Advertisement
E-Paper

এভারেস্ট ছুঁতে চায় সুভাষের মেয়েও

বাড়িতে শোকের ছায়া। নাওয়া-খাওয়া বন্ধ। নৈঃশব্দ চিরে মাঝে মাঝেই উঠছে কান্নার রোল। শেষ বারের মতো ছেলের মুখ দেখতে মরিয়া বাবা-মা। প্রকৃতস্থ হতে পারেননি সুভাষের স্ত্রী বিশাখাদেবী। বুক চাপড়ে বলছেন— ‘‘এভারেস্ট আমার সব কেড়ে নিল!’’

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০১৬ ০১:০৬
সুশ্রীতা।—নিজস্ব চিত্র

সুশ্রীতা।—নিজস্ব চিত্র

বাড়িতে শোকের ছায়া। নাওয়া-খাওয়া বন্ধ। নৈঃশব্দ চিরে মাঝে মাঝেই উঠছে কান্নার রোল। শেষ বারের মতো ছেলের মুখ দেখতে মরিয়া বাবা-মা। প্রকৃতস্থ হতে পারেননি সুভাষের স্ত্রী বিশাখাদেবী। বুক চাপড়ে বলছেন— ‘‘এভারেস্ট আমার সব কেড়ে নিল!’’

আর তাঁদের মেয়ে এগারো বছরের সু্শ্রীতা এরই মধ্যে জানিয়ে দিল, সে-ও যাবে এভারেস্টে! সুশ্রীতার কথায়, ‘‘বাবার মতো আমিও পর্বতারোহী হতে চাই। বাবা এভারেস্ট অভিযান সেরে বাড়ি ফিরতে পারল না। কিন্তু আমি পারবই।”

ছোট্ট মেয়ের সেই সঙ্কল্পে প্রাথমিক ভাবে সায় দিয়েছে পরিবার। পর্বতে যাওয়ার তালিম সে নিতে চায় নিজের জেঠু প্রণব পালের কাছেই। প্রণববাবু বলছেন, “সুভাষ এভারেস্টে গেল আর আমি বাঁকুড়ায় বসে বসে ওর মৃত্যু সংবাদ শুনলাম! এই আক্ষেপ আমার জীবনে মিটবে না। তবে সুশ্রীতাকে আমি নিজে হাতে পাহাড়ে চড়া শেখাবো। আর ও যে দিন এভারেস্টে যাবে আমি ওর সঙ্গে বেস ক্যাম্পে উপস্থিত থাকব। আর কারও ভরসা আমি করব না।” বাঁকুড়া এক্সপ্লোরেশন নেচার সংস্থার সম্পাদক দিব্যেন্দু ভকতের কথায়, “বাবার মৃত্যুর খবর শোনার এক দিনের মধ্যেই সুশ্রীতার এই সিদ্ধান্ত থেকে বোঝা যায় ওর মনের জোর কতটা।’’

সুশ্রীতার সঙ্কল্পকে সাধুবাদ জানিয়েছে অনেকেই। আর ঠিক এখানেই সতর্কও করতে চান তাঁরা। অভিজ্ঞ পর্বতারোহীদের অনেকের কথায়, ‘‘সঠিক তালিম ছাড়া এভারেস্টে যাওয়ার প্রবণতা আত্মহত্যার সামিল।’’ এঁদের অনেকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন প্রথম অসামরিক বাঙালি পর্বতারোহী বসন্ত সিংহ রায়ের কথা। বসন্তবাবু নিজেই জানিয়েছেন, তিনি সাত হাজার মিটার উচ্চতার বেশ কয়েক’টি শৃঙ্গ জয়ের পরে তবেই এভারেস্টে যাওয়ার ব্যাপারে মনস্থির করেন। তারপরে শুরু জোরদার তালিম।

কেমন? বসন্তবাবুর কথায়, ‘‘আমি ’৯০ সাল থেকে পাহাড়ে যাচ্ছি। নানা অভিজ্ঞতা হয়েছে। একেবারে মৃত্যুর মুখ থেকে ফেরার ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতাও রয়েছে। সে সব আপনারা জানেন। ২০১০ সালে প্রথম যখন এভারেস্ট অভিযানে যাই, তখন আমার বয়স ৪৯। এমনিতে বাঁশদ্রোণীর মিলন সমিতির মাঠে ১০ পাক করে দৌড়ই। কিন্তু এভারেস্ট অভিযান শুরুর প্রস্তুতি পর্বে রোজ ৩০ পাক করে দৌড়তাম।’’

সুশ্রীতার পরিবার সূত্রে অবশ্য জানা গিয়েছে, এগারো বছর বয়স হলে কী হবে, পর্বতারোহনের ঝোঁক রয়েছে তার। শুশুনিয়া, জয়চণ্ডীর মতো পাহাড়ে পর্বতারোহনে হাতেখড়িও হয়ে গিয়েছে। তবুও সতর্ক হয়েই এগোনো উচিত বলে মত অনেকের। একই কথা মনে করেন প্রতিবেশীদের অনেকেও। বিশেষ করে সুভাষকে যে ভাবে টাকা জোগাড় করতে হয়েছে সে কথাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন তাঁরা।

বাঁকুড়া এক্সপ্লোরেশন নেচার সংস্থার শারীরিক সক্ষমতার প্রশিক্ষক অপূর্ব ভকতও বলেন, “সুভাষের এভারেস্ট অভিযানের জন্য টাকা জোগাড় করতে আমরা কি না করেছি! কিন্তু সব স্বপ্ন কেড়ে নিল ওর মৃত্যু। সুশ্রীতাকে প্রশিক্ষণ দিতে যা দরকার সব আমরাই করব।” বাঁকু়ড়া পুরসভার চেয়ারম্যান মহাপ্রসাদ সেনগুপ্ত জানান, সুভাষের এভারেস্ট অভিযানের কথা শুনে পুরসভার পক্ষ থেকে সংবর্ধনা-সহ নানা রকমের আয়োজন করা হচ্ছিল। কিন্তু, হঠাৎ মৃত্যু সব ভেস্তে দিল!

এ দিন সন্ধ্যাতেই প্রণববাবু, দিব্যেন্দুবাবু-সহ কয়েক জন বাঁকুড়া থেকে কাঠমান্ডু রওনা দিয়েছেন। শুধু সুভাষের পরিবার নয়, গোটা জেলার মানুষ অপেক্ষায় ঘরের ছেলেকে শেষবার দেখার জন্য। বাঁকুড়ার জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু মঙ্গলবার রাতে জানান, তিনি খবর পেয়েছেন আজ বুধবার দেহ উদ্ধারের কাজ শুরু হবে। তিনি বলেন, ‘‘ওই পরিবারের পাশে দাঁড়াতে প্রশাসনের তরফে তাঁদের কিছু আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। পরিবারের লোকেদেরও কাঠমাণ্ডুতে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছে প্রশাসন।’’

সুভাষের মৃত্যু সংবাদ পাওয়া ইস্তক বাবা ভক্তপদবাবু আর্জি ছিল যেমন করেই হোক ছেলেকে শেষ বার যেন দেখতে চান। এ দিনও বারবার সে একই কথা বলেছেন তিনি। স্বামীর মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকেই মুখে কিছু তোলেননি সুভাষবাবুর স্ত্রী বিশাখাদেবী। শাশুড়ি সাবিত্রীদেবীও শোকে পাথর। এ দিনও শহরের আনাচে কানাচে সুভাষকে নিয়ে চর্চা শোনা গিয়েছে। পরিচিতদের একটাই আক্ষেপ, এভারেস্ট জয়ই ছিল জীবনের একমাত্র স্বপ্ন। শেষে তা পূরণ করতে গিয়েই এ ভাবে মৃত্যুর মুখে পড়লেন সুভাষ!

everest
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy