Advertisement
১৮ মে ২০২৪

বেঁচে আছে সিপিআই, বোঝালেন কানহাইয়া

কয়েক ঘণ্টার সফরে কলকাতায় এসে নিজের দলের প্রবীণ, পক্ককেশ নেতাদের রীতিমতো ঝাঁকুনি দিয়ে গেলেন নবীন ছাত্রনেতা কানহাইয়া কুমার। তাঁর প্রাণবন্ত বক্তৃতায় ক্ষণিকের জন্য চনমনে হয়ে উঠল এ রাজ্যে ধুঁকতে থাকা একটা দল!

মহাজাতি সদনে কানহাইয়া। বৃহস্পতিবার। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী।

মহাজাতি সদনে কানহাইয়া। বৃহস্পতিবার। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:৪৭
Share: Save:

কয়েক ঘণ্টার সফরে কলকাতায় এসে নিজের দলের প্রবীণ, পক্ককেশ নেতাদের রীতিমতো ঝাঁকুনি দিয়ে গেলেন নবীন ছাত্রনেতা কানহাইয়া কুমার। তাঁর প্রাণবন্ত বক্তৃতায় ক্ষণিকের জন্য চনমনে হয়ে উঠল এ রাজ্যে ধুঁকতে থাকা একটা দল!

বহু কাল পর যেন সিপিআইয়ের অস্তিত্ব টের পাওয়া গেল বাংলায়।

মহাজাতি সদনে বৃহস্পতিবার সিপিআইয়ের ছাত্র সংগঠন এআইএসএফ এবং এআইওয়াইএফের ডাকে গণকনভেনশনে বক্তৃতা করলেন জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের বিদায়ী সভাপতি কানহাইয়া। আর তাঁর কথার মধ্যে নিজেদের যৌবনকে ফিরে দেখলেন সিপিআইয়ের প্রবীণ নেতারা। কানহাইয়া মঞ্চে যখন তাঁর স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে এবং সহজ ভাষায় ধর্মান্ধতা, জাতপাত, ইতিহাসে সঙ্ঘ পরিবারের ভূমিকা, লিঙ্গবৈষম্য, অর্থনৈতিক বৈষম্য, ঋণনির্ভর পুঁজিবাদের কথা ব্যাখ্যা করছিলেন, তখন দৃশ্যতই অল্পবয়সীদের পাশাপাশি বয়স্ক নেতাদের চোখেও ফুটে উঠছিল বিস্ময়। পরে তাঁদের অনেকে নিজেদের মধ্যে আলোচনাও করেন, ‘‘এত সহজে কঠিন কথা বলে ফেলা যায়!’’

অনাহার, দারিদ্র্য, মনুবাদ, সামন্তবাদ, পুঁজিবাদ এবং পিতৃতন্ত্র থেকে কানহাইয়ার আজাদির ডাক এ দিন ভাসিয়ে দিয়েছে আবালবৃদ্ধবনিতাকে। বক্তৃতার শেষে ডাফলি বাজিয়ে এবং সঙ্গীদের নিয়ে প্রায় ১০ মিনিট আজাদির স্লোগান দেন কানহাইয়া। ওই পর্বে মহাজাতি সদনের সমস্ত শ্রোতাই উঠে দাঁড়িয়ে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে তাঁর সঙ্গে হাততালি দিয়ে গলা মেলান।

প্রায় নাতির বয়সী ছাত্রনেতার বক্তৃতায় তাঁরা যে অভিভূত, তা স্বীকার করতে মোটেই লজ্জা পাচ্ছেন না সিপিআইয়ের বৃদ্ধ নেতারা। দলের প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক মঞ্জুকুমার মজুমদারের কথায়, ‘‘ওর বক্তৃতা সম্পর্কে অসামান্য না অসাধারণ,

নিশানায় কানহাইয়া। বিজেপি সমর্থকদের বিক্ষোভ। বৃহস্পতিবার কলকাতায়। — নিজস্ব চিত্র

কোন বিশেষণটা যে প্রযোজ্য বুঝতেই পারছি না। ওর বক্তব্য শোনার পর হিসেব-নিকেশ করতে বসেছি, জীবনে আমরা কী করলাম, কত দূর করতে পেরেছি, কত দূর পারিনি। এত দিন জেনে এসেছি, আজাদি পেয়েছি। এ বার উপলব্ধি করলাম, আজাদি তো পাইনি! আমাদের আজাদি চাই!’’

কানহাইয়াকে দেখতে এবং তাঁর কথা শুনতে এ দিন বেলা ১১টা থেকেই লোক আসতে শুরু করে মহাজাতি সদনে। কিন্তু দুপুর আড়াইটে নাগাদ তিনি যখন সেখানে পৌঁছন তখন আরএসএস-এর ছাত্র সংগঠন এবিভিপি এবং বিজেপি-র যুব মোর্চার জনা ২০ কর্মী তাঁকে কালো পতাকা দেখিয়ে ‘গো ব্যাক’ আওয়াজ তোলেন। তাঁর গাড়ির দিকে পচা ডিম এবং ঢিল ছোড়েন। পুলিশ তাঁদের হঠিয়ে দেয়। কয়েক জনকে গ্রেফতারও করে।

মঞ্চে উঠে কানহাইয়া বললেন, ‘‘আমাকে যারা কালো পতাকা দেখিয়েছে বা জুতো মারতে চেয়েছে, তাদের কেউ কিছু করবেন না। ওদের এটা করার গণতান্ত্রিক অধিকার রয়েছে।’’ এর পর ক্ষুরধার বক্তৃতায় তিনি বারবার নিশানা করেন আরএসএস এবং নরেন্দ্র মোদীকে। তবে বক্তৃতার শুরুতেই বলেন, ‘‘আমি আরএসএস-এর চেয়ে বামেদের কথা দিয়েই শুরু করতে চাই। আমাকে এক জন প্রশ্ন করলেন, এ রাজ্যে কংগ্রেসের সঙ্গে সিপিএমের মাখামাখি নিয়ে। তাঁকে বললাম, আমি নয়, এর জবাব সীতারাম ইয়েচুরি দেবেন।’’

কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যে পুঁথিগত তত্ত্বের বাড়াবাড়ির সমালোচনা করে কানহাইয়া বলেন, ‘‘মাঝে মাঝে কমিউনিস্টদের আচরণ দেখলে মনে হয়, মার্ক্স ভগবান! পার্টি অফিস মন্দির! আর পার্টির সাধারণ সম্পাদক পূজারি! তিনি যার কপালে টিকা লাগিয়ে দেবেন, সে-ই বামপন্থী। আর কেউ নয়। আমরা এর থেকেও আজাদি চাই।’’ বিজেপি-র মতো ‘ফ্যাসিস্ত শক্তি’র মোকাবিলায় সোশ্যাল ডেমোক্রাটদের সঙ্গে ঐক্যের পক্ষেই সওয়াল করেন কানহাইয়া। কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের বিরোধী প্রকাশ কারাটের নাম না করে তিনি কটাক্ষ করেন, ‘‘জেএনইউ-এর প্রাক্তনী এক বামপন্থী নেতা লিখেছেন, বিজেপি ফ্যাসিস্ত নয়, অথরিটেরিয়ান। তাঁকে বলছি, যদি লড়তে না চান, রাজনীতি ছেড়ে নিউ ইয়র্কে গিয়ে পড়ান।’’

ভোটের জন্য শুধু নয়, সমাজ পরিবর্তনের জন্য বৃহত্তর বাম ঐক্য এবং সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে জোট গড়ার কথা বলেন কানহাইয়া। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘‘শুক্রবার জেএনইউ-তে ছাত্র সংসদের ভোট। সিপিএম-এর ছাত্র সংগঠন এসএফআই এবং সিপিআই (এমএল) লিবারেশনের ছাত্র সংগঠন আইসা এ বার জোট বেঁধেছে। এত দিন যা ভাবাই যেত না। এটা সম্ভব হয়েছে দেশে এবং আরও নির্দিষ্ট ভাবে বললে, জেএনইউ-তে আরএসএস-এর মতো ফ্যাসিস্তদের আটকানোর তাগিদ থেকেই।’’

আবার সিঙ্গুরের জমি বিতর্কের প্রসঙ্গ তুলে শিল্পের পক্ষেও সওয়াল করেন কানহাইয়া। বলেন, কৃষি অলাভজনক হয়ে পড়ায় কৃষক ঋণের জালে জড়িয়ে যাচ্ছেন। তাই কৃষকের ছেলে আর কৃষক হতে চান না।

সিঙ্গুরে জমি নেওয়ার পন্থায় ভুল হয়েছিল। কৃষক শিল্পের জন্য জমি দিলে তাঁকে সেই শিল্পের অংশীদারিত্ব দেওয়া উচিত। তবে সিঙ্গুর আন্দোলনের কৃতিত্ব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দিতে নারাজ কানহাইয়া। তাঁর দাবি, ‘‘উনি (মমতা)আদৌ কৃষকের পক্ষে কিনা সে প্রমাণ পাওয়া যায়নি এখনও!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

kanhaiya CPI
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE