Advertisement
০৩ মে ২০২৪
Ambulance Services

রাতে ‘মেলে না’ অ্যাম্বুল্যান্স, গাড়ি নিয়ে ভরসা সফিকুল

পেশায় ডেকরেটার ব্যবসায়ী সফিকুলের বাড়ি উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ ব্লকের ভিটিয়ারে। কখনও নিজে, কখনও চালক দিয়ে ১৬ কিলোমিটার দূরে রায়গঞ্জ মেডিক্যালে বা গন্তব্যে পৌঁছে দেন রোগীদের।

Ambulance

গাড়ি নিয়ে সফিকুল হক। নিজস্ব চিত্র।

গৌর আচার্য 
রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ১১ মে ২০২৩ ০৭:৩৩
Share: Save:

সময়ে মেলেনি অ্যাম্বুল্যান্স। হাসপাতালে নিতে দেরি হওয়ায়, পথেই মারা যান বাবা। গাড়ির অভাবে আর কাউকে যাতে বাবার মতো ‘চলে যেতে’ না হয় তাই নিজের ছোট গাড়িটাকে অনেকটা অ্যাম্বুল্যান্সের মতো ব্যবহার করছেন সফিকুল হক। প্রতিদিন রাত ১০টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত সে গাড়ি দিয়ে অসুস্থ রোগীদের গন্তব্যে পৌঁছে দেন। পয়সা নেন না বছর বত্রিশের এই যুবক।

পেশায় ডেকরেটার ব্যবসায়ী সফিকুলের বাড়ি উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ ব্লকের ভিটিয়ারে। কখনও নিজে, কখনও চালক দিয়ে ১৬ কিলোমিটার দূরে রায়গঞ্জ মেডিক্যালে বা গন্তব্যে পৌঁছে দেন রোগীদের। গাড়ির সামনে পিছনে ফ্লেক্স ও কাগজে লেখা রয়েছে ফোন নম্বর, যোগাযোগের ঠিকানা।

ন’বছর আগে, সফিকুলের বাবা তাজিরুদ্দিন হক বাড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়েন। রায়গঞ্জ শহর থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে ভিটিয়ার গ্রামে রাতে অ্যাম্বুল্যান্স আসতে চায় না। সফিকুল বলেন, ‘‘রাতে অ্যাম্বুল্যান্স আসতে দেরি করায়, বাবাকে মোটরবাইকে চাপিয়ে রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাই। কিন্তু দেরি হয়ে যাওয়ায়, রাস্তাতেই হৃদ্‌রোগে বাবা মারা গিয়েছেন বলে ডাক্তারেরা জানান। তখনই শপথ নিই, এলাকার কারও যাতে রাতে অ্যাম্বুল্যান্সের অভাবে মরতে না হয়, সে জন্য কিছু একটা করতেই হবে।’’

সফিকুল জানান, টাকার অভাবে অ্যাম্বুল্যান্স কিনতে না পারলেও, ২০১৮ সালে এক লক্ষ ৯৬ হাজার টাকা দিয়ে তিনি পুরনো একটা ছোট গাড়ি কেনেন। বছর দু’য়েক ধরে গাড়িটিকে কার্যত হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়ার যান হিসাবে ব্যবহার করছেন। গাড়িতে অক্সিজেন সিলিন্ডার নেই। তাই আশঙ্কাজনক রোগী বা প্রসূতিদের নিতে পারেন না, আক্ষেপ সফিকুলের। তবে এ সব সমস্যার কথা অবশ্য জানা নেই স্বাস্থ্য দফতর বা প্রশাসনের।উত্তর দিনাজপুরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক পূরণকুমার শর্মা বলেন, ‘‘ভিটিয়ার এলাকায় অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা নিয়ে অভিযোগ মিললে, ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

এলাকার মাছ ব্যবসায়ী হরিপদ দাস, প্রতিবেশী জমিরুদ্দিন শেখেরা জানান, ইতিমধ্যেই তাঁদের আত্মীয়েরা ছাড়াও, আশপাশের গ্রামের দুশোরও বেশি রোগীকে ঠিক সময়ে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছেন সফিকুল। তাঁরা সবাই বেঁচে গিয়েছেন। স্ত্রী, এক ছেলে, এক মেয়ে-সহ একান্নবর্তী পরিবার সফিকুলের। সফিকুলের ভাইঝি আসমা খাতুন বলেন, ‘‘নিজের গাড়িতে চাপিয়ে বিনে পয়সায় রোগীদের হাসপাতালে পৌঁছে দিয়ে বাঁচানোতেই কাকার আনন্দ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ambulance Services raiganj
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE