Advertisement
E-Paper

ঝান্ডা না দেখেই প্রতিরোধের ডাক সূর্য-রূপার

এক এক দলের তাত্ত্বিক অবস্থান এক এক রকম। তবু নির্বাচনে শাসক দলের ‘সন্ত্রাস’ মোকাবিলার টানে তাদের একজোট করে দেখিয়েছিল শিলিগুড়ি। বিধাননগর, আসানসোল, বালিতে পুরসভা এবং শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের ভোটের আগে তৃণমূল স্তরে বিরোধীদের সেই একজোট হওয়ার আহ্বানেই আরও এক ধাপ এগোলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:৪১

এক এক দলের তাত্ত্বিক অবস্থান এক এক রকম। তবু নির্বাচনে শাসক দলের ‘সন্ত্রাস’ মোকাবিলার টানে তাদের একজোট করে দেখিয়েছিল শিলিগুড়ি। বিধাননগর, আসানসোল, বালিতে পুরসভা এবং শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের ভোটের আগে তৃণমূল স্তরে বিরোধীদের সেই একজোট হওয়ার আহ্বানেই আরও এক ধাপ এগোলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। তাঁর সাফ কথা, বাম, কংগ্রেস বা বিজেপি পরের কথা। ভোটের দিন শাসক দলের কাছে বাধা পেলে ঝান্ডার রং না দেখে সম্মিলিত শক্তিতে প্রতিরোধ চাই।

আসানসোলের পুরভোটের প্রচারে গিয়ে মঙ্গলবার এক সভায় সূর্যবাবু বলেন, ‘‘ভোটের দিন যদি দেখেন সন্ত্রাস হচ্ছে, ভোট দিতে বাধা পাচ্ছেন, ঝান্ডা না দেখে, বিজেপি-কংগ্রেস না দেখে সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ করুন।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘বাড়িতে ডাকাত পড়লে বা আগুন জ্বললে নিশ্চয় দেখবেন না, তা কোন ঘরে হল! আগুন আর ডাকাতের মোকাবিলা যেমন করবেন, ঠিক সেই ভাবেই ভোটের দিন বাধা পেলে মোকাবিলা করবেন।’’ শিলিগুড়ির পরে আসানসোলেও সূর্যবাবুর সভায় ভিড় হয়েছিল ভালই।

শিলিগুড়িতে সাফল্যের পর থেকেই রং না দেখে বিরোধী শিবিরের নিচু তলার কর্মীদের এককাট্টা হয়ে প্রতিরোধের কথা বলছেন সিপিএম নেতৃত্ব। মূলত এই লক্ষ্যেই বিধাননগরে গড়ে তোলা হয়েছে ‘সিটিজেন্স ফোরাম’। সূর্যবাবুর আহ্বান তৃণমূল-বিরোধী লড়াইয়ে তাঁদের রণকৌশল আরও স্পষ্ট করে দিল। বাম নেতারা যত তৃণমূল স্তরে সমবেত প্রতিবাদের কথা বলছেন, অন্য দুই বিরোধী দল থেকেও সেই মতের সমর্থন আসছে। প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি তথা সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য যেমন শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের ভোট-প্রচারে বলেছেন, যেখানে তাঁদের প্রার্থী নেই, সেখানে কর্মী-সমর্থকদের ‘বিবেক ভোট’ দিতে। শিলিগুড়ি মডেলের সমর্থন এ দিন শোনা গিয়েছে বিজেপি নেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের কণ্ঠেও। সরাসরি জোটের পক্ষে সওয়াল করা বাম, কংগ্রেস বা বিজেপি— সব বিরোধী নেতৃত্বের কাছেই অসুবিধাজনক। তৃণমূলের মোকাবিলার বিষয়টিকে তাঁরা তাই ‘মানুষের জোটে’র চেহারা দিতে চাইছেন। অতীতে শাসক সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যে ডাক তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিতেন।

শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের ভোট-প্রচারে এসে বিজেপি-র তারকা-মুখ রূপা বলেন, সন্ত্রাস বা ভোট লুঠ রুখতে তৃণমূল বিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মীদের বুথ স্তরে জোট বাঁধাকে তিনি ‘স্মার্ট’ বলেই মনে করেন। যদিও একই সঙ্গে তাঁর ব্যাখ্যা, এটা তাঁর ব্যক্তিগত মত। নকশালবাড়ি লাগোয়া হাতিঘিষায় তিনি জানান, ‘শিলিগুড়ি মডেল’কে দলীয় স্তরে সমর্থন করা হবে কি না, বিজেপি-তে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার জায়গায় তিনি নেই। তাঁর কথায়, ‘‘আমি বিজেপি-র এক জন সাধারণ কর্মী। তাঁদের কত সন্ত্রাস, হুমকি মোকাবিলা করে কাজ করতে হয়, তা জানি। তাই ব্যক্তিগত ভাবে শিলিগুড়ি মডেলকে খুব ভাল মনে হয়।’’

সম্প্রতি শিলিগুড়িতে এসেই বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ দাবি করেছিলেন, তাঁরা ‘শিলিগুড়ি মডেল’-এ নেই। রাজ্যে সিপিএম এবং তৃণমূলের ‘অলিখিত জোট’ হয়েছে বলেও তিনি দাবি করেছিলেন! বিজেপি-র নিচু তলার নেতা-কর্মীদের অনেকেরই অভিজ্ঞতা অবশ্য রাজ্য সভাপতির দাবির সঙ্গে মিলছে না! তাঁরা বরং মনে করেন, বুথ স্তরে সব বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরা জোট বেঁধে শাসক দলের মোকাবিলা না করলে ভোট ‘লুঠ’ ঠেকানো সম্ভব নয়। কর্মীদের মনোভাব বুঝেই মহকুমা পরিষদের ভোটের আগে ‘ব্যক্তিগত মত’ বলেও রূপা আসলে তৃণমূল-বিরোধী লড়াইকে জোরদার করার কৌশলী বার্তা দিয়ে গেলেন বলে বিজেপি-র একাংশের ব্যাখ্যা।

বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের প্রতিনিধিরা হালফিল আবার হুঙ্কারে ফিরেছেন! বিধাননগর পুর-নিগমের নির্বাচনী প্রচারে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে রাজ্য বিজেপি-র সহ-পর্যবেক্ষক সিদ্ধার্থনাথ সিংহ যেমন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ‘‘আমি আর অমিতজি ‘কফন’ বেঁধে প্রতিজ্ঞা করে আসব! মমতাকে বাংলা থেকে তাড়াব!’’ পুরভোটে তৃণমূল-সন্ত্রাসের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, ‘‘মমতা এক জন ফ্যাসিস্ট। সন্ত্রাসের পথে সর্বত্র দখল নিয়ে সরকার চালাতে চাইছেন। জনগণ তার প্রতিবাদে পথে নামবে।’’ দলের কর্মী মহল অবশ্য বলছে, নেতারা শুধু হুঙ্কার না দিয়ে বুথ স্তরে প্রতিরোধ গড়ে তোলার বাস্তবসম্মত দাওয়াই বাতলে দিলেই ভাল হতো!

tmc agression suryakanta mishra roopa ganguly roopa gangopadhyay joint resistance tmc aggression
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy