—প্রতীকী ছবি।
বাড়ির সামনে উঠোনে বসে খেলছিল একই পরিবারের দুই শিশু। উঠোনের উল্টো দিকে রান্না ঘরে ব্যস্ত ছিলেন দুই শিশুর মা-কাকিমারা। কিছু ক্ষণ পরেই তাঁরা খেয়াল করেন, উঠোন ফাঁকা। ঘণ্টা কয়েক পর উঠোন লাগোয়া পুকুরের জলে একে একে ভেসে ওঠে দুই শিশুর দেহ।
কুলতলির গ্রামের এই শিশু-মৃত্যু অবশ্য বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। সুন্দরবন-সহ আশেপাশের গ্রামীণ এলাকায় জলে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে প্রায়ই। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি পরিসংখ্যান বলছে, দক্ষিণ ২৪ পরগনার ১৩টি এবং উত্তর ২৪ পরগনার ৬টি ব্লক মিলিয়ে সুন্দরবনের ১৯টি ব্লকে জলে ডুবে শিশু মৃত্যুর ঘটনা পৃথিবীর মধ্যে সর্বোচ্চ। ২০১৬ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ১৯টি ব্লকে তথ্য সংগ্রহ চলে। দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হচ্ছে চার বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের। পরিসংখ্যানে দাবি, প্রতি এক লক্ষ জনসংখ্যায় এই বয়সী ২৪৩টি শিশুর জলে ডুবে মৃত্যু হয়েছে। এক লক্ষ জনসংখ্যায় পাঁচ থেকে নয় বছর বয়সী শিশু মারা গিয়েছে প্রায় ৩৯ জন।
সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় জলে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধে শিশু সুরক্ষা নিয়ে কাজ করা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কাজ করছে দীর্ঘদিন ধরে। সংগঠনের তরফে সুজয় রায় জানান, গ্রামীণ এলাকায় বাড়ি লাগোয়া পুকুরেই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে বেশি। পরিবারের লোকজন বাইরে বা কাজে ব্যস্ত থাকাকালীন শিশু পুকুরের কাছে চলে যাচ্ছে। তার পর কোনও ভাবে পড়ে যাচ্ছে জলে। বেশিরভাগই মারা যায়। কিছু ক্ষেত্রে জীবন্ত উদ্ধার করা সম্ভব হলেও, হাসপাতালে না গিয়ে ওঝা-গুনিনের কাছে যাচ্ছে পরিবার। তাতে প্রাণসংশয় তৈরি হচ্ছে।
সংগঠনের তরফে এ ব্যাপারে লাগাতার প্রচার চলছে কয়েক বছর ধরে। বাড়ি লাগোয়ো পুকুর ঘিরে রাখার কথা বলা হচ্ছে। ছোট থেকেই বাচ্চাদের সাঁতার শেখানোয় জোর দেওয়া হচ্ছে। জলে ডোবা শিশুকে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য এলাকার স্বাস্থ্যকর্মী, স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজও চলছে। স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে কাজে লাগিয়ে গ্রামে গ্রামে ‘চাইল্ড কেয়ার সেন্টার’ গড়ে তোলার পরিকল্পনা হয়েছে। বাবা-মা কাজে ব্যস্ত থাকলে এই সেন্টারগুলি বাচ্চার দেখাশোনা করবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy