বিদ্যুৎরেখা: বুধবার রাতে শহরের আকাশে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
রোজকার অভ্যাসমতোই বুধবার সাতসকালে হাঁটতে বেরিয়েছিলেন কাঁকুড়গাছির রতন দাশগুপ্ত। কিন্তু কয়েক পা হাঁটার পরেই বুঝলেন, ঘামে ভিজে গিয়েছে জামাকাপড়। রোদ সে-ভাবে ওঠেনি ঠিকই। কিন্তু শরীরটা কেমন যেন হাঁসফাঁস করছে!
রতনবাবু একা নাকাল হননি। এ দিন ভ্যাপসা গরমে নাজেহাল হয়েছে কলকাতা-সহ সারা দক্ষিণবঙ্গই। পথেঘাটে ঘেমেনেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন অনেকেই। দুপুর বা বিকেলের দিকে কোথাও কোথাও ছিটেফোঁটা বৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু সেই বৃষ্টি গায়ে পড়ার আগেই উবে গিয়েছে। তাতে অস্বস্তি বেড়েছে বই কমেনি। রাতে ফের বৃষ্টি নামে কলকাতায়। আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলে তৈরি হওয়া একটি বজ্রমেঘ কলকাতার দিকে ভেসে আসে। তাই দমকা হাওয়া বয়েছে। মহানগর এবং সংলগ্ন এলাকায় বৃষ্টিও হয়েছে কমবেশি। তাতে কিছুটা স্বস্তি মিলেছে। কিন্তু এই স্বস্তি সাময়িক।
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের হিসেব বলছে, এ দিন বেলা আড়াইটেয় কলকাতার অস্বস্তিসূচক ছিল ৬৭.৫ ডিগ্রি। অর্থাৎ কলকাতা এবং লাগোয়া এলাকার অস্বস্তি ছিল চরমে! এই পরিস্থিতি এখনই কাটবে বলে মনে করছেন না আবহবিদেরা।
এই দুরবস্থা কেন?
আরও পড়ুন: সুন্দরবনের মানচিত্র দিতে হবে দু’মাসেই
আবহবিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, উত্তরপ্রদেশ ও ছত্তীসগঢ়ের উপরে একটি ঘূর্ণাবর্ত রয়েছে। তার ফলে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ খুব বেশি। সেই জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে আকাশ মেঘলা করে রেখেছে। তাই দিনের তাপমাত্রা সে-ভাবে বাড়ছে না। এ দিন কলকাতায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, স্বাভাবিকের থেকে দু’ডিগ্রি বেশি। ভরা গ্রীষ্মে এটাকে তেমন বেশি বলেন না আবহবিদেরা। কিন্তু আকাশ সারা দিনই মেঘলা থাকায় দাপট দেখাচ্ছে ভ্যাপসা গরম। মাটি থেকে বিকিরিত তাপ আকাশে ফিরে যেতে না-পারায় রাতের তাপমাত্রাও কমছে না। এ দিন কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৯.৬ ডিগ্রি, এই সময়ের স্বাভাবিকের থেকে তিন ডিগ্রি বেশি। ফলে অস্বস্তি কাটছে না রাতেও।
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গণেশকুমার দাস জানান, আজ, বৃহস্পতিবারেও কলকাতা-সহ ভ্যাপসা, অস্বস্তিকর আবহাওয়া চলবে দক্ষিণবঙ্গে। অতএব দুর্ভোগ।
তবে এ দিন ভ্যাপসা গরমের পরে রাজ্যের অন্যান্য অংশের তুলনায় একটু বেশি স্বস্তি পেয়েছে বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বীরভূম। রেডার-চিত্র বিশ্লেষণ করে আবহবিদেরা জানান, জলীয় বাষ্প বেশি থাকায় বিকেলে ঝাড়খণ্ডের উপরে বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি হয়েছিল। তা থেকে ওই জেলাগুলিতে ঝড়বৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু সেই মেঘ মহানগরের দিকে খুব বেশি আসেনি। আবহবিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, গুমোট গরমের মধ্যে আজও দক্ষিণবঙ্গের কোথাও কোথাও ঝ়ড়বৃষ্টি হতে পারে।
পশ্চিমের মেঘ ফের কলকাতায় এসে স্থায়ী স্বস্তির বার্তা দেয় কি না, সেটাই এখন দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy