Advertisement
০৩ জুন ২০২৪
SSC recruitment scam

‘আমার লড়াই আরও কঠিন’, বলছেন দৃষ্টিহীন বৃহস্পতি

পুরুলিয়ার মানভূম দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষায়তনে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন বৃহস্পতি। তার পরে টালিগঞ্জে ‘লাইট হাউস ফর দ্য ব্লাইন্ড’ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা।

বাড়িতে সিন্থেসাইজ়ার বাজাচ্ছেন বৃহস্পতি মাহাতো। নিজস্ব চিত্র

বাড়িতে সিন্থেসাইজ়ার বাজাচ্ছেন বৃহস্পতি মাহাতো। নিজস্ব চিত্র

সমীর দত্ত
পুঞ্চা শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০২২ ০৭:৪৬
Share: Save:

চাকরির ন্যায্য দাবি থেকে তিনি সরবেন না। পুরুলিয়ায় ফিরলেও তাঁর মন পড়ে ধর্মতলায় গ্রুপ-ডি চাকরিপ্রার্থীদের ধর্না মঞ্চেই।

জন্ম থেকে দৃষ্টিহীন বৃহস্পতি মাহাতো। পুরুলিয়ার পুঞ্চা থানার ন’পাড়া থেকে রবিবার ওই ধর্না মঞ্চে গিয়েছিলেন তিনি। বাড়ি ফেরেন সোমবার। কিন্তু মুখে শুধু ধর্না মঞ্চের আন্দোলনকারীদের কথা। গলায় জেদ— ‘‘চাকরির দাবি থেকে নড়ছি না। তেমন হলে আবার গিয়ে ধর্নামঞ্চে বসব।’’

পুরুলিয়ার মানভূম দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষায়তনে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন বৃহস্পতি। তার পরে টালিগঞ্জে ‘লাইট হাউস ফর দ্য ব্লাইন্ড’ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা। তবে আশুতোষ কলেজে স্নাতকে ভর্তি হলেও দুর্ঘটনায় পায়ে চোট পাওয়ায় সেখানেই দাঁড়ি পড়ে যায়। ছেলেকে পাশে নিয়ে মা অতিকা মাহাতো বলছিলেন, ‘‘দৃষ্টিশক্তি না থাকলে কী হবে, ওর জেদ ও সাহস দুই রয়েছে।’’ বছর পঁচিশের বৃহস্পতিও বলেন, ‘‘লড়ছি তো ছোট থেকেই। অন্যেরা কত সহজে স্কুল-কলেজে পড়াশোনা করেছে। সেখানে আমি ব্রেলে পড়েছি। ভরসা শুধু একটা লাঠি। আমাদের লড়াইটা অনেক কঠিন। তাই আমার মতো বিশেষ ভাবে সক্ষমদের কাছে চাকরি শুধু একটা অবলম্বন নয়, দীর্ঘ লড়াইয়ের স্বীকৃতিও।’’

হাই কোর্টের জন্যই কয়েক মাস আগে স্কুলে শিক্ষকতার চাকরি পেয়ে স্বীকৃতি লাভ করেছেন বীরভূমের নলহাটির ক্যানসার আক্রান্ত সোমা দাস। তিনিও রোগ-জ্বালা নিয়ে কলকাতার আন্দোলনে এসে শামিল হয়েছিলেন।

বৃহস্পতি জানালেন, ২০১৭ সালে ‘পার্সোনেল অ্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ রিফর্মস’ (পার) দফতরের গ্রুপ-ডি কর্মী নিয়োগের পরীক্ষায় বসেন তিনি। লিখিত পরীক্ষা ও ইন্টারভিউয়ে পাশও করেন। কিন্তু রোল নম্বর, পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর ছাড়াই অস্বচ্ছ মেধা তালিকা প্রকাশ করা হয় বলে অভিযোগ। ওয়েটিং লিস্টে নাম থাকলেও নিয়োগপত্র পাননি বৃহস্পতি। অথচ যত জন চাকরিপ্রার্থী নিয়োগ হওয়ার কথা ছিল, তত নিয়োগ হয়নি। অতিকার আক্ষেপ, ‘‘আমাদের কৃষক পরিবারে পাঁচ ছেলেমেয়ের মধ্যে বৃহস্পতিই সব থেকে ছোট। এত কষ্ট করে পড়াশোনা করেও চাকরি পাচ্ছে না দেখে বুক ফেটে যাচ্ছে।’’

বৃহস্পতি অবশ্য বসে নেই। পড়শি স্কুল শিক্ষক কুণাল সেন বলেন, ‘‘গানবাজনায় ও পারদর্শী। নিজের গানের দলও আছে। মাঝে মধ্যে এদিকে ওদিকে ওরা গান-বাজনা করতে যায়।’’ বৃহস্পতির কথায়, ‘‘গান-বাজনা নিয়ে মেতে থাকলেও আমাদের মতো কত যোগ্য ছেলেমেয়ে ন্যায্য দাবিতে কলকাতার পথে পড়ে রয়েছে, দেখে খারাপ লাগে। তাই গিয়েছিলাম। ‘দিদিকে বলোতে’ও ফোন করে সব জানিয়েছি। মুখ্যমন্ত্রীর উপরে ভরসা রয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

SSC recruitment scam TET
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE