Advertisement
০৫ মে ২০২৪

আবার রক্ত কেন, প্রশ্ন বলরামপুরে

তিন দিনের ব্যবধানে উদ্ধার হয়েছে বিজেপির দুই নেতা-কর্মীর দেহ। দু’টি ক্ষেত্রেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ করছে বিজেপি। তাদের দাবি, পঞ্চায়েত ভোটে বলরামপুরে বিজেপির কাছে হারের আক্রোশে এই ‘সন্ত্রাস’।

অশান্তি: বলরামপুরের ডাভা গ্রামে বিজেপি কর্মী দুলাল কুমারের দেহ উদ্ধার করতে গিয়ে পুলিশের লাঠিচার্জ। শনিবার। ছবি: সুজিত মাহাতো

অশান্তি: বলরামপুরের ডাভা গ্রামে বিজেপি কর্মী দুলাল কুমারের দেহ উদ্ধার করতে গিয়ে পুলিশের লাঠিচার্জ। শনিবার। ছবি: সুজিত মাহাতো

প্রশান্ত পাল
বলরামপুর শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৮ ০৪:২৫
Share: Save:

এক দিকে, অযোধ্যা পাহাড়। অন্য দিকে, ঝাড়খণ্ড সীমানা। বাসিন্দাদের একটা বড় অংশই জনজাতির। ২০০৭-১১ পর্যন্ত বলরামপুর ছিল কার্যত মাওবাদীদের মুক্তাঞ্চল। যে দু’টি গ্রামে বিজেপির নেতা-কর্মীদের দেহ মিলেছে, সেই সুপুরডি আর ডাভাতেই ২০১০ সালে মাওবাদীদের গুলি করে খুন করে তিন সিপিএম নেতাকে। এখন ফের রাজনৈতিক উত্তাপে তাতছে পুরুলিয়ার বলরামপুরের মাটি।

তিন দিনের ব্যবধানে উদ্ধার হয়েছে বিজেপির দুই নেতা-কর্মীর দেহ। দু’টি ক্ষেত্রেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ করছে বিজেপি। তাদের দাবি, পঞ্চায়েত ভোটে বলরামপুরে বিজেপির কাছে হারের আক্রোশে এই ‘সন্ত্রাস’। এক ধাপ এগিয়ে কিছু বিজেপি নেতার ‘কটাক্ষ’, যুব তৃণমূল সভাপতি তথা পুরুলিয়ার দলীয় পর্যবেক্ষক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যে দিন পুরুলিয়াকে ‘বিরোধীশূন্য’ করার ডাক দিলেন, তার পর দিন, বুধবার সুপুরডিতে বিজেপি যুব মোর্চার কর্মী, কলেজ পড়ুয়া ত্রিলোচন মাহাতোর ঝুলন্ত দেহ মেলে। অভিষেক যে দিন পুরুলিয়ায় এলেন, তার পরদিন, শনিবার মিলল দুলাল কুমারের দেহ। তাঁদের কথায়, ‘‘এই সমাপতন কি কাকতালীয়?’’

এখানেই আপত্তি জেলা তৃণমূলের নেতাদের। তাঁদের বক্তব্য, বলরামপুরে দলের পরাজয়, অভিষেকের মন্তব্য এবং দু’টি অপমৃত্যু মিলিয়ে ‘মনগড়া চিত্রনাট্য সাজাচ্ছে’ বিজেপি। স্থানীয় তৃণমূল নেতা সৃষ্টিধর মাহাতো বলেন, ‘‘২০১১-১৮ পর্যন্ত বলরামপুরের বাসিন্দারা দেখেছেন, আমরা সন্ত্রাসের রাজনীতি করিনি। এখন যেখানে এমন পরিস্থিতি, সেখানে কেন সন্ত্রাস করতে যাব! এ ধরনের সন্ত্রাস হলে তার দায় যে আমাদের উপরে চাপবে, তা না বোঝার মতো বোকা আমরা নই।’’

তৃণমূলের এক জেলা নেতা জানান, ময়না-তদন্তের রিপোর্ট মেলার আগে দুলালবাবুর মৃত্যুকে ‘আত্মহত্যা’ বলে মনে হয়েছে—এই মন্তব্যের পরেই জেলার এসপিকে সরানো হয়েছে। তদন্তে সাহায্য করতে বলা হয়েছে সিআইডি-কে।

প্রশাসনিক রদবদলের পাশাপাশি তৃণমূলের রাজনৈতিক স্তরেও বদলের বিষয়ে কথা হল এ দিন। যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে জেলার চারটি ব্লকের দলীয় সভাপতিকে সরানোর ব্যাপারে কথা হয়েছে বলে জানান তৃণমূলের জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো। এ দিন জেলায় দলের ফল পর্যালোচনার জন্য দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে বসেন অভিষেক। পরে শান্তিরামবাবু জানান, রঘুনাথপুর ১, বলরামপুর, সাঁতুড়ি ও পাড়়া—এই চারটি ব্লকের সভাপতিকে সরানো হবে। তৃণমূল সূত্রে খবর, অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে ওই চার জনের বিরুদ্ধে।

২০১৩-র পঞ্চায়েত ভোটে বলরামপুরে পঞ্চায়েত সমিতি, সাতটি গ্রাম পঞ্চায়েতের সবক’টি এবং জেলা পরিষদে এলাকার দু’টি আসনই দখল করে তৃণমূল। বলরামপুর থেকে জিতে জেলা সভাধিপতি হন সৃষ্টিধর। কিন্তু এ বার বলরামপুরে ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতের সবই গিয়েছে বিজেপির হাতে। সৃষ্টিধর হেরেছেন। তৃণমূলের বক্তব্য, বহিরাগত ঢুকিয়ে বাহুবলী-রাজনীতি করে সফল বিজেপি।

বহিরাগত ‘তত্ত্ব’ খারিজ করে বিজেপির জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ভোটের লড়াইয়ে এঁটে উঠতে না পেরে সন্ত্রাস করছে তৃণমূল।’’ যে দু’জনের দেহ উদ্ধার হয়েছে, এ বারের ভোটে তাঁরা দলের হয়ে সক্রিয় ভাবে কাজ করেছেন বলে জানাচ্ছেন বিজেপির জেলা নেতারা।

সৃষ্টিধর অবশ্য বলছেন, ‘‘ভোটে প্রমাণ হয়েছে বলরামপুরে বিজেপি শক্তিশালী। সেখানে আমাদের বিরুদ্ধে খুন-জখম করার অভিযোগ মনগড়া। সন্ত্রাস করতে যাব কেন?’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘এলাকার মানুষ, বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য-সমর্থকদের কাছে অনুরোধ, অশান্তি আটকান। সন্ধ্যার পরে অপরিচিত, এমনকী, তিনি দলের কেউ বলে পরিচয় দিলেও ঘর থেকে বেরোবেন না। বলবেন, ‘যা কথা সকালে হবে’।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE