Advertisement
E-Paper

রাতের ঝড়ে চাল উড়ল চারশো বাড়ির

‘‘চোখের সামনে দেখি রিকশাটা উড়ে খানিক দূরে গিয়ে পড়ল। দুমড়ে-মুচড়ে গেল প্রতিদিনের রোজগারের সঙ্গী।’’— একরাশ চিন্তা নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন কেতুগ্রামের কচুটিয়ার বাসিন্দা খোকন শেখ।

নিজস্ব সংবাদদাতা,

শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৬ ০১:৩৫
ছাদ নেই। কেতুগ্রামে অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।

ছাদ নেই। কেতুগ্রামে অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।

‘‘চোখের সামনে দেখি রিকশাটা উড়ে খানিক দূরে গিয়ে পড়ল। দুমড়ে-মুচড়ে গেল প্রতিদিনের রোজগারের সঙ্গী।’’— একরাশ চিন্তা নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন কেতুগ্রামের কচুটিয়ার বাসিন্দা খোকন শেখ।

শনিবার সন্ধ্যার ঝড়ের পর এমনই হাল শনিবার সন্ধ্যায় ঝড়-বৃষ্টির জেরে এমনই হাল কেতুগ্রামের আগরডাঙা পঞ্চায়েতের বিভিন্ন গ্রামে। কোথাও উড়ে গিয়েছে বাড়ির চাল। কোথাও বা উপড়ে গিয়েছে বিদ্যুতের খুঁটি। সব খুইয়ে কেউ বা আশ্রয় নিয়েছেন পড়শির বাড়িতে। দেওয়াল চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছে এক জনের। জখম হন তিন জন।

প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, ঝড়ের জেরে আরনা, মহেশপুর, আমগড়িয়া, কেচুনিয়া, শ্রীগ্রাম, কচুটিয়া, মালগ্রাম, আগরডাঙা গ্রামে কম-বেশি ক্ষতি হয়েছে। তবে সবথেকে খারাপ অবস্থা আরনা গ্রামের। ঝড়ে এই গ্রামের তিন জন জখম হয়েছেন বলে খবর। প্রশাসন সূত্রে খবর এই পঞ্চায়েত এলাকায় প্রায় চারশোটি বাড়ি ঝড়ে কম-বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার ণধ্যে শুধুমাত্র আরনা গ্রামেই ১৫০টি বাড়ির চাল উড়ে গিয়েছে বলে বাসিন্দাদের দাবি। রবিবার সকালে আরনায় গিয়ে দেখা গেল, গোটা গ্রাম কার্যত খণ্ডহরে পরিণত হয়েছে। কারও বাড়ির চাল নেই, তো কোথাও বা আবার মাটির দেওয়াল ধসে গিয়েছে। বেশ কয়েকজন বাসিন্দা জানান, বাড়ি ভেঙে পড়ায় অন্যত্র আশ্রয় নিতে হয়েছে। যেমন গ্রামের বাসিন্দা সুমন্ত মাঝি, উত্তম মাঝিদের বক্তব্য, ‘‘শনিবারে ঝড়ে ব্যবসার জিনিসপত্র সব নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এখন অ্যন্যের আশ্রয়ে রয়েছি।’’

দুমড়ে গিয়েছে বিদ্যুতের খুঁটি। নিজস্ব চিত্র।

ঠিক কী হয়েছিল ঝড়ের সময়? স্থানীয় বাসিন্দা মেফুজা মোল্লা , মণিরুল ইসলামরা জানান, তাঁদের দোতলা মাটির বাড়ির মাথায় ছিল টিনের চাল। ঝড় শুরু খানিক বাদেই আচমকা বিকট শব্দ। চেয়ে দেখি চাল উড়ে গিয়েছে। এরপর থেকেই অদূরের একটি পাকা বাড়িতে রয়েছেন মেফুজারা। দেওয়াল ধসে জখম হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। সিরাজ শেখ, সুমন্ত মাঝি, উত্তম মাঝি নামে তিন জন দেওয়াল চাপা পড়েন। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘ঝড়ের সময় ঘর সামলাতে ব্যস্ত ছিলাম। আচমকা দেওয়াল ধসে পড়ে।’’ উত্তমবাবুদের কান্দরা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। শ্রীপুর গ্রামে গোয়ালঘরের দেওয়াল চাপা পড়ে মৃত্যু হয় এক মহিলার। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতার নাম আরতী দাস (৫৭)। আগরডাঙা গ্রামের বাসিন্দাদের দাবি, শুধু যে খড় আর টিনের চালই উড়ে গিয়েছে এমন নয়। রেয়াত মেলেনি অ্যাসবেস্টসের চালেরও।

প্রশাসন সূত্রে খবর, এই পঞ্চায়েতর বিভিন্ন গ্রামে উপড়ে গিয়েছে ৮টি বিদ্যুতের খুঁটি। ক্ষতি হয়েছে টেলিফোনের খুঁটিগুলিরও। রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত গ্রামগুলিতে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে বলে খবর। ঝড়ের দাপটে বহু গাছ পড়ে নষ্ট হয়েছে।

আগরডাঙার পঞ্চায়েতের ভারপ্রাপ্ত প্রধান মহিদুল ইসলামের দাবি, প্রাথমিক অনুমান, ঝড়ের জেরে গোটা এলাকায় প্রায় ১ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ইতিমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িগুলিকে চিহ্নিত করার কাজও শুরু করেছে প্রশাসন। বেশকিছু এলাকায় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে চাল ও ত্রিপল বিলি করা হয়েছে। রবিবার সকালে শ্রীপুর ও আরনা এলাকা পরির্দশনে যান কেতুগ্রাম ১ ব্লকের বিডিও অরূপ কুমার মণ্ডল। তিনি এলাকার কয়েকটি বাড়ি পরির্দশন করেন। খানিক বাদেই জনা কয়েক বাসিন্দা বিডিও-কে ঘিরে ধরে দাবি জানান, তাঁদের বাড়ির অবস্থাও খতিয়ে দেখতে হবে। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। কেতুগ্রাম ১-এর বিডিও অরূপকুমার মণ্ডলের বক্তব্য, ‘‘ঝড়ে বসতবাড়ি, পশুপালনে ক্ষতি হয়েছে। সকাল থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় প্রশাসনের প্রতিনিধিরা রয়েছেন। দুর্গতদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হবে।’’

storm hut ketugram
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy