Advertisement
১৮ মে ২০২৪
জি টি রোড

ফের বাইক দৌরাত্ম্য প্রাণ কাড়ল কিশোরের

রাতে এলাকায় টহল দিতে বেরিয়েছিলেন থানার বড়বাবু। জি টি রোডে আচমকাই তাঁর গাড়িকে ওভারটেক করে বিকট শব্দে ছুটে গেল একটি মোটরবাইক। তাতে হেলমেট ছাড়া তিন আরোহী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০১৬ ০০:৩৭
Share: Save:

রাতে এলাকায় টহল দিতে বেরিয়েছিলেন থানার বড়বাবু। জি টি রোডে আচমকাই তাঁর গাড়িকে ওভারটেক করে বিকট শব্দে ছুটে গেল একটি মোটরবাইক। তাতে হেলমেট ছাড়া তিন আরোহী। একটু দূরে যাওয়ার পরেই কিছু একটায় ধাক্কা মেরে উল্টে গেল বাইক। দূর থেকে তা দেখে এগিয়ে এসে ওই অফিসার দেখলেন, তিন যুবক ও বাইকটির নীচে চাপা পড়ে রয়েছেন এক ট্র্যাফিক কনস্টেবল। সাইকেলে চেপে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। তাঁকেই ধাক্কা মেরেছিল মোটরবাইকটি।

এই দুর্ঘটনা কয়েক মাস আগের। ছবিটা এখনও বদলায়নি। রাত সাড়ে ১০টার পর থেকে বালি-বেলুড়-লিলুয়ার জি টি রোড কার্যত বেপরোয়া বাইক চালকদের মুক্তাঞ্চল হয়ে ওঠে। পুলিশের সাফাই, ঝড়ের গতিতে ছোটা বাইকবাহিনীকে আটকানো কঠিন। পুলিশ দেখলেই তাদের গতি বাড়ে। আটকাতে গেলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকে যায়।

বৃহস্পতিবার রাত একটা নাগাদ লিলুয়ার দিক থেকে তীব্র গতিতে বাইক নিয়ে বেলুড়ের দিক থেকে যাচ্ছিল দুই কিশোর। লিলুয়া ছোট গেটের কাছে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাইকটি রাস্তার ত্রিফলায় ধাক্কা মারে। পিছনে বসে থাকা ঋত্বিক জায়সবাল (১৭) ছিটকে নর্দমায় পড়ে যায়। তার উপরে পড়ে বাইকটি। বাইকচালক রাহুল ত্রিপাঠী কিছু দূরে ছিটকে পড়ে। পিছনে অন্য বাইকে থাকা ওই কিশোরদের বন্ধুরাই দু’জনকে জায়সবাল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে ঋত্বিককে মৃত ঘোষণা করা হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাহুল হাসপাতালে ভর্তি। এ দিন সকালে বেলুড় থানায় মৃত কিশোরের বাবা সুরজবাবু জানান, নবম শ্রেণিতে পড়াশোনার পাশাপাশি কল সেন্টারে চাকরি করত ঋত্বিক। ওই রাতে ৯টা নাগাদ সে বাড়ি ফেরে। তার ডান হাতের তালুতে ব্যান্ডেজ দেখে বাড়ির লোকেরা জানতে চাইলে ঋত্বিক বলে, খেলার সময়ে টিউব লাইট ভাঙতে গিয়ে লেগেছে। এর পরে অফিসে যাচ্ছি বলে এক বন্ধুর সঙ্গে বাইকে চেপে সে বেরিয়ে পড়ে। পুলিশ জানায়, পটুয়াপাড়ার বাসিন্দা পরিচিত এক যুবকের বাইকটি চালাচ্ছিল রাহুল। তাতেই বসেছিল ঋত্বিক। এ দিন লিলুয়াতেই তাদের এক বন্ধুর জন্মদিনের পার্টি ছিল।

ঋত্বিক জায়সবাল

প্রতি রাতে জি টি রোড জুড়ে বাইকের ‘রেস’ শুরু হয়। ১৬ থেকে ২৫ বছরের যুবকেরা বাইক নিয়ে দাপিয়ে বেড়ায়। অধিকাংশ বাইকেরই সাইড স্ট্যান্ড ফেলা থাকে। সেটা রাস্তায় ঘষা খায়, যার ফলে বিকট শব্দ আর আগুনের ফুলকি বেরোয়। কারওরই হেলমেট থাকে না।’

পুলিশের একাংশের কথায়, ‘‘কোনও বাইক ধরার পরেই বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিরা ফোন করে ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। সেটা না শুনলে সমস্যা হয়। তাই কেউ ঝামেলায় যেতে চান না।’’ যদিও দুর্গাপুজোর সময়ে রাস্তার উপরে ব্যারিকেড দিয়ে এক দিনে ১০০টি বাইককে আটক করেছিল বেলুড় থানা। কিন্তু সাধারণ দিনে তা সম্ভব নয় বলেই মনে করেন পুলিশকর্তারা।

হাওড়া সিটি পুলিশের ডিসি (ট্রাফিক) সুমিত কুমার বলেন, ‘‘যে ভাবে বাইকগুলি যায়, তাতে আমাদেরই ভয় করে। ধরতে গেলে আরও বড় বিপদ ঘটতে পারে।’’ তবে বেশ কয়েক দিন অভিযান চালিয়ে মন্দিরতলার সেতুতে বাইকের দাপট বন্ধ করা গিয়েছে। জিটি রোডেও তেমন কিছু করা যায় কি না সে বিষয়ে চিন্তাভাবনা রয়েছে বলেও জানান ওই কর্তা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bike racing
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE