Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Teacher Recruitment Scam case

৩২০০০ চাকরি বাতিল নিয়ে ত্রিফলা আক্রমণের মুখে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশ! শুক্রে রায় ঘোষণা

বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের চাকরি বাতিলের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ডিভিশন বেঞ্চে গিয়েছিলেন চাকরিহারাদের একাংশ। সেই মামলার শুনানিতে বুধবার ত্রিফলা আক্রমণের মুখে পড়ে সিঙ্গল বেঞ্চের রায়।

The job cancellation order of Justice Abhijit Ganguly faces backlash from three sides in Calcutta High Court.

৩২ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০২৩ ১৯:৫১
Share: Save:

প্রথমে ছিল ৩৬ হাজার। পরে সংখ্যা বদলে যায় ৩২ হাজারে। সেই ৩২ হাজার চাকরি বাতিল নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে এ বার ত্রিফলা আক্রমণের মুখে পড়ল বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের রায়। চাকরিহারাদের পক্ষ নিয়ে ৩ আইনজীবী এই রায়ের বিরুদ্ধে জোরালো সওয়াল করলেন ডিভিশন বেঞ্চে। সেখানে মামলার শুনানি শেষ হয়েছে। শুক্রবার রায় ঘোষণা করা হবে।

বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের চাকরি বাতিলের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ডিভিশন বেঞ্চে গিয়েছিলেন চাকরিহারাদের একাংশ। হাই কোর্টের বিচারপতি সুব্রত তালুকদার এবং বিচারপতি সুপ্রতিম ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চে বুধবার সেই মামলার শুনানি হয়। বিকেল ৩টে থেকে শুরু হয়ে শুনানি চলে প্রায় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত। চাকরিহারাদের পক্ষ নিয়ে ৩ জন আইনজীবী ৩ রকম যুক্তি খাড়া করেন আদালতে।

প্রথমত, আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ডিভিশন বেঞ্চে জানান, হাই কোর্টের নির্দেশেই নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্ত করছে কেন্দ্রীয় সংস্থা সিবিআই। তাদের কোনও তদন্তের রিপোর্টে এখনও পর্যন্ত এমন কোনও তথ্য উঠে আসেনি, যার জন্য ৩২ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিল করে দিতে হবে। যাঁরা চাকরি হারিয়েছেন, তাঁদের আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনও সুযোগ দেয়নি আদালত। তাঁদের সঙ্গে কথা না বলেই চাকরি বাতিলের এত বড় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোন আইনে এই নির্দেশ দিল সিঙ্গল বেঞ্চ? প্রশ্ন তুলেছেন আইনজীবী।

দ্বিতীয়ত, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, ৩২ হাজার শিক্ষক অপ্রশিক্ষিত। প্রশিক্ষণ ছাড়াই তাঁরা চাকরি পেয়ে গিয়েছেন। কিন্তু আইনজীবী আদালতে পাল্টা জানিয়েছেন, যে সময় তাঁদের নিয়োগ হয়েছিল, পর্ষদের সেই সময়কার বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্ট উল্লেখ করা আছে, নিয়োগের ২ বছরের মধ্যে প্রশিক্ষণ নিতে হবে প্রার্থীদের। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ীই অপ্রশিক্ষিত হিসাবে চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন তাঁরা। ফলে এ ক্ষেত্রে আইন ভেঙে কোনও নিয়োগ হয়নি।

তৃতীয়ত, চাকরিহারাদের আর এক আইনজীবী জয়দীপ করের যুক্তি, বিচারপতি যেন আগে থেকেই চাকরি বাতিল করবেন বলে মনস্থির করে রেখেছিলেন। এই সংক্রান্ত মামলার শুনানি চলাকালীন গত ৬ ডিসেম্বর বিচারপতি বলেছিলেন, ‘‘ঢাকি সমেত বিসর্জন দিয়ে দেব’’। সেই মন্তব্য থেকেই পরিষ্কার, চাকরি বাতিল করা আগে থেকেই স্থির ছিল।

মামলাকারীদের আর এক আইনজীবী সুবীর সান্যাল জানান, ৩২ হাজার প্রার্থীর তথ্য বিচারপতি মামলাকারীদের কাছ থেকেই পেয়েছেন। তিনি নিজে ভাল করে খতিয়ে দেখেননি। মামলাকারীরা যদি আগামী দিনে সমস্ত নিয়োগই বাতিল করে দেওয়ার কথা বলেন, তা হলে কি তা-ই করা হবে? সিঙ্গল বেঞ্চ কয়েক জন পরীক্ষার্থীর ইন্টারভিউ নিয়ে কী ভাবে বুঝে গেল অ্যাপটিটিউড টেস্টে নিয়ম মানা হয়নি? প্রশ্ন তুলেছেন আইনজীবী।

চাকরিহারাদের আইনজীবীদের সওয়ালের পর মূল মামলাকারী অর্থাৎ চাকরিপ্রার্থীদের আইনজীবী তরুণজ্যোতি তিওয়ারির পাল্টা যুক্তি, পর্ষদের তথ্য অনুযায়ী দেখা গিয়েছে, অ্যাপটিটিউড টেস্ট ছাড়াই তাঁর মক্কেলদের প্রাপ্ত নম্বর যাঁরা চাকরি পেয়েছেন, তাঁদের চেয়ে বেশি। তাই এ ক্ষেত্রে কারা যোগ্য, তা জলের মতো পরিষ্কার। চাকরিহারাদের পক্ষের আইনজীবী প্রশ্ন তুলেছিলেন, কেন তাঁর মক্কেলদের এ ক্ষেত্রে কোনও কথা বলার সুযোগই দেওয়া হয়নি? সেই প্রশ্নের সূত্র ধরে আইনজীবী তিওয়ারি জানান, তাঁদের কথা বলার কোনও জায়গাই নেই। কারণ তাঁরা যে কম নম্বর পেয়েছেন, তা পর্ষদের তথ্য থেকেই স্পষ্ট।

যে অ্যাপটিটিউড টেস্ট নিয়ে এত বিতর্ক, সেই অ্যাপটিটিউড টেস্টের সংজ্ঞাই স্পষ্ট নয় বলে দাবি করা হয়েছে আদালতে। পরীক্ষকদের বয়ান অনুযায়ী, অ্যাপটিটিউড টেস্ট হল পরীক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস, শিক্ষক হিসাবে দক্ষতার পরীক্ষা। কিন্তু চাকরিপ্রার্থীদের আইনজীবী দেখান, নিয়ম অনুযায়ী আদৌ একে অ্যাপটিটিউড টেস্ট বলা যায় না। অ্যাপটিটিউড টেস্ট হল, চক, ডাস্টার হাতে ব্ল্যাকবোর্ডে পরীক্ষা নেওয়া। সেই নিয়মে পরীক্ষা প্রায় কোনও ক্ষেত্রেই হয়নি বলে দাবি করা হয়েছে।

এ ছাড়া, বুধবারের শুনানিতে ত্রিপুরায় কয়েক হাজার চাকরি বাতিলের নজির উদাহরণ হিসাবে তুলে ধরা হয়। যেখানে সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ ছিল, অযোগ্যরা সরকারি চাকরির পরীক্ষায় কখনও অংশ নিতে পারেন না।

চাকরিপ্রার্থীদের নিয়োগে পর্ষদের সঙ্গে সম্পর্কহীন এক তৃতীয় সংস্থাকে নিয়ে প্যানেল তৈরি করা হয়েছিল বলে অভিযোগ। পর্ষদ আদালতে সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের তরফে জানানো হয়, কেবল কম্পিউটার সংক্রান্ত কাজের দায়িত্ব ওই তৃতীয় সংস্থাকে দেওয়া হয়েছিল। সব পক্ষের মতামত, যুক্তি, পাল্টা যুক্তি ডিভিশন বেঞ্চ শুনেছে। আগামী শুক্রবার তার ভিত্তিতে এই মামলার রায় ঘোষণা করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE