ছুটির সকালে ঘুম ভাঙতে না-ভাঙতেই হামলে পড়েছিল সে! কমবেশি শিরশিরানিতে যেন মালুম হচ্ছিল মাঘের আবছা মেজাজ। বেলা গড়ালে নরম রোদেও টের পাওয়া গিয়েছে তার উপস্থিতি। তা হলে কি সত্যিই ফিরে আসছে সে?
রবিবার দিনভর এমনই দোলাচলে শীতপ্রত্যাশী বাঙালি। কেউ কেউ গভীর প্রত্যাশায় দরাজ আমন্ত্রণও জানিয়ে চলেছেন, ‘ফিরে এসো শীত!’
থার্মোমিটারের পারদ বলছে, রাতের তাপমাত্রা পড়তির দিকে। এ দিন কলকাতায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৫.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। স্বাভাবিকের থেকে এক ডিগ্রি বেশি। তবে শনিবারের (১৬.৭ ডিগ্রি) তুলনায় এক ডিগ্রি কম। জেলায় পারদ আরও নীচে নেমেছে। হাওয়া অফিস জানাচ্ছে, এ দিন শ্রীনিকেতনে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০.৪ ডিগ্রি। বাঁকুড়া, আসানসোলে রাতের তাপমাত্রা নেমেছে ১১.৩ ডিগ্রিতে। তরাই-ডুয়ার্সে সেটা ঘোরাফেরা করছে ৯-১০ ডিগ্রির কাছেপিঠে। আজ, সোমবার এবং কাল, মঙ্গলবার তাপমাত্রা আরও কমতে পারে।
তা হলে ফিরে আসছে শীত?
‘‘তেমন আশা নেই,’’ বলছেন আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গণেশকুমার দাস। তিনি জানাচ্ছেন, আগামী দু’দিন তাপমাত্রা সামান্য কমবে। শেষ বেলায় পাওনা বলতে ওটুকুই। চলতি সপ্তাহের মাঝামাঝি থেকেই ফের মাথাচাড়া দেবে পারদ। আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, কলকাতার তুলনায় বিভিন্ন জেলার তাপমাত্রা অনেকটা কম রয়েছে ঠিকই। কিন্তু চলতি সপ্তাহের মাঝামাঝি থেকে সেখানেও রাতের তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করবে। তবে জেলায় শীত-ভাবটা পুরো কাটতে কয়েক দিন বেশি সময় লাগবে।
অথচ এই মাঝ-মাঘে শীতের এত কুণ্ঠিত হয়ে থাকার কথাই নয়। উত্তুরে হিম-হাওয়ার বাহনে তারা দাপিয়ে বেড়ানোটাই স্বাভাবিক। কিন্তু পরের পর ঘূর্ণিঝড় ও ঘূর্ণাবর্ত তাকে মাথা তুলতে দেয়নি চলতি মরসুমে। ফলে শীতের জন্য এ বার শুধু হাপিত্যেশ করতে হয়েছে বঙ্গবাসীকে। পৌষ-সংক্রান্তি আর মাঘ-পয়লাকে ধরে মাত্র তিন-চার দিন শীতের মতো শীত পাওয়া গিয়েছে। পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বীরভূমের মতো স্বভাবত শীতকাতর জেলাগুলিতেও শৈত্যপ্রবাহের বেজায় আকাল। তার উপরে ছিল পশ্চিমি ঝঞ্ঝার (ভূমধ্যসাগরীয় এলাকা থেকে বয়ে আসা ঠান্ডা ভারী হাওয়া) খামখেয়ালিপনা। কখনও তার দুর্বলতায় পাহাড়ে তুষারপাত হয়নি, কখনও বা সে সোজা ঢুকে পড়েছে পূর্ব ভারতের দিকে। ফলে জোলো হাওয়া আর অকাল-মেঘে ঢেকেছে বাংলার আকাশ। কয়েক দিন আগে এমন বিভ্রাটে কমবেশি বৃষ্টিও হয়েছে দক্ষিণবঙ্গে। তা হলে আচমকা উত্তুরে হাওয়া ফিরে এল কী ভাবে?
আবহবিজ্ঞানীদের ব্যাখ্যা, সম্প্রতি একটি ঝঞ্ঝা কাশ্মীর, হিমাচলে তুষারপাত ঘটিয়েছে। ফলে ওই সব এলাকায় ঠান্ডা পড়েছে জাঁকিয়ে। বঙ্গে ঠান্ডা নিয়ে আসছে সেই বরফের উপর দিয়ে বয়ে আসা হাওয়া। তাতেই পারদ নামছে। কিন্তু শীতকে জবরদস্ত সাজে হাজির করানোর জোর নেই সেই উত্তুরে হাওয়ার। ফলে দু’দিনেই তার জারিজুরি শেষ হয়ে যাবে।
অতএব হিম-হাওয়ার কণিকামাত্র প্রসাদ চেটেপুটে নিতে চাইছেন বাংলার শীতপ্রত্যাশীরা। বলছেন, শেষ পাতে এটাই বা কম কী!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy