গরম যাচ্ছিল, সেটাও আরও বাড়বে।

সকালে খবরের কাগজে সেই পূর্বাভাস পড়ার আগেই অবশ্য এ দিন ঘুম ভেঙে যায় লোকজনের। মুষলধার বৃষ্টি আর কড়কড় করে ঘনঘন বাজ পড়ার শব্দ! প্যাচপ্যাচে ঘাম শুকিয়ে ঠান্ডা আমেজ। দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রাস্বাভাবিকের থেকে এক ধাক্কায় ৭ ডিগ্রি কমে ২৭.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস!

তা হলে পূর্বাভাসের কী হল? জানতে চেয়ে বারবার ফোন এসেছে সংবাদপত্রের অফিসে। পশ্চিমী দুনিয়ারদেশগুলিতে আবহাওয়ার পূর্বাভাস কিন্তু জনজীবনের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। দিনটা কেমন কাটবে, আগাম তা দেখে নিয়েই পথেঘাটে বেরোন লোকজন। আবহাওয়ার জন্য আলাদা টিভি চ্যানেল রয়েছে। নির্দিষ্ট এলাকাভিত্তিক পূর্বাভাসও সেখানে দেওয়া হয়।

এখানে তবে উলটপুরাণের কারণ কী? দু’দশক আগেও আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস মেলা না-মেলা নিয়ে রীতিমতো রসিকতা চালু ছিল সমাজে। বলা হতো, হাওয়া অফিস বৃষ্টির কথা বললে ছাতা-রেনকোট বাড়িতে রেখে নিশ্চিন্তে বেরনো যেতে পারে। আবহাওয়া দফতরের প্রবীণ বিজ্ঞানীরা বলেন, সে সময় হাওয়া অফিসের বিজ্ঞান-প্রযুক্তি তেমন উন্নত ছিল না। ফলে জল-হাওয়ার সূক্ষ্ম তারতম্য ধরা যেত না। কিন্তু গত এক দশকে অনেক বদলেছে হাওয়া অফিসের পরিকাঠামো। এখনও তবে কেন উল্টে যায় পূর্বাভাস?

নিজেদের পর্যবেক্ষণ আরও নির্দিষ্ট ও নিখুঁত করতে সম্প্রতি পুণের আবহবিজ্ঞান দফতরে বৈঠকে বসেছিলেন মৌসম ভবনের কর্তারা। কী ভাবে পূর্বাভাস আরও নিখুঁত করা যায়, তা নিয়ে বিশদে আলোচনাও হয়েছে। কিন্তু এ দিন পূর্বাভাসের যা পরিণতি হয়েছে, তাতে যারপরনাই অস্বস্তিতে আবহাওয়া দফতরের কর্তারা। পূর্বাভাস না মিললে বিশ্বাসযোগ্যতা কমতে পারে, সেটাও বুঝতে পারছেন তাঁরা। এ দিন তাই ঘনিষ্ঠমহলে এক পদস্থ আবহবিজ্ঞানীর মন্তব্য, ‘‘সত্যিই বেকুব বনে গিয়েছি!’’

যদিও পূর্বাভাস না মেলা নিয়ে কেন্দ্রীয় আবহবিজ্ঞান দফতরের বিজ্ঞানীদের একাংশের ব্যাখ্যা, হঠাৎ আবহাওয়ার পরিবর্তন ঘটলে তা এক দিন আগের পূর্বাভাসে (ফোরকাস্ট) বলা যায় না। দিনের বেলা বা সন্ধ্যায় এমনটা হলে তা হয়তো জানিয়ে দিতে পারত হাওয়া অফিস। কিন্তু বদলটা গভীর রাতে হওয়ায় সেই জলদি-বার্তা (নাউকাস্ট) জানানো যায়নি। এক আবহবিদের মন্তব্য, ‘‘পূর্বাভাস মেলানোর ক্ষেত্রে ১০০ শতাংশ নিখুঁত হওয়া সম্ভব নয়। পশ্চিমী দুনিয়াতেও সব সময় পূর্বাভাস মেলে না।’’

হাওয়া অফিসের ব্যাখ্যা, রবিবার রাত পর্যন্ত আবহাওয়ার পরিস্থিতি দেখে় পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু গভীর রাতে আবহাওয়ায় আচমকা বদল ঘটে। কী রকম?

আবহবিজ্ঞানীরা বলছেন, রবিবার রাতে বিহারের উপরে একটি ঘূর্ণাবর্ত ছিল। রাতে বিহারের উত্তরপ্রদেশ লাগোয়া অঞ্চলে একটি বজ্রগর্ভ মেঘপুঞ্জ তৈরি হয়েছিল। বায়ুপ্রবাহের অভিমুখ মেনে সেটির বয়ে যাওয়ার কথা ছিল উত্তরবঙ্গের দিকে। কিন্তু গভীর রাতে বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ-মায়ানমার উপকূলে আর একটি ঘূর্ণাবর্ত দানা বাঁধে এবং বিহারের ঘূর্ণাবর্ত থেকে মায়ানমার উপকূলের ঘূর্ণাবর্ত পর্যন্ত একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখা তৈরি হয়। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল (পূর্বাঞ্চল) গোকুলচন্দ্র দেবনাথ বলেন, নিম্নচাপ অক্ষরেখা তৈরি হলে বজ্রগর্ভ মেঘ সাধারণত সেই অক্ষরেখা বরাবর এগিয়ে যায়। এ ক্ষেত্রেও তেমনটা হওয়ায় সোমবার ভোরে বিহারের বজ্রগর্ভ মেঘপুঞ্জটি দক্ষিণবঙ্গে ঢুকে পড়ে এবং তার প্রভাবেই জোরালো বৃষ্টি হয়। নেমে যায় তাপমাত্রা। রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা সূত্রের খবর, শনি-রবিবার যেখানে গড়ে ৫৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা ছিল, এ দিন সকালের ঝড়বৃষ্টির পর তা কমে দাঁড়ায় ৪৯০০ মেগাওয়াটে। সাধারণ মানুষের কাছে টানা গরম থেকে এই মুক্তিটাই আশীর্বাদের মতো মনে হয়েছে। অনেকেরই বক্তব্য, পূর্বাভাস না মেলাটা যেন শাপে বর!

এখন প্রশ্ন, বর্ষা কি তা হলে দক্ষিণবঙ্গের দোরগোড়ায় কড়া নাড়ছে? মৌসম ভবন কিন্তু দক্ষিণবঙ্গে বর্ষা আসার কথা বলছে না। তারা জানাচ্ছে, বর্ষা এখন উত্তরবঙ্গের দোরগোড়ায়। রবিবার রাত থেকে সেখানেও কিছু এলাকায় জোর বৃষ্টি হয়েছে। এ দিন থেকে তরাই-ডুয়ার্সের জেলাগুলিতে প্রাক-বর্ষার বৃষ্টিও শুরু হয়েছে।

তা হলে দক্ষিণবঙ্গের কপালে কী? আলিপুরের পূর্বাভাস, আজ, মঙ্গলবার আকাশ আংশিক মেঘলা থাকবে। দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি হতে পারে।

weather rain forecast
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy